মধ্যপ্রদেশ নির্বাচন ভোটাররা কী ভাবে বিজেপি ও কংগ্রেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন
ভোট প্রদান করার আগে জনতার একবার ভাবা উচিত
- Total Shares
আগামী ২৮ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের যুদ্ধে শাসকদল বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেস দু’পক্ষই উন্নয়নের কথা বলে ভোটের হাওয়া ঘুরিয়ে নিতে চাইছে এবং দু’পক্ষই জনদরদী কথা বলছে। তবে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় যাঁরা বলি তাঁদের ত্রাণ নিয়ে, নর্মদা উচ্ছেদ এবং সমাজের অন্য প্রান্তিক মানুজনকে নিয়ে এই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই নীরব।
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন তাঁদের জন্য বিজেপি বা কংগ্রেসের কেইউ কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে)
বিজেপি তাদের রাজনৈতিক ইস্তাহার নিয়ে প্রচার করছে যেখানে বলা হয়েছে কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে, নগরে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষজনকে বিনামূল্যে আবাস প্রদান করা হবে, ভুট্টা গম ও ধান উৎপাদনকারীদের বোনাস দেওয়া হবে, পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হবে প্রভৃতি। বিরোধী কংগ্রেসের ইস্তাহারে রয়েছে কৃষকদের ঋণ মকুব করে দেওয়া এবং ছাত্রদের জন্য নানাবিধ ছাড়ের বন্দোবস্ত করা, বেকার যুবকদের জন্য পরিকল্পনা এবং বিধান পরিষদ (রাজ্য বিধানসভায় দ্বিতীয় কক্ষ) গড়ে তোলা – এসব নিয়েই এখন তারা প্রচার করছে।
তবে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ফল আজও যাঁরা ভোগ করছেন তাঁদের জন্য কী পরিকল্পনা রয়েছে সে বিষয়ে এই দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই নীরব। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া বিশ্বের ভয়ঙ্করতম শিল্প-দুর্ঘটনার ফল তখন থেকে নীরবে ভুগে চলেছেন শহরের বহু মানুষ। বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই করে চলা কর্মী আব্দুল জব্বার জোরের সঙ্গে বললেন, আজও মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের তিনটি বিধানসভা এলাকায় শিশু জন্মায় বিকলাঙ্গ হয়ে। এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভোপাল গ্যাস পীড়িত মহিলা উদ্যোগ সংগঠনের আহ্বায়ক জব্বার জানান, ১৯৮৪-৮৫ সালে যাঁদের জন্ম হয়েছিল তাঁদের মধ্যে কয়েকজন স্বাস্থ্যহীন হিসাবেই বড় হয়ে উঠেছেন।
ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়ার কারখানায় বিপুল পরিমাণে স্তূপীকৃত অবস্থায় টক্সিক বর্জ্য জমা হয়ে আছে। শোনা যায় ভৌমজল নাকি ভীষণ ভাবে দূষিত হয়ে রয়েছে, যদিও সেই দুর্ঘটনার ফল যাঁরা আজও ভুগে চলেছেন তাঁদের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা যাঁরা নির্বাচনে লড়াই করতে চলেছেন তাঁদের কেউই কোনও কথা বলছেন না। বেহাল স্বাস্থ্য পরিষবা, নগন্য ক্ষতিপূরণ ও সরকারি ঔদাসীন্যে ৫,৭০,০০০ জনের কাছাকাছি মানুষ আজও ভুগে চলেছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের (ইউসিআইএল) স্টোরেজ ট্যাঙ্কে তাকে ৪০ টন বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট লিক করে ১৯৮৪ সালে ২ ও ৩ ডিসেম্বরের মাঝরাতে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে জব্বারের মতো প্রচারকারীরা মনে করেন এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং আরও সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষ হয় অসুস্থ হয়েছিলেন না হয় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেই ভয়াবহ দুর্টনার ফল আজ ভোগ করে চলেছেন বহু মানুষ, জব্বার নিজেও সেই ভুক্তভোগীদের একজন।
৩৪ বছর পরেও বিতারের অপেক্ষায় রয়েছেন ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার বলিরা (সূত্র: পিটিআই)
স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক এবং ভোপাল উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আরিফ আকিল ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দিগ্বিজয় সিং সরকারের মন্ত্রিসভায় গ্যাস পুনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন, তিনি নিজেই একটি অভাবনীয় কাজ করেছিলেন, এই দূষিত জলপানরত অবস্থায় তিনি ছবি তুলেছিলেন। সেই ছবি মার্কিন আদালতে পেশ করে আইনজীবীরা বলেছিলেন, জল দূষিত বলে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তা ছিল অতিরঞ্জিত। ১৯৮৪ সালের ২-৩ ডিসেম্বর রাতে এই গ্যাস দুর্ঘটনার জন্য পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছিল সেই অভিযোগ করে সে জন্য ইউনিয়ন কার্বাইড ও ডও কেমিক্যালসের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
সর্দার সরোবর প্রকল্পে জন্য নর্মদার তীর থেকে উচ্ছেদ হওয়া হাজার হাজার মানুষের অবস্থাও কোনও অর্থেই পৃথক নয়। কেবলমাত্র আম আদমি পার্টি (আপ) ছাড়া অন্য কোনও দলই নর্মদার ফলে বাস্তুহারা মানুষজনের কথা বলছেন না। তাদের নেতৃত্বের ধরণ ও নগরকেন্দ্রিকতার জন্য মধ্যপ্রদেশে সামান্য হলেও উপস্থিতি রয়েছে আপের। বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, মূলত গ্রাম কেন্দ্রিক ও আদিবাসীপ্রধান মধ্যপ্রদেশে, যেখানে আবার জাতপাতের হিসাব অত্যন্ত বেশি, সেখানে আপের কিছ করে ওঠা খুবই মুশকিল।
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক ও মানবাধিকার কর্মী মেধা পাটকর ২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবস কারাগারে কাটিয়েছেন। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান চালিশক্তি ৬৩ বছরের মেধা পাটকরই প্রথম সর্দার সরোবর প্রকল্পের জন্য নর্মদার তীরবর্তী স্থান থেকে উচ্ছেদ হওয়া চিকিলদা ও ধর জেলার মানুষজনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নানাবিধ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় যার মধ্যে একটি ছিল রাজ্যের রাজস্ব দফতরের আধিকারিককে অপহরণ করা এবং আরেকটি ঠিল শান্তিভঙ্গের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫১ ধারায় মামলা।
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি হলেন মেধা পাটকর (সূত্র: পিটিআই)
নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের কর্মীরা বলেন, ২১৪ কিলোমিটার জুড়ে ৪০,০০০ পরিবারের নতুন করে বসতি স্থাপন ও পুনর্বাসন এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছে। এমনকি জল, বিদ্যুৎ ও পয়ঃপ্রণালীর মতো প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও এই উচ্ছেদ হওয়া মানুষজ ন বঞ্চিত। অনেকেই যে নদীকে পবিত্র বলে মনে করেন সেই নর্মদা নদী এই রাজ্যের ১,৩০০ কিলোমিটার জুড়ে প্রবাহিত।
২০০৮ ও ২০১৩ সালের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেস কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারেই ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ও নর্মদা তীরের উদ্বাস্তুদের জন্য কোনও কিছু বলা ছিল না।
কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এখন চাইছে ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কোনও প্রার্থীই পছন্দ নয় (নোটা) বোতামটি টিপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের খারিজ করে দেন।
তবে জব্বার মনে করেন যে বর্তমানে যে নোটা বোতামটি রয়েছে সেটি তাঁদের সমস্যা মেটাতে পারবে না। তিনি বলেন, “এই ধরনের চাপাচাপিতে গ্রামের দিকে কাজ হতে পারে তবে শহরে হবে না কারণ সেখানে নানা ধরনের মতাদর্শ ও বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত মানুষজন বসবাস করেন। যদি নোটা প্রয়োগ করা হয় তা হলে যে গোষ্ঠীকে আমরা আদৌ পছন্দ করি না হয়তো তারাই জয়ী হয়ে যাবে।”
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে