নরেন্দ্র মোদী নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন না বলেই রাহুল গান্ধীর উত্থান?
দেশের জন্য কিছুই করেননি নাকি সুফলের কথা তুলে ধরতে তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন?
- Total Shares
নরেন্দ্র মোদী কেন নরেন্দ্র মোদী হলেন এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চিত ব্যাখ্যাটি হল, নরেন্দ্র মোদী হলেন একজন প্রথমশ্রেণীর বিপণনকারী যাকে চলিত বাংলায় বলে ‘বেচুবাবু’। তবে এ নিয়ে আমার একটি অন্য ব্যাখ্যা আছে।
২০০২ সালের দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নরেন্দ্র মোদীকে যে ভাবে কোণঠাসা করা হয়েছে তাতে নরেন্দ্র মোদীর আখেরে কোনও ক্ষতি তো হয়ইনি বরং অবশিষ্ট ভারতে এই ব্যক্তি সম্বন্ধে কৌতূহল বেড়েছে যা জনপ্রিয়তায় পরিবর্তিত হয়েছে।
এই জনপ্রিয়তাটাকেই সঠিক ভাবে অনুভব করে সঙ্ঘ পরিবার নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেছিল ২০১৪ সালে। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। কিন্তু এই ব্যাখ্যাকে পাশে সরিয়ে রেখে যদি ‘বেচুবাবু’ প্রসঙ্গ নিয়ে একটু আলোচনা করা যায়, তা হলে বোঝা যাবে মোদীর নিজেকে বিপণনের সেই যে দক্ষতা সেটায় ঘাটতি পড়েছে নাকি প্রশাসক হিসাবে তার ব্যর্থতা মানুষের কাছে প্রকট হয়েছে, নাকি ২০১৪ সালের আগে দীর্ঘ কয়েক দশকে না-পাওয়া থেকে যে চাহিদার ঢেউ উঠেছিল সেই চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি এখন চিন্তিত? (ছবি: পিটিআই)
যদি বেচুবাবু তত্ত্ব মেনে নেওয়া যায় তা হলে এই কোন তত্ত্বই বাজারে খাটে না। কারণ বেচুবাবুদের যোগ্যতা হচ্ছে কানা বেগুনও বেচে দেওয়া।
তা হলে নরেন্দ্র মোদী কি এখন নিজেকে বেচতে পারছেন না? এই প্রশ্ন উঠছে এই কারণে যে আপাতত যে ভাবে নিজের পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে ময়দানে ভেসে উঠেছেন রাহুল গান্ধী, তাতে ধারনা তৈরি হয়েছে, পিছিয়ে পড়ছেন নরেন্দ্র মোদী।
যাবতীয় রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক পাশে সরিয়ে রেখে যদি সত্যিই নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করা যায়, তা হলে ২০১৪ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে এমন কিছু হয়নি যা ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঘটেনি।
নরেন্দ্র মোদীকে পিছনে ফেলে প্রচারে এগিয়ে রাহুল? (ছবি: পিটিআই)
দার্শনিকরা বলেন যে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানের ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হয়। এটাই যদি ধ্রুব সত্য হয়ে থাকে তা হলে ২০১৯ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে উন্নয়ন কোনও ইস্যু হওয়ার কথা নয়, এই প্রায় সাতটা দশকে ভারতে উন্নয়ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
কৃষিঋণ মকুব হওয়ার মতো একটি আত্মঘাতী বিষয় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার কথা ছিল না, কৃষিপ্রধান ভারতে কৃষিকের উন্নয়ন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদী কি এমন কিছুই করেননি যা ভবিষ্যতে ভারতকে এটা নতুন রাস্তা দেখাতে পারে? প্রধানমন্ত্রী হয়েই প্রথমে তিনি যে স্বচ্ছ ভারতের কল্পনা করেছিলেন, সেটাই হতে পারত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু সেটাকেও বেচতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী। এবং তারপরে একটার পর একটা প্রকল্প – যে প্রকল্পগুলো ভারতবাসীকে আত্মনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বা পারত বা পেরেছে সেগুলোকেও বেচতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী।
শুধু বেচতেই পারলেন না নয়, প্রমাণহীন, উদ্দেশ্যহীন রাফাল বিতর্ক – তার কোনও সঠিক জবাব দিয়ে দেশবাসীর মনে আস্থা তৈরি করার মতো বেচার কাজটিও করে উঠতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী।
রাফাল নিয়ে আস্থা তৈরির মতো জবাব দিতে পারেননি মোদী (ছবি: পিটিআই)
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, যদি সত্যিই নরেন্দ্র মোদীর বিপণনের দক্ষতা কমে গিয়ে থাকে তা হলে প্রায় ১০০ বছরের সঙ্ঘ পরিবার কি শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর বেচুবাবু যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই নিশ্চিন্ত ছিলেন? তাঁদের কি আর কোনও প্ল্যান বি ছিল না? এই মুহূর্তে এই বিষয়টিতে দেশবাসী একেবারেই অন্ধকারে।
আনাজের দাম আগেও বেড়েছে এখনও বেড়েছে, জ্বালানির দাম আগেও বেড়েছে, এখনও বেড়েছে, গণপিটুনি আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে, কিন্তু বেচুবাবু নরেন্দ্র মোদীকে টপকে গিয়ে আজ এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেন ২০১৪ সাল থেকে অন্ধকারে পর্যবসিত হয়েছে ভারত।