বালাকোটের পরে: অস্বীকার করাটা পাকিস্তানের ঢাল ও অস্ত্র দুই-ই

ভারতীয় বায়ুসেনার আক্রমণে জঙ্গিশিবির ধ্বংস হওয়ায় দেশের লোকের কাছে মুখ পুড়েছে পাকিস্তানের

 |  6-minute read |   01-03-2019
  • Total Shares

দু'বছর আগে যখন বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে আক্রমণ করে জঙ্গিশিবির ধ্বংস করেছিল তখনও দৃঢ় ভাবে অস্বীকার করাই ছিল সীমান্তের ওপার থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরপরই পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছিল। আরও একটা ব্যাপার ঘটেছিল, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভারতীয় প্রভাবশালী (রাজনীতিকরাও এর মধ্যে রয়েছেন) পাকিস্তানের কথাতেই বিশ্বাস করেছিলেন।

পরের দিন ভারতীয় সেনা সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন, সেখানে আক্রমণটির বর্ণনা দেওয়া হয় – ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।

সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তান তখন সোশ্যাল মিডিয়া ও তাদের টেলিভিশন স্টুডিয়োগুলিতে ক্রমাগত ‘সত্যের বোমা’ নিক্ষেপ করেই চলেছে। একটা সময় এল যখন তাদের গল্পটা এমন বাঁক নিল যে সেটা আর তাদের নিয়ন্ত্রণে রইল না, এবার তারা তাদের টিভি চ্যানেলগুলোয় হুমকি দিতে শুরু করে দিল যে ভারত যদি আরও একবার এই ধরণের তথাকথিত রুচিহীন রোমাঞ্চের (misadventure) চেষ্টা করে তা হলে তারা ভারতের উপরে পরমাণু হামলা করবে।

আপনি যদি ইউটিউবে গিয়ে টেলিভিশনে সেই সব বিতর্ক অনুষ্ঠানগুলি দেখেন তা হলে হাসতে হাসতে আপনার পেটে খিল ধরে যাবে।

surgical_1_030119080728.jpg পাকিস্তানের বক্তব্য অনুযায়ী, উরির পরে যেন প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়ইনি। তার একটা প্রতিচ্ছবি কি দেখতে পাচ্ছেন? (উৎস: ইন্ডিয়া টুডে)

এক বছর পরে শেষ পর্যন্ত সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ভিডিয়ো প্রমাণ প্রকাশ করল ভারত সরকার – এবং একই সঙ্গে মেজর রোহিত সুরীকে কীর্তি চক্র দিয়ে ভূষিত করা হল। নিয়ন্ত্রণ রেখার লঞ্চপ্যাড থেকে মেজর রোহিত সুরীই তাঁদের নেতৃত্ব দিয়ে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছিলেন। রোহিত সুরী যখন সাহসিকতার পুরস্কার গ্রহণ করলেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই পাকিস্তানের সেই কৌতুকপূর্ণ অস্বীকারপর্বের অবসান ঘটল।

এটা ২০১৭ সালের ঘটনা।

এবার ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির কথায় আসা যাক – আমরা সেই ঘটনারই পুনরাভিনয় দেখলাম – পাকিস্তান আবার সেটা অন্য দৃষ্টিতে দেখছে আর বলছে, “এ সব ঘটনা ঘটেইনি।”

ঘটনা হল, দ্বিতীয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিটি ছিল আগের চেয়েও অনেক বেশি হাস্যকর।

আগেরবার পাকিস্তান কয়েকটি গাছের ও জড়ো করা মাটির নৈর্ব্যক্তিক ছবি দিয়ে এই টুইটটি করেছিল:

এটা আসলে আগের দুটি টুইটের প্রতিচ্ছবি যেটি করেছিলেন মেজর জেনারেল আসিফ গফুর (তাদের সেনা মুখপাত্র), তিনিই ঘটনার পর প্রথম টুইটটি করেন। দেখুন সেই টুইটটি:

মজার কথা হল, এই টুইট দু’টি ব্যাপার নিশ্চিত করেছে – ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমার অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছে এবং বোমা নিক্ষেপ করেছে, (যাকে তারা ভারী কিছু (পে-লোড) বলছে)।

টুইট করে কোনওরকম ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কথা অস্বীকার করা হয়েছিল, যেটা ছিল সব দাবি কঠোর ভাবে খণ্ডন করে সংবাদমাধ্যমের বার্তা দেওয়া।

যে ছবিগুলো ওই টুইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলি অত্যন্ত কাছ থেকে মোবাইলে ফোনে থাকা ক্যামেরায় তোলা আর তারা যে বলেছে পাকিস্তানের বায়ুসেনা সতর্ক রয়েছে -- এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হল -- যখন ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে তখন তাদের উপযুক্ত জবাবও দিয়েছে তারা – পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে শান্ত করার পক্ষে এটা যথেষ্ট ছিল।

দিন যত গড়াতে থাকল, পাকিস্তানের জবাব ততই কৌতুকের মতো শোনাতে লাগল, কারণ এবার তারা বলতে শুরু করে দিল যে তাদের এলাকার ঢোকার উপযুক্ত জবাব তারা দেবে এবং তাড়াহুড়ো করে আরও একটা ব্যাপার যোগ করে দিল যে, এখনই পাল্টা দেওয়া হবে না, সেটা দেওয়া হবে সময় নিয়ে, সময়মতো এবং তাদের পছন্দমতো জায়গায়।

আমি যখন এই প্রতিবেদন লিখছি, তখন বহু পাকিস্তানি সাংবাদিক একেবারে ওই টম্যাটোর সাংবাদিকের মতো রাগে লাল মুখ করে তাকিয়ে রয়েছেন – তাঁরা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলছেন যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কী ভাবে তাঁদের দাঁতের কষে রেখেছেন। তারা যা রূপ দেখাচ্ছে তা দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে আমরা পাকিস্তানের আচরণে একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, তার কী, সে কথা আমাদের জানা দরকার।

  • যখন তার নাক দিয়ে যখন রক্ত ঝরছে তখন অস্বীকার করাটাই হল প্রকৃতপক্ষে দেশের নাগরিকদের সামনে পাকিস্তানের মুখরক্ষার শেষ অস্ত্র।

যদি পাকিস্তানের সেনা কোনও রকম জিনিস ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কথা বলত (এমনকি কাচের আয়নাও), তা হলেই প্রমাণ হয়ে যেত যে ভারতীয় সেনা তাদের সীমান্তের মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং তথাকথিত আধুনিক বায়ুসেনা ভারতের বিমানচালকদের কোনও কিছুই করতে পারেনি (যেটা আসলে সত্যি)।

তাই কোনও কিছু স্বীকার করে নেওয়ার অর্থ হত তারা যে তাদের নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে ব্যর্থ, সে কথা স্বীকার করে নেওয়া।

twitter-small_1_030119080917.jpgনিজেদের ব্যর্থতায় হতাশ হয়েই কোনও সম্পত্তি হানি ও জীবনহানির কথা স্বীকার করছে না পাকিস্তান। (সূত্র: টুইটার)

একই সঙ্গে কোনও জীবনহানির কথাও পাকিস্তান স্বীকার করতে পারছে না কারণ তারা জানে যে আক্রমণটি হয়েছিল সাধারণ মানুষের বসতি থেকে অনেক দূরে। জঙ্গলের মধ্যে বেশি সংখ্যায় নিহতের কথা বললে নিশ্চিত ভাবেই তার অর্থ দাঁড়াত যে পকিস্তান স্বীকার করে নিচ্ছে সেখানে জঙ্গি ঘাঁটি চালু ছিল এবং তার ফলে ভারতে এতদিন যে কথা বলে আসছে যে ওখানে আসলে জৈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই দাবিকে মান্যতা দেওয়া।

সুতরাং, তারা যে ক্রমাগত অস্বীকার করে যাচ্ছে তার কারণ হল তাদের সশস্ত্র বাহিনীর অদক্ষতা ধামাচাপা দিয়ে রাখা – যখন মাত্র ১২টি ভারতীয় বিমান উড়ে এসে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করল তখন তাদের পক্ষে খোঁড়া হাঁসের মতো অসহায় ভাবে দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

এখন অবশ্য আমাদের প্রত্যাঘাত করার হুমকি দেওয়া শুরু করেছে।

যে ভাবে তারা বলছে, সেই ভাবে কি পাকিস্তান আক্রমণ করতে সক্ষম?

এই প্রশ্নের উত্তরে একটাই শব্দ অনুরণিত হচ্ছে, ‘না!’

অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমার মত হল, এটা শুধুমাত্র ঘটনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে তাদের জনতাকে শান্ত করার একটা কৌশলমাত্র।

ভারতের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট অর্থ পাকিস্তানের কাছে নেই – পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে তারা সব জায়গা থেকে অর্থ ভিক্ষা চাইছে। যুদ্ধ মানেই বিপুল টাকার ধাক্কা, আর যে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা চূড়ান্ত ভঙ্গুর, তারা যদি যুদ্ধের কথা ভাবে তা হলে তারা গভীর সঙ্কটে পড়ে যাবে।

একই সঙ্গে পাকিস্তানও যদি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে তা হলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তাদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদি সত্যিই পাকিস্তানি বিমান ভারতীয় বিমানগুলিকে ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দিয়ে থাকে তাদের এলাকা থেকে, অন্তত তারা যা দাবি করছে, তা হলে কি পুরোমাত্রায় যুদ্ধের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে?

যদি তাদের দেশের জঙ্গিশিবিরে হামলা করার প্রতিবাদে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যুদ্ধে নামে তা হলে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারত যে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর’ বলে দাবি করে আসছে, সেই দাবিকেই মান্যতা দিয়ে দেওয়া হবে।

paki_3_030119080955.jpgপাকিস্তানকে সব কিছু অস্বীকার করতেই হবে – কারণ তারা নিজেরাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। (সূত্র: রয়টার্স)

  • দেখুন, প্রহেলিকা তৈরি করে নিজের উঠোনে দীর্ঘদিন সাপ পুষেছে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং লালনপালন করেছে পাকিস্তান!

এখন পুরোপুরি সবকিছু অস্বীকার করা ছাড়া ওদের আর কিছুই করার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই সব বিষাক্ত সাপগুলো নিজেদের ডেরায় ফিরে না যাচ্ছে এবং সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস না হয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ পাকিস্তানকে এই পন্থাই নিয়ে চলতে হবে।

কিন্তু ভারতে, এক থেকে দু-বছরের মধ্যে আমরা দ্বিতীয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখতে পাব।

আমরা আবার সেই জোশ ফিরে পাব, বারে বারে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment