আসন্ন নির্বাচনগুলো কেন জিএসটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে
নির্বাচন এগিয়ে আসছে আর রাজ্যগুলো জিএসটি নিয়মাবলি লঙ্ঘন করছে
- Total Shares
অন্য সব অর্থনৈতিক সংস্কারগুলোর তুলনায় পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কেন এতটা অদ্ভুতুড়ে? ১৮ বছরের অপেক্ষার পর ঘোর রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে অপরিণত অবস্থাতেই দিনের আলো দেখেছিল এই কর সংস্কার, তবে গুজরাটে ভোটের থাকায় তা সাময়িক ভাবে প্রত্যাহারও করা হয়েছিল। আদতে, দেশের অর্থনীতিতে যতটা জনপ্রিয় হওয়ার কথা ছিল এই নতুন কর সংস্কারের, বাস্তবে তা তো হয়ইনি, উল্টে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে প্রভাব বিস্তার করেছে জিএসটি।
জিএসটির ঠিকুজিকোষ্ঠী দেখলে একটা কথা বলাই যেতে পারে, দেশের অর্থনৈতিক উদারীকরণের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ভাবে এটাই সবচেয়ে অভিশপ্ত। কোনও ক্রমে প্রথম বছর টিকে যাওয়ার পর এবার জিএসটির উপর আবার নতুন করে রাজনৈতিক অভিশাপ থাবা বসিয়েছে। এর ফলে নতুন করে জিএসটির জনপ্রিয়তা হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি করে বিনষ্ট হবে।
প্রথম বর্ষপূর্তিতে জিএসটি কয়েকটি মৌলিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। ভারত এমনিতেই কর ফাঁকি রোগে ব্যাপক ভাবে আক্রান্ত। সেই রোগের দাওয়াই হিসেবে জিএসটির উদ্ভব যাতে কর জমা দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করা যায়। একাধিক করকে একত্রে করা থেকে শুরু করে করদানের পদ্ধতিকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ে আসা ছাড়াও জিএসটির অন্যতম লক্ষ্য ছিল সমস্ত ব্যবসাকে করদানের ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসা, যাতে করাদাতার বা করদানের পরিমাণ বাড়িয়ে রাজকোষের আয় বাড়ান যায়।
গত এক বছরে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসার পরও জিএসটি রাজকোষের আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের মাথায় এখন নির্বাচন ভাবনা। আর তাই জিএসটির অধীনেও কর জমা না দেওয়ার প্রবণতা এখন সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক ধাঁধা হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে এক কোটির উপর করদাতা আছে। এদের মধ্যে মাত্র ৬৪ লক্ষ জিএসটি রিটার্ন জমা দিচ্ছে, যাদের অধিকাংশই আগের ব্যবস্থা থেকে জিএসটি ব্যবস্থায় মাইগ্রেট করেছে। এর পর, জিএসটি থেকে প্রাপ্য করের পরিমাণ কেন ২০১৮ সালের লক্ষ ছুঁতে পারেনি তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। গত এক বছরে জিএসটিতে প্রায় ৩৫০ বার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং তারপর আচমকাই তড়িঘড়ি করে প্রত্যাহার (গত বছর গুজরাট নির্বাচনের আগে) করে নেওয়া হল। এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে জিএসটির মৃত্যুঘণ্টা যেন বেজেই চলেছে। কেন্দ্রে যতটা প্রভাব পড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজ্যের কোষাগারগুলোতে প্রভাব ফেলেছে জিএসটি। রাজ্যগুলোর অর্থ আমলারা এই নতুন কর ব্যবস্থার সঙ্গে কী ভাবে বুঝবেন তা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না।
২০১৯ সালে জিএসটি থেকে প্রাপ্য করে পরিমাণের এক বিরাট লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। প্রতি মাসের লক্ষ্যমাত্রা ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা যা ২০১৮ সালের প্রতি মাসের ৯০,০০০ কোটি টাকা থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। রাজ্যগুলোতে বাজেট এখন সীমিত। তাই আগামী কয়েক মাস কেন্দ্রের তরফ থেকে অনথিভুক্ত আইজিএসটি রাজ্যগুলোর জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এর ফলে সিজিএসটির পরিমাণ কমবে।
কর ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে ডিএসটি চালু হয়েছিল, এর ফলে নতুন করে আদায় না করতে পারলও অন্তত পুরোনো ব্যবস্থার নিরিখে কর আদায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো উচিৎ ছিল। বাণিজ্যনীতির সরলীকরণ ও অর্থনীতির নতুন ভাবে গঠিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যেতেই পারে, কিন্তু তা কখনোই রাজকোষকে রক্তাক্ত করে নয়।
দ্বিতীয় বছরে জিএসটির প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ যে, জিএসটি দাতারা যেন কোনও মতেই কর ফাঁকি দিতে না পারে, তা হলে দেশে অর্থের সঙ্কট তৈরি হবে। আর এখান থেকেই নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা হতে পারে।
১) রাজ্যে প্রথম দিকে ব্যর্থ হলেও অন্তঃরাজ্য ই-বিল শুরুর প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো হয়েছে, তবে এ থেকে আবার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যেতে পারে। ভোট যত এগিয়ে আসছে, দেখা যাচ্ছে রাজ্যগুলি নিজেদের রাজ্যের মধ্যে জিএসটি নীতির অবজ্ঞা করতে শুরু করেছে।
২) জিএসটিতে বদল এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ফলে উপযুক্ত ভাবে দেখভাল করা যাচ্ছে না। তাই তৃণমূল স্তরে নানা ধরনেরক সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিলের অঙ্ক কমিয়েও দেখানো হচ্ছে।কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার উপরে নজর রাখতে ডিরক্টরেট অফ জিএসটি ইন্টেলিজেন্স বা ডিজিএসটিআই বলে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করেছে সরকার। ডিরেক্টর জেনারেল অফ সেন্ট্রাল এক্সাইজ ইন্টেলিজেন্স বা ডিজিসিইআইগুলোর বদলে প্রতিটি রাজ্যে অন্তত একটি করে ডিজিএসটিআই ইউনিট থাকবে।
জিএসটিএন এখন থেকে কর দাতাদের খুঁটিনা তথ্য যাচাই শুরু করবে যাতে আগে থেকে জালিয়াতি সম্পর্কে সতর্ক থাকা যায় এবং জিএসটি ফাঁকির উপর নজর রাখা যায়।
জিএসটি কিন্তু কর ফাঁকি দেওয়া বিড়ালদের গলায় কোনও ঘণ্টা বাঁধতে পারে না।
৩) কোনও সংস্কার কার্যকর করার পরে তা এত দ্রুত পুনর্বিবেচনার জন্য ফের পাঠানোর নজির সাম্প্রতিক অতীতে অন্তত নেই। এখনই অন্তত দুটি ব্যাপারে সংস্কার দরকার, বৈশিষ্ট্যগত (বহুস্তরীয় কর-কাঠামো, পেট্রোপণ্য ও রিয়েল এস্টেটকে এর আওতায় আনা) এবং প্রয়োগগত (জিএসটিআর, জিএসটিএন সফটওয়্যার বদল) ক্ষেত্রে।
যাই হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত কর ক্ষেত্রে উপযুক্ত সংস্কার না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের ঘরেও টাকা আসবে না আর তা ২০১৯ সাল পর্যন্ত অধরাই রয়ে যাবে।
রাজনীতি হল জিএসটির প্রধান অন্তরায়। এই রাজনীতির জন্য বছরের পর বছর এটি আটকে ছিল। তাড়াহুড়ো করে তা চালু করে দিয়ে তড়িঘড়ি আবার দিন কয়েকের জন্য প্রত্যাহারও করে নেওয়া হল। যেখানে জিএসটি মানে দুর্দান্ত একটা কিছু হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখন এটি ভয়ঙ্কর নজরদারির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
বর্ষপূর্তিতে যখন সরকার জিএসটি সংস্কারের কথা ভাবছে, তখন আবার আসন্ন নির্বাচনেরও ঝুঁকির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে