সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ মেনেই কি নাম পরিবর্তনের খেলা চলছে?
সঙ্গ মনে করে মোগলরা শুধু আক্রমণকারীই, সুতরাং তাদের স্মারক মুছে ফেলা হোক
- Total Shares
গত মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিসভা যোগী আদিত্যনাথের 'নাম-পরিবর্তন' খেলায় সিলমোহর লাগাল। সরকারি ভাবে এলাহাবাদের নামকরণ করা হল প্রয়াগরাজ আর ফৈজাবাদের নাম অযোধ্যা। যোগীর শুরু করা খেলার প্রভাব এবার গুজরাটেও পড়েছে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন যে আহমেদাবাদের নাম কর্ণাবতী করে দেওয়ার। এই দুই মুখ্যমন্ত্রীকে যোগ্য সম্মান দিয়ে বলতে হয় এই খেলা এর আগেও বহুবার খেলা হয়ে গিয়েছে।
যোগী বা তাঁর সমর্থকদের অনেক আগেই বেনারসকে বারাণসী, গুরগাঁওকে গুরুগ্রাম, ব্যাঙ্গালোরকে বেঙ্গালুরু, বোম্বেকে মুম্বাই, মাদ্রাজকে চেন্নাই এবং ৩০০ বছরের পুরোনো শহর ক্যালকাটাকে কলকাতা করে দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় ২০টি শহরের নাম পরিবর্তন করা হয়ে গিয়েছে।
তবে এ বার অবশ্য এই নাম পরিবর্তনের পিছনে রাজনৈতিক ও দলীয় নীতির গন্ধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
মোগলসরাই, ফৈজাবাদ কিংবা এলাহাবাদের মতো নামগুলোর সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক রয়েছে। আর এই নামগুলো পরিবর্তন করে দীনদয়াল উপাধ্যায়, অযোধ্যা কিংবা প্রয়াগরাজ করে দেওয়া তো বিজেপির আদর্শের সঙ্গে খাপ খায় বলেই মনে করা হচ্ছে। সামনের বছর সাধারণ নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িকতার ধুঁয়ো তুলে বাজার গরম রাখার প্রচেষ্টা। সঙ্ঘ পরিবারের ইতিহাসে মোগলদের কেবলমাত্র 'আক্রমণকারী' হিসেবে উল্লেখ করা আছে এবং তাঁদের যাবতীয় স্মৃতিস্মারক মুছে ফেলা শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রয়াগরাজের পর এবার অযোধ্যা [ছবি: পিটিআই]
অনেকেই এখন আশঙ্কা করতে শুরু করে দিয়েছেন যে এই নাম পরিবর্তনের খেলা শুধুই শহর বা রেলস্টেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাজমহল একটি মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের উপর তৈরি হয়েছে এবং সেই মন্দির আবার গড়ে তোলা উচিত - এমন একটি প্রচার ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই দাবিকে বিভিন্ন মস্করার সঙ্গে নস্যাৎ করে দেওয়া হলেও, একটি বিষয় এখন পরিষ্কার - তাজমহলও বর্তমান শাসকদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে।
ক্যালকাটা নাম ইংরেজিতেও বদলে কলকাতা হয়েছিল
নাম পরিবর্তনের এই খেলাকে সর্বদাই স্বাগত জানানো যেতে পারে যদি এই নাম পরিবর্তনের ফলে শহরগুলোর প্রভূত উন্নতি হত এবং সাধারণ শহরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হত। নাম পরিবর্তনের ফলে শহরগুলোর স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিশ্রুত জলের মান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা কিংবা মহিলাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নতমানের হত তা হলে কারোরই কিছু বলার থাকত না।
তাজমহলের নাম পরিবর্তন হতে পারে কি?
কিন্তু বেনারস বা বারণসী অবস্থা তো সেই যে কে সেই। পরিকাঠামোর অভাব, ঝুট ঝামেলা কিংবা বিদ্যুৎ পরিষেবারর সমস্যা আজও রয়েছে একই ভাবে। এলাহাবাদ এখন প্রয়াগরাজ, ইতিমধ্যেই রাজ্যের সাংস্কৃতিক রাজধানীর স্বীকৃতি হারিয়ে ফেলে পরিকাঠামোহীন জনবহুল একটি শহর হয়ে উঠেছে। পরকাঠোমো উন্নয়নের লক্ষ্যে এই শহরের শিল্প আনার প্রচুর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে শহরটি শুধু তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সম্বল করে বেঁচে আছে।
শহরের নাম পরিবর্তন করে লাভ কী হল?
উল্টোদিকে সঙ্ঘ পরিবারের কর্মসূচি বেশি করে চোখে পড়ছে এই কর্মসূচিতে বলা হচ্ছে যে দেশের 'সোনালি অতীত' ফিরিয়ে আনা উচিত যা মোগলদের সময় আক্রান্ত হয়েছিল। দল হিসাবে বিজেপি সেই সোনালি অতীত পুনরুত্থানের চেষ্টা করে চলেছে।
এই ধরণের আদর্শ দিয়ে কি রাজনৈতিক ফায়দা তোলা সম্ভব? উত্তরটা কেউই জানেন না। কিন্তু তাঁরই ফাঁকে নাম পরিবর্তনের নামে রাজনীতির খেলা হয়েই চলেছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে