রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মেনে ২০১৯ নির্বাচনে জোট গড়া মোটেই সহজ হবে না
অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলঙ্গানার মতো সব রাজ্যে কংগ্রেসকে জোটের বাইরে রাখা সহজ নয়
- Total Shares
কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রীপদে দ্বিতীয়বার হরদানহাল্লি ডড্ডেগৌড়া কুমারস্বামীর অভিষেক দেশে বিজেপি-বিরোধীদের একমঞ্চে এনে দিয়েছে, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট। দেশের বিজেপি-বিরোধী সব নেতাকেই একবার না একবার মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে ও সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে। এই মিনিট দশেকের শপথ অনুষ্ঠানের যে রেশ শুরু হয়েছিল বিএস ইয়েদ্যুরাপ্পার পদত্যাগ ঘোষণার মধ্য দিয়ে, তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে কুমারস্বামীর শপথ অনুষ্ঠানে। এই রেশ চলবে ২০১৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচেনও বিরোধীদের ঐক্যের এই দৃশ্য দেখা যাবে তো?
কর্নাটকে নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতি আর ২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে দেশ জোড়া ভোটের হাওয়াকে এক করে দেখা রাজনৈতিক ভাবে বড় ভুল হবে সেই সময় প্রতিটি রাজ্যে আলাদা আলাদা রাজনৈতিক সমীকরণ দেখা যাবে, আরও স্পষ্ট করে বললে, তা দেখা যেতে বাধ্য।
প্রথমেই আসা যাক কর্নাটকের কথায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই চান কংগ্রেসকে বাইরে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে, কর্নাটকের ক্ষেত্রে সেটি হওয়ার উপায় নেই। কুমারস্বামীর জিয়নকাঠি এখানে কংগ্রেসের হাতে। তা ছাড়া মমতার এমন অবাস্তব ভাবনা যে আদতে বিজেপির হাত শক্ত করবে, সে কথা এখন থেকেই বলতে শুরু করেছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা শুধু কর্নাটক নয়, অন্য কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য। তামিলনাড়ুর কথাই ধরা যাক। সেখানে ক্ষমতাসীন এডিএমকের মধ্যেই দ্বন্দ্ব লেগে রয়েছে, কার্যত নেতৃত্বহীন দল। তবে মোটের উপরে দেখা গিয়েছে করুণানিধির ডিএমকে গিয়েছে কংগ্রেসের জোটে, এ বারেও কুমারস্বামীকে অভিনন্দন জানানোর সময় কংগ্রেসকে বাদ দেননি দলের সভাপতি স্ট্যালিন। প্রয়াত জয়ললিতার এডিএমকে কেন্দ্রে একটু বিজেপি-ঘেঁষা তাই এই রাজ্যে আসন সমঝোতা কেমন করে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ডিএমকে ও কংগ্রেস—এই মুহূর্তে কে যে তুলনায় শক্তিশালী, তা বোঝা মুশকিল।শাসকশিবিরও ছন্নছাড়া।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা শুধু কর্নাটক নয়, অন্য কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য
তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে স্থানীয় দুই দল চন্দ্রবাবু নায়ড়ুর তেলুগুদেশম পার্টি ও চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির ক্ষেত্রে কাজটা অনেক সহজ। কারণ এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাইরে রেখে তারা একক ক্ষমতায় ভোটে যেতে পারবে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে চন্দ্রবাবু নায়ড়ু গেলেও কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার বিড়ম্বনা এড়াতে সেই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন চন্দ্রশেখর রাও। আর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী খোলাখুলি বিজেপি বিরোধীতা করছেন না। বিধানসভা ও লোকসভায় আসনের বিচারে রাজ্যে তিনি প্রায় বিরোধীশূন্য হলেও, গ্রামীণ ভোটের ফলে তিনি বুঝে গিয়েছেন, বিজেপি তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। সম্ভবত সে জন্যেই তিনি খোলাখুলি বিজেপি বিরোধিতায় নামছেন না।
কেরলে শাসক এলডিএফের (বাম দলের জোট)প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউডিএফ (কংগ্রেস জোট) সেখানে সিপিআই-সিপিএম-কংগ্রেস একসঙ্গে বসে আসন সমঝোতা করছে, তা বেশ কষ্টকল্পনা। যদিও এই রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে শাসকদলের সম্পর্ক যথেষ্ট তিক্ত।
প্রতিবেশী বিহারে গতবারে যে মহাগটবন্ধন করে বিজেপিকে আটকে দিয়েছিল লালুপ্রসাদের আরজেডি, নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং কংগ্রেস, সেই নীতীশকুমার এখন গদি সামলাচ্ছেন বিজেপির অনুগ্রহে। তিনি এখন বিজেপির জোটে। এই রাজ্যে সামান্য হলেও বামেদের শক্তি রয়েছে। এখানে শক্তি কম হলেও আগের ভোটে লালুপ্রসাদের উপরে ভর করে আসন বাড়িয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। তাই এখানে ফেডেরাল ফ্রন্টের তত্ত্ব মেনে পুরোপুরি কংগ্রেসকে ছেঁটে ফেলে লালু কতটা সব আসনে প্রার্থী দেন সেটাও প্রশ্ন।
কেরলে বিজেপির সঙ্গে শাসকদলের সম্পর্ক যথেষ্ট তিক্ত
সবার শেষে পশ্চিমবঙ্গ। ধরে নেওয়া যাক কংগ্রসকে বাদ দিয়ে জোট গড়া হল। তা হলে জোটসঙ্গী তৃণমূল কটা আসন ছাড়বে সিপিএমকে? কারণ “যে রাজ্যে যার বেশি ক্ষমতা” এই তত্ত্বের উপরে দাঁড়িয়ে প্রার্থী দেওয়া হলে এ রাজ্যে সিপিএমের তো রায়গঞ্জ ছাড়া কোনও আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে না। আর নীতিগত ভাবে সিপিএমের এখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আপত্তি নেই। সে ক্ষেত্রেই বা সমীকরণ কী হবে?
উত্তরপ্রদেশের একটা উপনির্বাচনে অজিত সিংয়ের আরএলডি, মুলায়ম-অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ও মায়াবতীর বহুজন সমাজপার্টি না হয় এক সঙ্গে প্রার্থী দিল। কিন্তু এ বার তার সঙ্গে জুড়ছে কংগ্রেসও। বিজেপির সামনে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোট একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছিল গত বিধানসভা নির্বাচনে। তাই দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য, যেখানে কংগ্রেসের নিজের অস্তিত্ব বলতে আমেঠি আর রায়বরেলি, সেখানে আসন সমঝোতা কতটা সহজে হবে তা নিয়ে এখন থেকেই হয়ত হিসাব কষা শুরু করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।