আদালতের রায়ে গণতান্ত্রিক অধিকার অধিকার কতটা রক্ষিত হল
জয়ী প্রার্থীদের হয় তৃণমূলে যোগ দিতে হচ্ছে, না হলে গ্রাম ছাড়তে হচ্ছে
- Total Shares
দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল ব্যক্তি হিসাবে আমি সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা করি। তবে আমরা যদি সর্বোচ্চ আদালতের সম্পূর্ণ শুনানি শুনি তা হলে দেখব, প্রতিটি ক্ষেত্রে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ ছিল, তার সঙ্গে রায়ের সাজুয্য নেই।
সুপ্রিম কোর্ট (পিটিআই)
অনলাইন মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে মামলাটি খারিজ করেছিল, তার কারণ হল আইনে কোথাও এই ধরনের কোনও উপায়ের কথা বলা নেই। তাই এই রায়ের কারণ বোঝা যাচ্ছে, তা মেনেও নিতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যেখানে একটি সরকার রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে সেখানে গণতন্ত্র কোথায় থাকবে? পুলিশ-প্রশাসন সরকারি দলের লোকজনের সঙ্গে এক হয়ে বিরোধীদের মারধর করে তা হলে গণতন্ত্র কী ভাবে রক্ষিত হবে?
ত্রিস্তরীর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের জন্য নতুন চারস্তরীয় লুঠের ব্যবস্থা চালু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমত যাতে বিরোধীরা মনোনয়ন দাখিল না করা যায়, দ্বিতীয়ত, মনোনয়ন দাখিল করতে পারলেও যাতে বিরোধীরা প্রচার না করতে পারে, তৃতীয়ত ভোটের দিন ভোট লুঠ করা ও ভোট গণনার সময় গণ্ডগোল করা, জোচ্চুরি করা।
বহু আসনে প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসাবে শাসকদলের হিংসাকে দায়ী করা হয়েছে (ফাইল চিত্র)
ভোটের ফল প্রকাশের পরে নতুন একটি পন্থা তারা চালু করেছে। জয়ী প্রার্থীদের হয় তৃণমূলে যোগ দিতে হবে, না হলে তারা গ্রামে থাকতে পারবে না। এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসনে কোনও প্রার্থী দেওয়াই যায়নি। যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে কেন্দ্রের সাংসদ, সেখানে ৯৩ শতাংশ আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। তার পরে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় মানুষকে কষ্ট দিয়েছে।
মানুষ যখন অন্য কোথাও কোনও বিচায় পায় না, তখনই তারা আদালতে যায়। সেই আদালতেও যদি মানুষ বিচার না পায় তা হলে এটা গণতন্ত্রের পক্ষে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। কারণ গণতন্ত্র প্রয়োগই তো করা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের কথা মুখে বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। কোনও না কোনও প্রতিষ্ঠানকে তো দাঁড়াতে হবে যাতে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষিত হতে পারে। তাই আমার মনে হয় এই রায়ে বাংলার বহু মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, আর আমি তাঁদের সঙ্গে সমব্যথী।