ভারত কি উন্মাদ হয়ে গেছে? আমার এই ভাবনার ১০টি কারণ
গো আমাদের মাতা, গোমূত্রে ক্যান্সার সারে, কংগ্রেসের ব্রাহ্মণের ডিএনএ আছে...
- Total Shares
মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় যে দেশটা কি পাগল হয়ে গেল! কয়েককটা ঘটনা বিচার-বিবেচনা করে আমার এই কথা মনে হয়েছে।
১। এই সপ্তাহেই গোরুকে রাষ্ট্রমাতা বলে বিবেচনা করার ব্যাপারে উত্তরাখণ্ড বিধানসভা একটি ঘোষণাপত্রে সায় দিয়েছে। শুধুমাত্র শাসকদল বিজেপি এর পক্ষে ভোট দিয়েছে এমন নয়, বিরোধী কংগ্রেসও এ ব্যাপারটি সমর্থন করেছে। এ বার তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছে এটাকে সারা দেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে।
গো-মাতা, তাই পূজনীয়! (ছবি: রয়টার্স)
২। রাজস্থান সরকার গোরুর জন্য পৃথক একটি মন্ত্রক করেছে (এই মন্ত্রক শুধুমাত্র গোরুর ভালোমন্দের দিকটি দেখবে)।
৩। মধ্যপ্রদেশের পাঁচ জন ‘বাবা’কে (কম্পিউটার বাবা সমেত) প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।
৪। আবার মধ্যপ্রদেশ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ঘোষণা করেছেন প্রতি পাঁচটি গ্রামপঞ্চায়েতে একটি করে গোশালা তৈরি করা হবে। তা এখনও করে হয়ে ওঠা হয়নি, তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ ঘোষণা করে দিয়েছেন যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যদি রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তা হলে তারা প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েতে গোশালা তৈরি করবে।
৫। নিজেকে শিবভক্ত প্রমাণ করতে রাহুল গান্ধী কৈলাশ ও মানস সরোবর যাত্রা করেছেন আর নিয়মিত ভাবে সেখান থেকে টুইট করেছেন। এর আগে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি বেশ কয়েকটি মন্দিরে গিয়েছেন এবং নিজেকে পৈতাধারী শিবভক্ত বলে ঘোষণা করেন।
কম্পিউটার বাবাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার (ছবি: ফেসবুক)
৬। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা বলেছেন যে কংগ্রেসের মধ্যে ব্রাহ্মণের ডিএনএ রয়েছে।
৭। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, মুসলমান ছাড়া হিন্দুত্ব বলে কিছু নেই। তবে এক নিঃশ্বাসে তিনি বলে গেছেন, কোনো মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হলে লোকে শোরগোল ফেলে দেয় কিন্তু গোরু পাচারকারীরা গোরক্ষকদের উপরে হামলা করলে তারা চুপ করে থাকে। এবং মুসলমানদের বিধায়ক ও সাংসদ হওয়ার জন্য প্রার্থী করবে না কার্যত আরএসএসের অধীনে থাকা বিজেপি। তারা বেছে বেছে মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেবে কিনতু হিন্দু অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবে না।
'পৈতেধারী' মানস সরোবর থেকে টুইট করেছেন রাহুল গান্ধী
৮। বোতলে গোমূত্র বিক্রি করছেন রামদেব বাবা, তাঁর দাবি এটি বহু রোগের নিরাময়কারী। তাঁর দিব্য ফার্মেসি প্রতি দিন হাজার হাজার গ্যালন গোমূত্র কিনছে এবং তা থেকে দিব্য গোধন আরক তৈরি করছে। গুজরাটের জুনাগড় এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে তাঁরা গোমূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার নিরাময়ের উপায় আবিষ্কার করেছেন।
৯। মুসলমান ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে (পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান ভোট ৩০ শতাংশ মতো) তৃণমূল সরকার নাকি ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০,০০০ ইমামকে মাসে ২,৫০০ টাকা করে এবং দেড় হাজার মুয়াজ্জেনকে ১,৫০০ টাকা করে বেতন দিয়েছে। ২০১৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এটিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করায় সেটি প্রদান করা বন্ধ করে দেয়।
১০। গোরক্ষকদের দ্বারা মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যা করা যেন দেশের বহু জায়গায় নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
গোরুর অবমাননা করলে পিটিয়ে হত্যা করা এখন এ দেশের রুটিন খবর (ছবি: রয়টার্স)
এ কথা ভুললে চলবে না যে স্বচ্ছতা অভিযান এবং স্বচ্ছতাই সেবা বলে দেশজোড়া চমক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং এখন তার প্রচার করছেন রাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালরা এবং মুখ্যমন্ত্রীরা।
আমার হৃদয় শঙ্কিত হয়ে ওঠে, কখনও কথনও মনে হয় অ্যালিস অ্যাট দ্য ম্যাড হেটার্স টি পার্টি!
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে