রাজনীতি তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করলেও, একসূত্রে বেঁধে দিলেন রবীন্দ্রনাথ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে যে ফুলের তোড়া দিয়েছেন তাতে রাজনীতির কাঁটাও ছিল
- Total Shares
রাজনীতি যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল নোবেল পুরস্কার পাওয়ার এক শতাব্দীরও বেশি পরে তাঁদের আবার এক সূত্রে বাঁধলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানা সময় নানা ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করতে শোনা গেছে। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদীকে একই মঞ্চে দেখা গেল। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া ও উত্তরীয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে সৌজন্যও বিনিময় করলেন।
যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিমুদ্রাকরণ থেকে শুরু করে জিএসটির মতো মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী যে শুধু এক মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন তাই নয় তাঁরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলেনও।
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করছেন মোদী ও হাসিনা
এটা শুধুমাত্র প্রটোকল নয়, এর মধ্যে রাজনীতিও আছে।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের জায়গায়। এদিন বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মোদী যৌথ ভাবে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
খুব পরিষ্কার যে এটি অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সমাবর্তন বা উদ্বোধন নয়, বরং এই মঞ্চে দুটি দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও দুই মেরুর দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার স্থানও হয় ওঠে।
নিজেদের ব্যক্ত করতে এঁরা বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের মাতৃভাষাতেই বক্তৃতা করেন।
মোদী বলেন, "নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যই আজ আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি...আমি এ কথা বলতে এসেছি যে আপনারা যদি এক পা ফেলেন তাহলে আমি চার পা ফেলব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে..."
স্বকীয় ভঙ্গিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পাঠ করেন, ঠিক তেমনই তিনি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাও পাঠ করে বলেন যে নদীর জল আগেও বয়েছে, ভবিষ্যতেও বয়ে চলবে...
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ছবি: সুবীর হালদার)
তিনি কবিতার পাঠের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানের ঐক্যের কথাও বলেন এবং এও বলেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাই দুই দেশকে এক সূত্রে বেঁধে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশের আসনে বসেন এবং খুব মন দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা বক্তৃতা শোনেন। বক্তৃতার ভাষাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল ব্যাপার হল তাঁরা ঠিক কী ভঙ্গিমায় কথাগুলো বলছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে দু'জনেই যথেষ্ট উচ্চতায় উঠেছেন কিন্তু তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একই রকম উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, "রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা বা ভারতেরই নন তিনি আমাদের প্রত্যেকের অতি প্রিয় এক মানুষ। ছোটবেলা থেকে আমরা ওঁর বই পড়ে বড় হয়েছে। শান্তিনিকেতন আমাদেরও হৃদয়ের খুব কাছের।"
"মোদী...মোদী" -- মজার ব্যাপার হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে এদিন চারদিকে একটাই স্লোগানটাই শোনা গিয়েছিল। তাই যাঁরা এই অনুষ্ঠানটি দেখছিলেন তাঁরা সবাই একমত ... রাজনীতিতে বদলই একমাত্র ধ্রুব সত্য।