উত্তরপ্রদেশে একাই লড়বে কংগ্রেস: এসপি-বিএসপির জোটে না থাকা তাদের পক্ষে কেন মঙ্গল

উত্তরপ্রদেশের জন্য এবার ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করতে পারবে কংগ্রেস

 |  3-minute read |   14-01-2019
  • Total Shares

উত্তরপ্রদেশে তাদের আসন সমঝোতার কথা সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ঘোষণা করার পরে ১৩ জানুয়ারি কংগ্রেসও ঘোষণা করে দিল যে উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনেই তারা প্রার্থী দেবে। এটা কংগ্রেসের কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এই রাজ্যে একলা চলো নীতি হয়তো কংগ্রেসের কাছে সবচেয়ে বড় বাজি। কেন, তার পাঁচটা কারণ এই রকম:  

১। কংগ্রেসের ভোট অন্য কেউ পাবে না

উচ্চবর্ণের হিন্দুদের কাছে এখনও দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোটারদের কাছে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির সেই আকর্ষণ এখনও নেই, তাই তাঁদের ভোট সব সময় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পড়ে না। যদি এই তিন দল একসঙ্গে লড়াই করত এবং সেক্ষেত্রে কোনও আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী না থাকলে সেই ভোট বিজেপি পেতে পারত।

rahul-akhilesh_011419034520.jpgএকটা পরাজিত: ২০১৭ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে এই জোট সুবিধা করতে পারেনি (ছবি: পিটিআই/ফাইল)

সাম্প্রতিক দুটি নির্বাচনে আমরা দেখেছি এই ধারনা কী ভাবে কাজ করেছে – ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোট এবং অতি সম্প্রতি গোরক্ষপুর ও ফুলপুরের উপনির্বাচন – এখানে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল বিজেপি, কংগ্রেস এবং এসপি-বিএসপির মধ্যে এবং সেখানে শেষ হাসি হাসে এসপি-বিএসপি জোট বা বুয়া-ভাতিজা জোট।

ফুলপুরে কংগ্রেসের ব্রাহ্মণ প্রার্থী মণীশ মিশ্র বিজেপির ভোট কেটেছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, গোরক্ষপুরে বিজেপির চেয়ে যত ভোট বেশি পেয়ে সমাজপার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন সেই ভোটের সংখ্যা ছিল কংগ্রেস প্রার্থী সুহিতা চট্টোপাধ্যায় করিমের প্রাপ্ত ভোটের সমান।

  • অর্থাৎ, কোনও আসনে যদি কংগ্রেস জিততে নাও পারে তা হলেও তারা উচ্চবর্ণের ভোট কেটে বিজেপিকে পরাজিত করতে পারবে।

এর উল্টো দিকটা হল, সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে। তবে ভোটদাতারা জানেন যে রাজ্যের নির্বাচনের থেকে লোকসভা নির্বাচনের পার্থক্য রয়েছে এবং সেই জন্যই তাঁরা সেই দলকেই ভোট দেবেন যে দল কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারবে।

২। ত্রিমুখী লড়াইয়ে মেরুকরণের সম্ভাবনা কম

যদি এসপি-বিএসপি-কংগ্রেস একজোট হয়ে লড়াই করত তা হলে জোট হত একটাই ব্যাপারকে সামনে রেখে, সে ক্ষেত্রে মোদী-বিরোধী সব ভোটেরই মেরুকরণ ঘটত। এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত আবেদনের একটা আলাদা মূল্য রয়েছে। তবে এ কথাও ঠিক যে সে ক্ষেত্রে ভোট মেরুকরণে দ্রুত সাম্প্রদায়িক রং জুড়ে যেত।

modi2_011419034837.jpg‘মোদীর বিরুদ্ধে ভোট’ হলে তাতে বিজেপির সুবিধা হত। (ছবি: পিটিআই/ফাইল)

যখন কংগ্রেস এবং এসপি-বিএসপি জোট আলাদা ভাবে লড়াই করছে তখন প্রচারের অভিমুখ হতে পারে ‘গুজরাটি মোদী’ বনাম উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় নেতাদের, সে ক্ষেত্রে ভোটে সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে জাত-পাতই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

৩. কৌশল বোঝার সুবিধা

ভোটের আগে যখন একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগবে তখন কংগ্রেস এবং এসপি-বিএসপির কৌশলগত বোঝাপড়া উপেক্ষা করা যাবে না। এই জোট খুব বিনয়ের সঙ্গেই ‘গান্ধী পরিবারের আসন’ আমেঠি ও রায় বরেলিতে কোনও প্রার্থী দেয়নি। কংগ্রেস যে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে তা প্রমাণ করতেও কংগ্রেসকে বেশ বেগ পতে হবে।

অতি সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে বহু আসনে অজিত যোগী ও মায়াবতীর মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পরে বিজেপি যে আসনে যে জাত-পাতের প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেসও কৌশলগত কারণেই সেই আসনে সেই জাত-পাতের প্রার্থীই দিয়েছিল এবং জনসমক্ষে তাদের সেই কৌশল হিতে বিপরীত হয়েছে।

এই ধরনের সমঝোতা হলে বিজেপিকে দূরে রাখার পক্ষে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বাজি।

৪। নির্বাচন-পরবর্তী জোট

আলাদা ভাবে লড়াই করার পরেও নির্বাচন শেষ হলে কংগ্রেস এবং এসপি-বিএসপি হাত মোলাতে পারে, যে ভাবে কর্নাটকে জনতা দল (সেকুলার) বা জেডিএসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস।

maya_011419035012.jpgভোটের আগে গরম কথা বলে ভোটের পরে সমর্থন করার ব্যাপারে পরিচিত বহেনজি। (ছবি: পিটিআই/ফাইল)

রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনের আগে আক্রমণ তীব্র করেছিলেন মায়াবতী, তবে ভোটপর্ব মিটতেই তিনি কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করে দেন।

৫। রাহুল গান্ধীর জন্য বিশাল মঞ্চ

এসপি-বিএসপির প্রাথমিক সমর্থনের ভরসা না থাকায় রাজনৈতিক ভাবে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে রাহুল গান্ধী একা নিজের দায়িত্বে এখানে লড়াই করতে পারবেন এই সুযোগ রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে এই রাজ্য থেকে মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। এ বার তার থেকে বেশি যে ক’টা আসন পাবে তার জন্য একক ভাবে সেই জয়ের পুরো কৃতিত্বই দেওয়া হবে রাহুল গান্ধীকে।

rahul_011419035131.jpgনিজেকে প্রমাণ করার জন্য রাহুল গান্ধীর বড় মঞ্চ দরকার। (ছবি: পিটিআই/ফাইল)

আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যদি এই রাজ্যে সম্মানজক লফল করতে পারে কংগ্রেস তা হলে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অনেক বেশি করে দর কষাকষি করতে পারবেন রাহুল গান্ধী।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment