প্রিয়াঙ্কা নিস্তব্ধ: কী ভাবে বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক কংগ্রেসের 'ব্রহ্মাস্ত্র' ভোঁতা করে দিল
সার্জিকাল স্ট্রাইকের পরে কংগ্রেস এখন পরবর্তী পাঁচ বছর বিরোধী আসনে বসার দুঃস্বপ্ন দেখছে
- Total Shares
পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের পরে বিরোধীরা একজোট হয়ে নতুন নির্বাচনী কৌশল সন্ধান করতে নেমেছে।
ইগো বা একনায়কতন্ত্রের কথা ভুলে গিয়ে এখন নতুন করে জোটসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলোতে যেখানে বিজেপি ভালো ফল করবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
আর, এই প্রচেষ্টাতে, একটি কৌশল কিন্তু বেশ গুরত্ব পাচ্ছে - বিরোধীরা চাইছে ২৭৩টির মতো আসনে বিজেপি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে 'একের-বিরুদ্ধে-একের' লড়াই হোক যাতে অ-বিজেপি ভোট ভাগ না হয়ে যায়।
এই মুহূর্তে, এনডিএর লোকসভা আসন সংখ্যা ২২০টি।
আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির ১০০টির মতো আসন কমবে বলে আশা করে ছিল বিরোধী শিবির। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারীর সার্জিকাল স্ট্রাইকের পরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক রাজনৈতিক হিসেবে-নিকেশ ওলট পালট করে দিয়েছে [সৌজন্যে: লোকসভা টিভি]
কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি (এসপি), বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), আম আদমি পার্টি (আপ) এবং এনডিএ জোটের বাইরের অন্যান্য দলগুলো বুঝতে পেরেছে যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের এই এয়ার স্ট্রাইক আসন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রভূত সাহায্য করবে। সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আতঙ্ক না থাকলেও, তারা যে যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে তা বলাইবাহুল্য।
আর, অন্যান্য দলগুলোর চাইতে কংগ্রেসের চিন্তার কারণ অনেকটাই বেশি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আকাশে প্রবেশ করে জৈশ-ই-মহম্মদের শিবিরগুলো ধ্বংস করে দিয়ে এসেছে। এখনও অবধি বায়ুসেনার এই আক্রমণকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু, এই আক্রমণ থেকে মোদী ও বিজেপি কতটা সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে তা নিয়ে কিন্তু ভিতরে ভিতরে বেশ চিন্তায় রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের নতুন হাই-প্রোফাইল সাধারণ সচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়েও চিন্তিত কংগ্রেস, যাঁকে রাজনৈতিক 'পট পরিবর্তনের' জন্য সম্প্রতি সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছে।
এয়ার স্ট্রাইকের পরে সর্বদলীয় বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদ [সৌজন্যে: পিটিআই]
পুলওয়ামা জঙ্গিহানার পর প্রায় সপ্তাহ দু'য়েক কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও অবধি সংবাদমাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এমন কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি যাতে তাঁকে সম্ভাব্য 'চ্যালেঞ্জার' বলে মনে হতে পারে। কংগ্রেসের অন্দরমহলেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ঠিক এই সময়েতেই 'মিশন প্রিয়াঙ্কা' অভিযানটির গতিবেগ কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে।
'একের-বিরুদ্ধে-এক' প্রার্থী দেওয়ার কৌশলটি রূপায়ণ করা মুখের কথা নয়। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি ছাড়া আর কোথাও সম্ভাব্য জোট শরিকরা কংগ্রেস ও বামদলগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছে না।
সবচাইতে খারাপ পরিস্থিতি ওড়িশায়। সেই রাজ্যে কংগ্রেস ও নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজু জনতা দলের (বিজেডি) মধ্যে জোট হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। অন্ধ্রতে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও কংগ্রেস এখনও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে দু'দলের জোট যে ধাক্কা খেয়েছিল সেই ধাক্কাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
উত্তরপ্রদেশেও জোট-গল্পের মধ্যেও তীব্র রেষারেষি রয়েছে - বিএসপি নেত্রী মায়াবতী উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে প্রস্তুত নন। উত্তরপ্রদেশে মুখরক্ষা করার মতো আসন পেতে হলে কংগ্রেসের কাছে একটা উপায়ই খোলা রয়েছে - মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিসগড়, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে বিএসপি ও এসপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নেওয়া। এই কৌশল কিন্তু কংগ্রেসের কাছে একেবারেই সুখকর নয় কারণ এই রাজ্যগুলোতে কংগ্রেসের নিজস্ব সংগঠন বেশ শক্তিশালী।
ব্রহ্মাস্ত্র থমকে দাঁড়িয়েছে: একটি জনসভায় রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী [ছবি: পিটিআই]
উল্টোদিকে, উত্তরপ্রদেশে অ-বিজেপি দলগুলোর একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ থেকে একেবারে একশো শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।
কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। বিএসপি, এসপি ও কংগ্রেস যদি অতীতের তিক্ততা ভুলে এক হতে পারে তাহলে তারা নিজেদের মধ্যে ৮০টি আসন ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এই বিষয়ে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী, আহমেদ প্যাটেল ও এ কে অ্যান্টনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।
কিন্তু কংগ্রেসের সমস্যা শুধুমাত্র এই হিসেবে-নিকেশেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশে একটি মনে রাখার মতো রোড'শো অনুষ্ঠিত করার পরে প্রিয়াঙ্কা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া পরবর্তী ৭২-ঘণ্টা ধরে দু'হাজারেরও বেশি রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা নেত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন (কেউ একজন দাবি করেছেন যে মাত্র সাত ঘণ্টাতেই তাঁরা এই বৈঠকগুলো করেছিলেন)। এই বৈঠকে জাত-পাতের রাজনীতির উপর নির্ভরশীল রাজ্যের ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট বাধার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
নবীন পট্টনায়ক কোনও ভাবেই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাবেন না [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারীর এয়ার স্ট্রাইক এই হিসেবে-নিকেশ ও বিবেচ্য বিষয়গুলোকে একেবারে ওলট পালট করে দিয়েছে।
একদা আশাবাদী থাকা কংগ্রেস এখন পরবর্তী পাঁচ বছর বিরোধী আসনে বসার দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে একটি পথই তাদের কাছে খোলা রয়েছে - মোদীকে হটাতে হলে স্বার্থত্যাগ না করার বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে কংগ্রেসকে। আর, কংগ্রেসের হাতে খুব বেশি সময় নেই।
কিন্তু কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, দলীয় নেতা নেত্রীরা মনে করছেন যে একটি প্রত্যয়জনক লড়াইয়ের ক্ষমতা রয়েছে তাদের এবং তাই কংগ্রেস এখন নিজেদের বিজেপি বিকল্প জাতীয় দল হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
এভাবে কি বুলেটের জবাব দেওয়া যাবে? উত্তর জানতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে