মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের চক্রান্তের তদন্ত করে অপরাধী ধরা হোক, নইলে ভুয়ো খবর কেন প্রকাশ হোক
প্রিসাইডিং অফিসার খুনের তদন্ত থেকে নজর ঘোরাতেই এই হয়রানি
- Total Shares
আমার ছেলে রাসেল আজিজকে গতকালের পর আজও সিআইডি ডেকেছিল। এ নিয়ে আমার ছেলে যা বলার তা বলেছে। আমি এখন শুধু একটা শব্দই বলতে পারি, হেনস্থা। হেনস্থা করা হচ্ছে। এটা তৃণমূল সরকারের হলমার্ক। যখন সত্যিকারের কোনও অপরাধ হয়, তখন দায়িত্বশীল পুলিশ-প্রশাসনের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
কোনও অপরাধের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও প্রতিবেদন উঠে এলে ফোন করলেও কেউ ফোন তোলেন না। ভোটের দিনও তাই হয়েছিল। তখন একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াই ছিল মাধ্যম। কোথায় কী হচ্ছে তা জানতে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরেই ভরসা করতে হয়েছিল সকলকে।
মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এ কথা বলার সাহস কারও নেই, আমার সাহস আছে, আমি বলছি
যখন মানুষ খুন হয়েছে এবং ভোট লুঠ হয়েছে, তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস উৎসব পালন করেছে পুলিশর সঙ্গে এক যোগে। আর সেখানে অপরাধের খোঁজ না নিয়ে কে ছবি তুললেন, কোন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুললেন, যত বার গুলি চলেছে, যত বার আক্রমণ হয়েছে তা কে জানালেন, এ সব নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের খোঁজ না নিয়ে খোঁজা হয়েছে সেই সব সাংবাদিকদের যাঁরা সেই সংক্রান্ত খবর করেছেন। এখন তো এ রাজ্যের বেশিরভাগ সাংবাদিক ভয় পেয়েছে, সংবাদপত্রগুলোও ভয় পেয়েছে। তারপরে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লিখেছেন তাঁদেরও ভুগতে হচ্ছে। সরকারের অপকর্মের কথা কেউ লিখছেন না, কেউ লিখলে তাঁকে ভুগতে হচ্ছে তা সে সোশ্যাল মিডিয়া হোক বা ব্লগ হোক।
ভয়ের পরিবেশ জিইয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার যে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীনতার কথা বলি তা কোথায়? সেই অম্বিকেশ মহাপাত্র থেকে সেই যে ভয় দেখানো শুরু হয়েছিল, এখনও পর্যন্ত চলছে। দুর্গাপুজোয় ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ে বালুরঘাটে একজন পোস্ট করায় তাদেরও মামলার মুখে পড়তে হয়েছিল, যিনি পোস্ট করেছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই ধরপাকড়ের অংশ হিসাবে রাসেল আজিজকেও ধরেছে। অসংখ্য ছেলেমেয়েকে পুলিশ অনাথ করছে।
ভোটের সময় লুঠ, গুণ্ডামি এ সব ঘটেছে, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তাঁকে সুপারি কিলার দিয়ে খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলোর তো তদন্ত করা উচিৎ। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিআইডির এর তদন্ত হওয়া দরকার। আর যদি হুমকি না পেয়ে থাকেন, তা হলে ভুয়ো খবর দিলেন কেন তিনি? তিনি সত্যি বললে অপরাধীকে খুঁজে বার করা হোক। আর যদি মিথ্যা বলে থাকেন তা হলে ভুয়ো খবর দিলেন কেন তা প্রকাশ করা হোক।
মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এ কথা বলার সাহস কারও নেই, আমার সাহস আছে, আমি বলছি। পুলিশের যদি ক্ষমতা থাকে তা হলে হয় অপরাধীকে খুঁজুক, কারণ এ তো মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার প্রশ্ন। তা যদি না হয়, তা হলে যিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে নিরাপত্তা নিয়ে ভুয়ো খবর দিয়ে থাকেন, তার তদন্ত করুক।
ভোটের সময় লুঠ, গুণ্ডামি এ সব ঘটেছে, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তাঁকে সুপারি কিলার দিয়ে খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলোর তো তদন্ত করা উচিৎ
রাজ্যে যে সর্বনাশা, সর্বগ্রাসী রাজত্ব চলছে সেখানে সমস্তরকম প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। আর অপরাধ দমনের বদলে পুলিশ অপরাধে করে যাচ্ছে। অপরাধের তদন্ত না করে অন্য করে নজর ঘোরানোও অপরাধ। আমরা চাইছি প্রিসাইডিং অফিসার খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, আর তখন পুলিশ দেখাচ্ছে তারা কী ধরনের তদন্ত করছে।
আমরা সারদা ও নারদ কাণ্ডের সময় তদন্ত করে অপরাধীদের ধরতে বলেছিলাম। কিন্তু নারদ নিয়ে তদন্তের সময় আমরা গণমাধ্যমের রিপোর্টে দেখেছি ঘুষ নেওয়া হয়েছে কিনা সেই তদন্ত না করে কোন ল্যাপটপে ছবি তোলা হয়েছে, সেটা নিয়ে তদন্ত করেছে সিআইডি। যে টাকা নিল তাকে ধরেছে? চিটফাণ্ডের ক্ষেত্রেও তাই। যারা অপরাধ করেছে তাদের ধরা হয়নি, তাদের আড়াল করা হয়েছে।