উপনির্বাচনের ফল: মহারাষ্ট্র থেকে পাঁচটি শিক্ষণীয় বিষয়
উত্তরপ্রদেশ ও বিহার দেখিয়েছে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হলে বিজেপির বিপদ আছে
- Total Shares
সাধারণ নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। এই অবস্থায় উপনির্বাচনগুলোর ফলাফল কিন্তু শাসক ও বিরোধী দুই পক্ষকেই চিন্তায় রাখবে। ৩১ মে উপনির্বাচনগুলোর ফল প্রকাশ হয়েছে। এই ফল থেকে স্পষ্ট হে উত্তর ভারতে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে, বিরোধীরা বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে। উল্টোদিকে, মহারাষ্ট্রে বিরোধীরা কিন্তু এখনও বিজেপিকে হারাবার চাবিকাঠি খুঁজে পায়নি।
২০১৯ সালে শিবসেনা বিজেপির সঙ্গে থাকবে কিনা তার এখনও কোনও নিশ্চয়তা নেই। পালগড় ও ভাণ্ডারা-গণ্ডিয়া - মহারাষ্ট্রের দুটো লোকসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল থেকে পরিষ্কার যে আগামী নির্বাচনে শিবসেনা বিরোধীদের ৩০টি মতো আসন জয়ের সম্ভাবনা মাটি করে দিতে পারে। মহারাষ্ট্রে মোট ৪৮টি লোকসভা আসন রয়েছে।
পালগড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে শিবসেনা বিরোধীদের ভোটে ভাগ বসিয়ে দু'নম্বরে শেষ করেছে। এই আসনে কংগ্রেস পাঁচ নম্বরে শেষ করেছে, সিপিএমেরও পরে।
এখানে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক মূলত আদিবাসী, তপশিলি উপজাতি ও মুসলমানদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যে ভাবে এই ভোটব্যাঙ্কের উপর প্রভাব পড়েছে তাতে শুধু কংগ্রেস নয়, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির হালও বেশ খারাপ। এখন দেখতে হবে এই ধারা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও বজায় থাকে কিনা।
দেখে নেওয়া যাক এই উপনির্বাচনগুলো থেকে আমরা ঠিক কী কী ধারণা করতে পারি:
পালগড় শিবসেনার কাছে অ্যাসিড টেস্ট ছিল
বিরোধী জোট
উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে লক্ষ করা গেছে যে বিরোধীরা এক জোট হলে বিজেপি চাপে পড়ে যাচ্ছে।
একই ভাবে ভাণ্ডারা-গণ্ডিয়া আসনে আমরা দেখলাম যে এনসিপি দুর্বল প্রার্থী দেওয়া সত্ত্বেও সেই আসনটি তারাই জিতে নিল। ২০১৪ বিধানসভা নির্বাচনের সময় এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ছ'টি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে জয়লাভ করেছিল। তা সত্ত্বেও এবার এনসিপির জয়ের অন্যতম কারণ অন্যান্য বিরোধীদলগুলো কৌশলগত বোঝাপড়া করে আর কোনও প্রার্থী দেয়নি। কংগ্রেস ও এনসিপি তো একজোট ছিলই। এর পাশাপাশি এই আসনে শিবসেনাও প্রার্থী দেয়নি।
হারের প্রধান কারণ শিবসেনা
পালগড় কিন্তু শিবসেনার কাছে অ্যাসিড টেস্ট ছিল। এই কেন্দ্রে দলের পক্ষ থেকে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ চিন্তামণ ওয়াঙ্গার পুত্র শ্রীনিবাস ওয়াঙ্গাকে প্রার্থী করা হয়েছিল। এর ফলে তফসিলি উপজাতিদের ভোট নিজেদের পকেটে পুরতে পেরেছে শিবসেনা। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা এই আসনে দু'নম্বরে শেষ করতে পেরেছে।
শিবসেনাকে এখন নিজেদের কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। খুব অল্প ভোটে এই আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। শিবসেনা যদি বিরোধী জোটে সামিল হত তা হলে এই আসনের ফলাফল কিন্তু অন্যরকম হতে পারত।
উত্তর ভারতের ভোটব্যাঙ্ক বিজেপির পক্ষে
মুম্বাইয়ে, বিশেষ করে থানে অঞ্চলে বসবাসকারী উত্তর ভারতীয় ভোটাররা বিরোধীদের দুশ্চিন্তার কারণ। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের জাদু কাজ না করলেও মহারাষ্ট্রে সেই আদিত্যনাথের জাদু বিজেপির হয়ে কাজ করে চলেছে। তাঁর জনপ্রিয়তার কথা ভেবে বিজেপির মহারাষ্ট্র শাখা তারকা প্রচারকারীদের মধ্যে একমাত্র তাঁকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
বিষয়টি কংগ্রেসকে চিন্তায় রাখবে।
মহারাষ্ট্রে আদিত্যনাথের জাদু কিন্তু বিজেপির হয়ে কাজ করে চলেছে
উপজাতিদের বিশ্বাস হারিয়েছে কংগ্রেস
একটা সময় পালগড় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল যেখান থেকে কংগ্রেস বিভিন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচার শুরু করত। সেই আসনেই এখন কংগ্রেসের অবস্থা এতটাই করুণ যে উপনির্বাচনে পাঁচ নম্বরে শেষ করতে হয়েছে।
বিজেপির অবস্থাও বেশ দুর্বল এই আসনে। কিন্তু তাতে কংগ্রেসের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
উপজাতিদের বিশ্বাস হারিয়েছে কংগ্রেস
ভোট অঙ্ক
এনসিপি নেতা প্রফুল প্যাটেল জানিয়েছেন যে বিরোধীরা এক জোট হলে বিজেপিকে হারানো যাবে। কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন যে শিবসেনা সেই জোটে অংশগ্রহণ করবে কিনা কারণ শিবসেনা বর্তমানে সরকারে রয়েছে।
পালগড়ের ফলাফল দেখে শিবসেনা নিশ্চয়ই তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করছে। আর সরকারে থাকবে না কিনা তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে শিবসেনা। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে বসে শিবসেনাকে অঙ্ক কষতে হবে। না হলে পালগড়ের পুনরাবৃত্তি এড়ান যাবে না।
একই ভাবে কংগ্রেস ও এনসিপির বোঝা উচিৎ যে শিবসেনা যদি এক লড়াই করে তাহলে তাদের বাড়া ভাতেও ছাই পড়তে বাধ্য।