শুধুমাত্র জ্বালানির দামের উপর পরিবহণের ভাড়া নির্ভর করতে পারে না
ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্রেফ ধর্মঘট প্রত্যাহারের কৌশল, কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানসূত্র নয়
- Total Shares
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বাড়ছে বেসরকারি বাস ও মিনি বাসের ভাড়া। এমনকি ট্যাক্সি ভাড়া বৃদ্ধিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে শর্তসাপেক্ষে। এবার থেকে ডায়নামিক ভাড়ার ব্যবস্থা করতে চলেছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, এবার থেকে জ্বালানির দামের উপর নির্ভর করবে বাস, ট্রাক্সি ও মিনিবাসের ভাড়া। জ্বালানির দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়বে, আবার কমলে ভাড়াও কমবে।
পরিবহণ দপ্তরের তরফ থেকে এখনও অবধি এই ডায়নামিক ভাড়া ব্যবস্থার অনুপাত সম্পর্কে কিছুই জানান হয়নি। অর্থাৎ, জ্বালানির দাম কত থাকা কমলে বা বাড়লে ভাড়া ঠিক কতটা কমবে বা বৃদ্ধি হবে। শুধুমাত্র বলে হয়েছে যে আপাতত প্রতি স্টেজে বাস ভাড়া এক টাকা করে বাড়বে।
এখনও অবধি নতুন ভাড়া কবে থেকে কার্যকর করা হবে তাও ঠিক হয়নি। আশা করা যায় নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার আগে ডায়নামিক ভাড়ার অনুপাত নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হল শুধুমাত্র জ্বলানির দামের উপর নির্ভর করেই বাস ও ট্যাক্সি ভাড়ার ওঠা-নামা কি ঠিক করা সম্ভব?
পরিবহণ মালিকরা খুব ভালো করে জানেন, তা সম্ভব নয়। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা সর্বদাই বলে থাকেন যে শুধু জ্বলানি নয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম, সিএফের খরচ ও রোডট্যাক্সের পরিমাণ। তা হলে শুধুমাত্র জ্বলানির উপর ভাড়া ওঠা-নামা করবে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নিচ্ছেন কী ভাবে?
আসলে তাঁদের পরিস্থিতিটা বর্তমানে শাঁখের করাতের মতো। এগোলেও বিপদ, পিছোলেও বিপদ।
শুধুমাত্র জ্বলানির দামের উপর নির্ভর করেই পরিবহণ ভাড়ার ওঠা-নামা কি ঠিক করা সম্ভব?
২০১১ সালে সরকার গঠন করেছিল তৃণমূল সরকার। বাস মিনিবাস ও ট্যাক্সি মালিকদের সংগঠনগুলি আশা করেছিল যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসা মানে তাঁদের যাবতীয় দাবি এবার খুব সহজেই মেনে নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। আশা করে তাঁরা খুব একটা ভুল করেননি। বস্তুতপক্ষে, প্রায় প্রতিটি সংগঠনের মাথাতেই তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা রয়েছেন। সুতরাং তাঁদের মনে ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে এ বার সরকার কোনও মতেই তাঁদের দাবি থেকে টলাতে পারবে না।
কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারলেন। তৃণমূল সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি নীতি পরিষ্কার করে দেওয়া হল - আমজনতার খরচের বোঝা বাড়তে দিতে চায় না সরকার। সুতরাং, সরকার বেসরকারি পরিবহণে ভাড়া বৃদ্ধি করতে রাজি নয়।
সেই সময় তৃণমূলের এক বিধায়ক একটি বাস মালিকদের সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। স্বার্থের সংঘাত হতে পারে, এই অজুহাতে রাতারাতি সেই বিধায়ক বাসমালিকদের সংগঠন থেকে পদত্যাগ করলেন। তাঁর পদত্যাগপত্র আজও গৃহীত হয়নি, বাতিলও হয়নি। সুতরাং তিনি সংগঠনের পদে আদৌ আছেন কিনা, নাকি তিনি সেই পদে আর নেই সে বিষয় এখনও কেউ নিশ্চিত নন।
একই অবস্থা একটি ট্যাক্সির মালিকদের সংগঠনের ক্ষেত্রেও। সংগঠনের নিয়মানুযায়ী রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী পদাধিকার বলে সেই সংগঠনের সভাপতি হবেন। স্বার্থের সংঘাতের অজুহাতে সেই সংগঠনের সভাপতি পদটি আজও ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
তৃণমূল আমলে বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সি ভাড়া মাত্র এক বার বেড়েছিল
তৃণমূল আমলে বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সি ভাড়া মাত্র এক বার বেড়েছিল। দীর্ঘ টালবাহানার পর ২০০৮ সালের ৩১ অক্টোবর। তার পর আবার যে কে সেই। মধ্যবর্তী সময়ে জ্বলানির খরচ (পড়ুন ডিজেলের) লিটার প্রতি প্রায় ২০ টাকাও বেশি বেড়েছে। কিন্তু বেসরকারি পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি পায়নি।
তাই তো বাস মালিকদের সংগঠনগুলো ডায়নামিক ভাড়া নিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন না।
মালিক সংগঠনগুলো চেয়েছিল প্রতি স্টেজে অন্তত তিন টাকা করে ভাড়া বাড়ুক। কিন্তু তার জায়গা সরকার মাত্র ১ টাকা করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এত দিন বাদে প্রতি স্টেজে এক টাকা করে ভাড়া বাড়ছে এতেই খুশি বাস মালিকেরা। তাঁদের কাছে এখন নেই মামার থেকে কানামামাও ঢের ভালো। পরিবহণ মন্ত্রীর আশ্বাসে বুধবারের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাস ও মিনিবাস সংগঠনগুলি। ট্যাক্সি সংগঠনগুলোও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৮ জুনের প্রস্তাবিত ট্যাক্সি ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
কিন্তু এই সমাধান সূত্র তো সাময়িক। কোনও মতেই দীর্ঘস্থায়ী নয়।