লোকসভা ২০১৯: ভেবেচিন্তে হিন্দুত্ব নিয়ে এগোতে হবে বিজেপি
হিন্দুত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে, তা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে
- Total Shares
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের জন্যে বিজেপি যে 'মিশ্র স্ট্র্যাটেজি' নিতে চলেছে তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তাদের এই স্ট্রাটেজি মূলত বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল হবে। এছাড়া বিজেপির নিজস্ব 'হিন্দুত্ব' কার্ড তো রয়েছেই। যদিও তা নিয়ে এখনও কোনও উচ্চবাচ্য করছে না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও দলের নেতা নেত্রীদের পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন কখনই বিপদসীমা অতিক্রম না করেন।
এই আভাসগুলো বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে পাওয়া যাচ্ছে যাঁরা ২৮শে আগস্ট কর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দলের জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিজেপির জাতীয় সদরদপ্তরে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
অসমের এনআরসি ও গোহত্যা এই দুটি বিষয় যে বিজেপির হিন্দুত্বের স্লোগানে জোয়ার আনবে তা বলাইবাহুল্য। দেশের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এর পর রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির সদরদপ্তরে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী [ছবি: পিটিআই]
যেমন ধরুন, ২০১২ সাল থেকে প্রায় ৭০০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী আলীগড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গুজব ছড়িয়েছে যে তারা সেখানে একটি মাদ্রাসা চালাচ্ছে। লোকমতে, এই রোহিঙ্গারা যখন ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে কলকাতায় আসেন তখন উত্তরপ্রদেশের শাহারানপুর জেলার দিওবন্দের একটি মাদ্রাসা তাদের সে অঞ্চলে আশ্রয় দেন। নির্বাচনের সময় এ নিয়ে প্রচারও করেছিল বিজেপি।
সন্দেহজনক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী মধ্য ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি যে এই বিষয়টিকে নিয়েও ইস্যু করবে তা একপ্রকার নিশ্চিত।
উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি প্রতিটি নির্বাচনেই মোদী তাঁর হিন্দুত্বের কার্ড খেলেছেন। যেমন ধরুন ২০০৫ সালে গুজরাট পৌর নির্বাচনে কংগ্রেসের মেয়র আনিজা মির্জাকে উদ্দেশ্য করে মোদী বলে ছিলেন, "আহমেদাবাদে বেগম-বাদশাহর শাসন বন্ধ করবার সময় এসে গিয়েছে।" মোদীর এই বক্তব্য কিন্তু কাজ দিয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক [ছবি: পিটিআই]
যদিও, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যে কোনও নেতাই যেন হিন্দুত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে বসে। বিজেপির আশঙ্কা, বাড়াবাড়ি করলে লোকের মনে ধারণা জন্মাতে পারে যে প্রশাসনিক কাজকর্মের ব্যর্থতা ঢাকতেই বিজেপি হিন্দুত্ব সেন্টিমেন্ট নিয়ে সরব হয়েছে। আর, তাতে ফল হিতে বিপরীত হতে পারে।
এর ফলে কংগ্রেস লাভবান হয়ে পড়তে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রবেশ করলেন নরেন্দ্র মোদী [ছবি: পিটিআই]
গিরিরাজ সিং, সাক্ষী মহারাজের মতো কিছু বিজেপি নেতা নেত্রী ইতিমধ্যেই মুসলমান-বিরোধিতা করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে যেমন বিজেপি নেতৃত্বকে দেখা গিয়েছে যে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে দিয়ে রামনবমীর মিছিল বের করে অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি করতে।
তাই খুব ভেবেচিন্তে হিন্দুত্ব নিয়ে আসরে নামতে হবে বিজেপিকে। প্রায় চার বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তাই বিজেপিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। হিন্দুত্ব নিয়ে কোথাও কোনও গন্ডগোল বাধলে তা কিন্তু প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের ৩৫এ ধারা সংক্রান্ত ও বাবরি মসজিদ রাম মন্দির সংক্রান্ত মামলার রায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় পৌছিয়ে দিতে পারে বিজেপিকে। ওই দুই মামলা বিজেপির কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই আবার হিন্দুত্বের ঢেউ তুলতে পারে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে