লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: জোট গঠনে কংগ্রেসের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি
অসন্তুষ্ট শরিকদের মন জয় করে পুনরায় জোট গড়তে সফল বিজেপি, যে জোট তাদের ২০১৪তে ক্ষমতায় এনেছিল
- Total Shares
সংসদীয় রাজনীতিতে রসায়নের চাইতে অঙ্কের প্রয়োজন বেশি। তাই তো, দুই জাতীয় দল - বিজেপি ও কংগ্রেসের - জোটবন্ধন খুবই গুরত্বপূর্ন।
তবে, এই মুহূর্তে বিজেপির স্ট্রাটেজি ও বিরোধী শিবিরের স্ট্রাটেজির মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যাচ্ছে।
শিবসেনা, অকালি দল ও আপনা দলের মতো অসন্তুষ্ট শরিকদলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় মজবুত করার জন্য বিজেপির মধ্যে একটা সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে।
স্বভিমান হজম করে নিয়ে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার মন জয় করতে পেরেছে বিজেপি। বিহারে বিজেপি মাত্র ১৭টি আসনে প্রার্থী দিতে রাজি হয়েছে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে জয়লাভ করা ২১টি আসনের থেকেও চারটি কম আসনে। এসপি, বিএসপি ও আরএলডির জোটের চাপে পড়ে বিজেপিকে ওম প্রকাশ রাজভর ও অনুপ্রিয় প্যাটেলের আপনা দলের সঙ্গে সমঝোতা করে নিতে হয়েছে। পাঞ্জাবেও, দু'মাস ধরে চলা চাপানউতোরের পর, বিজেপি তাদের বহু পুরোনো শরিক দল অকালি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় রাজি হয়েছে।
অসন্তুষ্ট শরিক দলগুলোর মন জয় করতে পেরেছে বিজেপি [ছবি: পিটিআই]
এবার আসা যাক বিরোধী শিবিরের কথায়। বিরোধী শিবিরের ছবিটা একেবারেই ভিন্ন।
বেঙ্গালুরু ও কলকাতায় সম্প্রতি যে বিশাল সমারোহ দেখা গিয়েছিল তার কোনও প্রভাব এখনও অবধি বাস্তবে ধরা পড়েনি। বিরোধী দলগুলো এখনও অবধি জোটবদ্ধ হতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই লড়তে চান। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে নারাজ মায়াবতী। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের যে আসনগুলো কংগ্রেসের দখলে সেই আসনগুলোতে আবার এসপিকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে চান মায়াবতী।
কংগ্রেস দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে। বিহারে অবশ্য আরজেডি ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে - জিতিনরাম মাঝি ও উপেন্দ্র কুশোবাহের সঙ্গেও আসন সমঝোতা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কর্নাটক ও ঝাড়খণ্ডে এখনও কংগ্রেস ও তার শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে।
এই সমস্যার মূল কারণ নিজেদের দুর্গে কংগ্রেস ও শরিক দলগুলো একে অপরকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ।
কলকাতার বিরোধী মঞ্চের প্রভাব এখনও বিরোধী শিবিরের জোট রাজনীতির উপর পড়েনি [ছবি: পিটিআই]
মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিএসপি ও এসপিকে কোনও জায়গা দেয়নি কংগ্রেস। তাই, দুটি দলই, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে জায়গা ছাড়তে চাইছে না। একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একমাত্র মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে জোট প্রক্রিয়া কিছুটা সফল হয়েছে। এই দুই রাজ্যে কংগ্রেস ও শরিক দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে ডিএমকের সঙ্গে জোট গঠন করতে পেরেছে কংগ্রেস [ছবি: পিটিআই]
কংগ্রেস যখন এখনও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন লড়াই করে চলেছে, তখন বিজেপি কিন্তু শরিক দলগুলোর জন্য জমি ছাড়তে রাজি হয়েছে যাতে জোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।
দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক বুঝতে পেরেছে, এবার আর শুধু মোদীর উপর নির্ভর করলে চলবে না। তাদের শরিক দলগুলোকে নিয়ে একটা শক্তিশালী জোট গড়তে হবে। যে জোট ২০১৪ সালে বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল।
জোট গঠনের রাজনীতিতে এখন অনেকটা এগিয়ে বিজেপি [ছবি: রয়টার্স]
বিরোধী দলগুলোর থিঙ্কট্যাঙ্ক অবশ্য মনে করছে যে প্রাক নির্বাচনী জোট গড়তে ব্যর্থ হওয়ার প্রভাব কিন্তু নির্বাচনের পরে জোটগঠন প্রক্রিয়ার উপর পড়বে না। একটা সময় কিন্তু বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে একের-বিরুদ্ধে-এক ফর্মুলায় ভোট করতে চেয়েছিল, যাতে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হয়ে যায়। বিরোধীরা কিন্তু সেই লক্ষ থেকে এখন অনেকটাই দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে