বিজেপির ডাকা বুধবারের বনধ অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে
বাংলা বনধ, বিজেপি, তৃণমূল, গুলিতে ছাত্রের মৃত্যু
- Total Shares
ঘটনার পরের দিন বা একদিন পরে নয়, এক সপ্তাহ পরে বনধ। রাজ্য বিজেপির এই পদক্ষেপ থেকে একটি ব্যাপার স্পষ্ট, এখনও তাদের উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। গুলিতে ছাত্রের মৃত্যুর মতো স্পর্শকাতর ঘটনা, তাও আবার বিনা প্রয়োজনে যেখানে উর্দু ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। তাতেও বনধ ডাকতে এক সপ্তাহ লেগে গেল।
নিহত ছাত্রের বাড়িতে বিজেপি নেতা
বিজেপির সিদ্ধান্তহীনতা
রাজ্যে ইস্যুর অভাব নেই, কিন্তু বিজেপি সে সব ধরেও ধরতে পারে না। হিন্দু ভোট তাদের দিকে, তবুও বাংলার নাড়ি বুঝতে পারার মতো লোক এখনও নেই। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নেই, কলকাতা জতুগৃহ, একের পর এক সেতু ভাঙছে, ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ-গুলি... তাতেও তাদের আন্দোলনের কোনও অভিমুখ নেই। যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ও সিদ্ধান্তহীনতাই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের বড় অন্তরায়।
দেরিতে হলেও বিজেপি বুঝেছে যে শক্তি যাচাই করার এটাই সেরা সময়। লোকসভা ভোট হতে মাস ছয়েক বাকি, কাগজে-কলমে তাদের সদস্য যতই হোক, মাঠে নেমে লড়াই করার মতো ক্ষমতা আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য এটাই মোক্ষম সময়। পুরো রাজ্যে না হোক, যে সব আসনে তারা জয়ের স্বপ্ন দেখছে সেই সব লোকসভা কেন্দ্র ধরে হরতাল সফল করতে পারাটাই তাদের কাছে হবে বড় জয়।
শাসকদলের চ্যালেঞ্জ
এক তৃতীয়াংশ গ্রামপঞ্চায়েত আসনে যে রাজ্যে বিরোধীরা প্রার্থীই খুঁজে পায়নি সেই রাজ্যে বনধ যদি একতৃতীয়াংশও সফল হয় তা হলেও তাদের মুখ পুড়বে। রাজ্যে সরকারি সংস্থাগুলিতে উপস্থিতির হার যে ১০০ শতাংশ থাকবে, কলকাতা শহরে বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস চলবে, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় উপস্থিতির হার স্বাভাবিক থাকবে। তবে প্রশ্ন হল, স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কী হবে?
এই ইস্যুতে ক্ষমতা দেখাতে চাইছে বিজেপি
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসা ইস্তক এই প্রথম বিজেপির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বামেদের জনসমর্থন কমে যাওয়ায় তাদের ডাকা হরতালের গুরুত্ব প্রায় নেই, এ রাজ্যে কংগ্রেস এখন অস্তিত্বসঙ্কটে ভুগছে। তাই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, মানে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ডাকা হরতালের কোনও প্রভাব এ রাজ্যে পড়েনি।
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে বামেদের ডাকে প্রথম যে হরতাল হয়েছিল তা সরকারি অফিসে উপস্থিতির হার দিয়ে বিচার করলে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক, তবে যাঁরা পথেঘাটে বার হন তাঁরা জানেন যে সেই বনধ ছিল সর্বাত্মক। তার কারণও ছিল, বনধের দিনে কেউই ঝামেলায় জড়াতে চান না, তা ছাড়া বনধ মানে অঘোষিত ছুটি, সেটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে (তাতে গণতন্ত্রের লাভ হয়েছে নাকি লোকসান, কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে নাকি তার বদলে একদিন ছুটি দিয়ে কর্মসংস্কৃতি শব্দটাকেই হাস্যকর করে তোলা হয়েছে সে সব ভিন্ন প্রসঙ্গ) বনধ সংস্কৃতিটাকে বন্ধ করে দিতে পেরেছেন, যাতে তাঁর রাজনৈতিক লাভ হয়েছে।
শাসক বনাম বিরোধী
বিজেপির ডাকা হরতালে কংগ্রেস ও সিপিএম পাশে নেই, সেটাই স্বাভাবিক। প্রথমত তারা বিজেপির ছোঁয়া এড়াতে চায় বলেই এই বনধে সমর্থন করতে পারবে না, দ্বিতীয়ত বনধ সফল করার মতো ক্ষমতা এখন তাদের নেই। তাই বিজেপি একাই হরতালের ডাক দিয়েছে। এই হরতাল এখন শাসক তৃণমূল কংগ্রেস বনাম এইমুহূর্তে তার বিরোধী হিসাবে উঠে আসা বিজেপির মুখোমুখি লড়াই, এমন লড়াই এই প্রথম।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়: সর্বশক্তি দিয়ে বনধ ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে শাসকদল (ফাইল চিত্র)
এই বনধ যদি বিজেপি আংশিক ভাবেও সফল করতে পারে, তা হলে শাসকদলের কাছে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পরাজয়। গ্রামাঞ্চলে যদি বিজেপি বনধ সফল করতে পারে তা হলে সেটাই হবে এ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন – যেখানে বিরোধীরা প্রার্থীই খুঁজে পায়নি সেখানে বনধ!
লড়াইয়ে আগেই কারাবরণ না করে এই বনধে যদি বিজেপির দু-একজন শীর্ষনেতা বনধ সফল করতে গিয়ে আহত হন (যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছিলেন) তা হলে তাদের সমর্থকদের মনে হবে যে এই দলের নেতারা পথে নেমে লড়াই করেন। তাতে বিজেপির লাভই হবে। নীচুতলার যে সব কর্মী এখনও ভাবছেন যে বিজেপিতে যোগ দিলে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন কিনা, তাঁরাও এই বনধের দিকে তাকিয়ে।
বুধবারের বনধ অনেকগুলো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দেবে।