বিহারে রাজনীতির নতুন অঙ্ক: জাত-পাত-ধর্মের ভোটব্যাঙ্কের হিসেবে কষলে এগিয়ে মহাগটবন্ধন
সম্প্রতি বিহারে গিয়ে লক্ষ করলাম তেজস্বী যাদবের জনপ্রিয়তা বেড়েছে
- Total Shares
সম্প্রতি, বিহারে তৃণমূল স্তরের কয়েকটি কাজ করার সময়ে একটা বিষয় লক্ষ করেছিলাম - রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম, মহকুমা ও শহরের লোকজন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) দলটির শীর্ষ নেতা লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই তেজস্বীর সুমধুর ভাষণ, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা নিয়ে মুগ্ধ।
মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছিল, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে আরজেডি ও সম্ভাব্য মহাগঠবন্ধনের উপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। যখনকার কথা বলছি তখনও মহাগটবন্ধনের প্রক্রিয়া পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়নি। কিন্তু লোকে বলছিল, "মহাজোট হলেই ভালো হয়।" এর মানে, মহাজোট তৈরি হওয়ার আগেই লোকে বুঝেছিল যে আসন্ন নির্বাচনের লড়াইটা মূলত মহাজোট বনাম এনডিএ হতে চলেছে।
শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে এই মহাজোট গঠিত হল। আরজেডি ছাড়াও উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএলএসপি), জিতেন রাম মাঁঝির নেতৃত্বাধীন হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা ও শরদ যাদবের জেডিইউ(এস) এই জোটে রয়েছে। রাজ্যের বাম দলগুলোও এই জোটের শরিক হয়েছে।
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তেজস্বী যাদব [সৌজন্যে: ফেসবুক]
আমরা জানি জাত ও সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি দলেরই নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। জোট তৈরি হওয়া মানে প্রতিটি ভোট ব্যাঙ্ক এসে এক জায়গায় মিলিত হবে।
এবার যদি বিহারের মহাগটবন্ধনের ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে সমাজের সকল শ্রেণীর ভোট ব্যাঙ্কই এই জোটের ঝুলিতে রয়েছে। যাদব থেকে কুশওয়াহা, মুশার থেকে জাতভ (সবই নিম্নবর্ণীয়, শেষ দুটি আবার হরিজন সম্প্রদায়ের) এবং ব্রাহ্মণ - এই জাত বা সম্প্রাদয়ের উপর জোটের শরিক দলগুলোর ভোটব্যাঙ্ক নির্ভর।
এনডিএ জোটে বিজেপি নিজেকে 'সর্বজনের দল' বলে সম্বোধন করে। কিন্তু বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক মূলত উচ্চবর্গীয় ভূমিবিহারি, কায়স্থ, ঠাকুর ও বৈশ্যদের উপর নির্ভর করে রয়েছে। নীতিশ কুমারের জেডি(ইউ)র অবশ্য ভূমিবিহারি, ঠাকুর ও ব্রাহ্মণদের পাশাপাশি কুর্মি ভোটব্যাঙ্কও রয়েছে। রামবিলাস পাসোয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টির প্রধান অস্ত্র দুসাধদের ভোট ব্যাঙ্ক।
এর মানে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বর্ণের লোক, যেমন ব্রাহ্মণ, কিন্তু এনডিএ ও মহাগঠবন্ধন দুই দিকেই ভোটদান করতে পারে। কিন্তু মুশারের মতো দলিতরা কিন্তু মাঁঝির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা ভিন্ন আর কোনও দলকেই ভোট দেবে না।
উপেন্দ্র কুশওয়াহার আরএসএলপি এনডিএ ছেড়ে মহাগঠবন্ধনে যোগ দিয়েছে [ছবি: পিটিআই]
একই ভাবে আরও একটি দরিদ্র জাতি কৈরীরা উপেন্দ্র কুশওয়াহাকেই ভোট দেবে। রাজ্যে পিছিয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে মহাগটবন্ধন। এ ছাড়া কয়েকটি উচ্চবর্ণের লোকও আরজেডি বা জোটের অনুকূলে ভোট দেবে।
এর পর আসছে রাজ্যের মুসলমান ভোটের প্রসঙ্গ।
এ ধর্মের বিভিন্ন লোকেদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। রাজ্যের মুসলমান ধর্মালম্বী ভোটারদের অধিকাংশই মহাগটবন্ধনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। এর কারণ, জোটে কংগ্রেস ও আরজেডির উপস্থিতি। নীতীশ কুমারও মুসলমান সমাজে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার ফলে তিনি ক্রমশই মুসলমানদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
নীতীশ কুমার তাঁর সুসানের জন্যে জনপ্রিয় [ছবি: পিটিআই]
এর ফলে, বিহারের জাত-পাত-ধর্মের ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে হিসেবে কষতে বসলে দেখা যাচ্ছে মহাগঠবন্ধনের পক্ষে পাল্লা ভারী।
রাজ্যের শেষ কয়েকটি নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিই নির্বাচনী ভাগ্য ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু এবার নীতীশ কুমারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে বিহারের আমজনতা।
রাজ্যে যে পরিমাণে হিংসা ও অপরাধ বেড়ে চলেছে তা তাঁর সুশাসনের দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছে। নীতীশ অবশ্য সুশাসনের জন্যেই জনপ্রিয় ছিলেন যিনি লালুর আমলের 'গুন্ডারাজ' একেবারে শেষ করে দিয়েছিলেন। এখনও সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের জন্যে নীতীশের গুনগান করা হয়। কিন্তু রাজ্যে তার চেয়েও বেশি আলোচনা হয় রাজ্যে উত্তরোত্তর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে।
সম্প্রতি তেজস্বী যাদব রাজ্যজুড়ে তাঁর 'ন্যায় যাত্রা' শেষ করলেন। এই যাত্রাকালে বিহারের এক বড় অংশের মন তিনি জয় করতে পেরেছেন। তাঁর জনসভায় উপস্থিতিদের অধিকাংশই রাজ্যের তরুণ ভোটাররা। এর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের আভাস কী কিছু পাচ্ছেন?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে