মহাজোটে ফাটল: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মায়াবতী কেন কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন

সাদাচোখে যা দেখা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশিই বার্তা দিলেন বিএসপি নেত্রী

 |  3-minute read |   14-09-2018
  • Total Shares

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কংগ্রেসের ডাকা ভারত বনধে বিরোধী শিবিরের ফাটলটা আরও বেশ করে স্পষ্ট করে দিল।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তখন তাঁর বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছিল যে বিরোধী ঐক্যের জন্যই এই মঞ্চটিকে ব্যবহার করছেন তিনি।

সমস্ত বিরোধীদল কী ভাবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে তাঁর বক্তৃতায় এই বিষয়টি একাধিকবার উল্লেখ করে ছিলেন তিনি।

এই ধর্মঘট বিজেপিকে ব্যাকফুটে ফেলে দিলেও, বিরোধী শিবিরে যে সব কিছু ঠিকঠাক নেই তাও প্রমাণ করে দিল।

body_091418061312.jpgধর্মঘট ডেকে বিরোধী ঐক্য প্রমান করতে চেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী [ছবি: পিটিআই]

বিএসপি নেত্রী মায়াবতী যেমন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও দায়ী করেছেন। ২০১০ সালে পেট্রোলের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার জন্যে তিনি কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ - কংগ্রেসের একের পর এক ভুল আর্থিক প্রকল্পকে প্রত্যাহার না করে সেগুলোকেই বজায় রেখেছে বিজেপি।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএসপি নেত্রী কি শুধুমাত্র কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের ভুল প্রকল্পগুলোর কথা বলতে চাইছিলেন? না, কি উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্ত্যবের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেসকে অন্য কোনও বার্তা পাঠাতে চাইছিলেন?

সাদাচোখে যা ধরা পড়ছে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছুই মায়াবতীর বার্তায় ছিল।

২০১৮ সালের নভেম্বরে বিজেপিশাসিত রাজস্থান, ছত্তীসগড় ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। এই রাজ্যগুলোতে বিএসপি ও কংগ্রেসের মধ্যে কী ভাবে আসন ভাগাভাগি হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দুই দলের মধ্যেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।

body1_091418061428.jpgরাজস্থান রাজ্য কংগ্রেস বিএসপির সঙ্গে জোট চায় না [ছবি: রয়টার্স]

কংগ্রেসের হিসাব অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের লাগোয়া মধ্যপ্রদেশের ২৫টি আসনে বিএসপি ভালো ফল করতে পারে। রাজ্যের বুন্দেলখণ্ডে অঞ্চল তফশিলি জাতির প্রাধান্য বেশি। তাই মধ্যপ্রদেশে বিএসপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে লাভবান হবে কংগ্রেস।

এ ছাড়াও, ছত্তিশগড়েও বিএসপির সঙ্গে জোট বাধার পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের। সমস্যা রয়েছে রাজস্থানে।

যদিও কংগ্রেসের দিল্লির নেতানেত্রীরা রাজস্থানেও বিএসপির সঙ্গে জোট বাঁধতে চান, রাজস্থান কংগ্রেসের রাজ্যনেতারা অবশ্য তাঁদের রাজ্যে মায়াবতীকে জায়গা দিতে নারাজ।

রাজস্থানে তফশিলী জাতির ভোট মোটামুটি ১৭ শতাংশ এবং বরাবরই এই রাজ্যে তফশিলি জাতির ভোটারদের প্রথম পছন্দ কংগ্রেস। শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বিএসপি ১৮২ জন প্রার্থী দিয়ে মাত্র তিনটি আসনে জিততে পেরেছিল। দলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৩.৩৭ শতাংশ।

রাজস্থানের কংগ্রেস সভাপতি সচিন পাইলট ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে রাজ্যের প্রতিটি আসনে বিজেপিকে একা হারাবার ক্ষমতা রাখে কংগ্রেস। সুতরাং অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোটের প্রশ্ন এই মুহূর্তে উঠছে না।

২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যে ২০০টির মধ্যে ১৬৫টি আসনে জয়লাভ করেছিল। বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৫.২ শতাংশ। অন্যদিকে, কংগ্রেস ৩৩.১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১টি আসনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু এই নির্বাচনে বসুন্ধরা রাজের সরকারের জন্যে আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।

কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় ভরসা রাজ্য বিজেপির মধ্যে অন্তর্কলহ। কংগ্রেসের দাবি যে খুব ভুল নয় তা রাজ্যের উপনির্বাচনগুলোর ফলাফল থেকেই পরিষ্কার। শেষ চার বছরে ২২টি আসনের উপনির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি আসন কংগ্রেস পেয়েছে।

উল্টোদিকে, রাজ্যের ৩৮টি তফশিলি জাতি অধ্যুষিত আসন এখন পাখির চোখ দেখছেন মায়াবতী। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধলে এই আসনগুলো জেতার সম্ভাবনা যে অনেকটাই বেড়ে যাবে, তা বলাইবাহুল্য।

কংগ্রেস থিঙ্কট্যাঙ্কের বর্তমান সমস্যা এই যে কংগ্রেস যদি রাজস্থানে মায়াবতীর দাবি মেনে না নেয় তাহলে এর প্রভাব ২০১৯ লোকসভার সময় উত্তরপ্রদেশে আসন ভাগাভাগির সময় পড়বে।

উত্তরপ্রদেশে ৮০টি লোকসভা আসন, তাই এই রাজ্য থেকে খালি হাতে ফিরতে চাইছে না কংগ্রেস।

body2_091418061538.jpgরাজস্থানে বিজেপির প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে [ছবি: পিটিআই]

মহাজোটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশের উপর আর এই রাজ্যে মায়াবতীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।

২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বিএসপি ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি (৪৩.২ শতাংশ) ও সমাজবাদী পার্টির (২২.২ শতাংশ) পিছনে তিন নম্বরে শেষ করেছিল। যদিও বিএসপি একটি আসনেও জিততে পারেনি।

মোদী হাওয়া এখন অনেকটাই কমেছে। তফশিলি জাতি ও উপজাতির বিরুদ্ধে হয়ে চলা অপরাধগুলোকে হাতিয়ার করে আবার রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন মায়াবতী।

তাই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করে এই বার্তাই দিলেন যে বিএসপিকে এখন আর হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না।

কংগ্রেস যদি সত্যি সত্যি ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বধীন বিজেপিকে হারাতে চায় তাহলে মায়াবতীর মতো আঞ্চলিক নেতা নেত্রীদের সঙ্গে নোয়েই চলতে হবে। এটা না করতে পারলে আসন সমঝোতায় কিন্তু মুশকিলে পড়তে হতে পারে কংগ্রেসকে।

বিজেপিকে জায়গা না দিয়ে যদি ভারতের রাজনীতিতে পুনরুত্থান করতে চায় কংগ্রেস তাহলে আঞ্চলিক দলগুলোকে হেলাফেলার করা এই মুহূর্তে উচিৎ কাজ হবে না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAIF ULLAH KHAN SAIF ULLAH KHAN @saifizm

Deputy Editor, DailyO

Comment