ইতিহাসের অদ্ভুত পরিহাস: রাজ্যে সিবিআই তদন্ত আটকে দিলেন মমতা

নিজের, নিজের পরিবার ও তৃণমূলের মাতব্বরদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে নির্দেশিকা প্রত্যাহার

 |  2-minute read |   18-11-2018
  • Total Shares

ইতিহাসের অদ্ভুত পরিহাস। এক সময় যিনি পান থেকে সামান্য একটু চুন খসলেই সিবিআই তদন্ত চাইতেন, এমনকি যখন পান বা চুন কিছুই থাকত না, তা হলেও ভিত্তিহীন সংবাদের উপরে নির্ভর করে সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন সরকারকে অপদস্থ করার জন্য, এখন তিনিই উল্টো পথে হাঁটছেন। তখন তিনি ছিলেন কেন্দ্রের প্রতিনিধি।

cbi_reuters_111818030729.jpegবাম আমলে রাজ্যে সিবিআইকে যে ফ্রি অ্যাকসেস দেওয়া হয়েছিল তা বন্ধ করতে নির্দেশিকা জারি করেছেন মমতা (ফাইল ছবি: রয়টার্স)

আমাদের কোনও দিনই কোনও কিছু হারাবার কোনও ভয় ছিল না। সেই জন্যই সিবিআই যাতে প্রয়োজনমাফিক তদন্ত করতে করতে পারে, সেই প্রেক্ষিতে নির্দেশিকা দেওয়াই ছিল। আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটিকে বাতিল করেছেন এবং নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন। সকলেই তাঁর এই পদক্ষেপকে মাস্টারস্ট্রোক বলছেন।

আসলে তিনি অত্যন্ত ভীত, কারণ চুরি-জোচ্চুরি করে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ও তাঁর সরকার। সেই জন্যই তিনি এখন ভীত।

কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে যে টাকা দেয় (জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প বা ১০০ দিনের  কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, তপসিলি জাতি-উপজাতি এবং সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের বিভিন্ন বৃত্তি ও যোজনা) সেই সব টাকায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এতদিন আমরা অভিযোগ করলেও দিল্লির সরকার সেই সব অভিযোগের দিকে তাকিয়েও দেখেনি।

fotojet_1_111818031153.jpegঅন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু সিবিআইকে আটকেছেন শোনার সঙ্গে সঙ্গেই একই নির্দেশ দিতে উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই নির্দেশিকা জারি করেন (ইন্ডিয়া টুডে)

এখন ওঁর মনে হচ্ছে পুজোর সময় যে বার্তা উনি দিয়েছেন (ভোটের পরে যদি প্রয়োজন হয় তা হলে আমি আছি, বাজপেয়ীর সময়ে যেমন ছিলাম) তারপরেও কেনও ভাবেই ভরসা পাচ্ছেন না, ভয় পেলে যা হয়!

মনে আছে নোটবন্দির সময় জলপাই রঙের পোশাকের দু’জন সেনা আধিকারিককে টোল প্লাজায় দেখে হইচই শুরু করে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন বাড়িই ফিরবেন না। তখন তাঁর আশঙ্কা ছিল সারদা ও অন্য নানা ধরনের দুর্নীতির টাকা কে কোথায় কী ভাবে লুকিয়ে রাখবে তা নিয়ে, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। তবে দিল্লির সরকার নিজেই নোটবন্দির সময় দুর্নীতি করেছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ব্যাঙ্কও দুর্নীতি করেছে। তাই এসব কোনও ব্যাপারেই কোনওরকম তদন্ত হয়নি।

এখন ভোটের আগে সংবাদমাধ্যম বলছে যে সিবিআই সক্রিয় হচ্ছে (কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য তামাশাই করছে), রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে সিআইডি-কে ব্যবহার করছেন বা করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারও ওই একই রকম ভাবে সিবিআইকে পরিচালনা করছে। আমরা সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ আধিকারিক অলোক ভার্মা ও রাকেশ আস্থানার ঘটনাতে সেটাই দেখলাম।

cbi-hq_111818030835.jpgসিবিআই খাঁচায় বন্দি তোতা, এখন এ কথা মনে করছেন অনেকেই (রয়টার্স)

এই সব পরিস্থিতি দেখেশুনেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত আগের নির্দেশিকা প্রত্যাহার করছেন যাতে সিবিআই এ রাজ্যে কোনও তদন্ত না করতে পারে।

হাইকোর্টের কোনও নির্দেশ যদি থাকে বা ফৌজদারি কোনও অভিযোগ যদি থাকে তখন রাজ্য সরকার না চাইলে তার তদন্ত হয় না। তাই যাতে কোনও তদন্তই না হয়, তাঁর সমস্ত দুর্নীতি ধামাচাপা পড়ে সে জন্য একেবারে ব্যক্তিস্বার্থে (এর সঙ্গে রাজ্যের কোনও বিষয় বা রাজ্যের স্বার্থ কোনও ভাবেই জড়িত নয়), নিজের এবং নিজের পরিবার এবং সেই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের যারা মাতব্বর, তাদের দুর্নীতি আটকাতে বা ঠেকাতে নয়, দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন এই নির্দেশিকা জারি করা হল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MD SALIM MD SALIM @salimdotcomrade

Socio-political worker. Politbureau Member, CPI(M). MP from Raiganj, WB. Former General Secretary, DYFI. Out-of-Box thinker tempered with pragmatism.

Comment