সংসদীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক জ্বরে আক্রান্ত কেন বাংলদেশ

নির্বাচনে লড়তে পারবেন না প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া

 |  3-minute read |   04-11-2018
  • Total Shares

সংসদীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এরই মাঝে বেশ কয়েকটি নাটকীয় ঘটনার ফলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠছে।

৩০ অক্টোবর একটি ঐতিহাসিক রায়দানের মাধ্যমে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাস্তির মেয়াদ পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে দিয়েছে। এর ফলে, তিনি যে আর নির্বাচনে যোগ দিতে পারবেন না তা কাগজে কলমে নিশ্চিত হয়ে গেল।

ঘুরিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান বিরোধী এখন লড়াইয়ের বাইরে আর দেশের প্রধান বিরোধী দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টিকেও (বিএনপি) দলের একমাত্র জনপ্রিয় নেত্র্রীকে ছাড়াই নির্বাচন লড়তে হবে।

body_110418042327.jpgখালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়িয়েছে হাইকোর্ট [ছবি: রয়টার্স]

দলের অন্য এক শীর্ষ নেতা তারিক রেহমান (খালেদা জিয়ার পুত্র) বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। নির্বাচনের সময়ে তিনিও ঢাকাতে আসতে পারবেন না কারণ তাঁকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং সরকারি ভাবে তিনি এখন পলাতক।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে খালেদা জিয়াই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর আগেও তিনি জেল হেফাজতে ছিলেন। কিন্তু এবার তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ভোগ করছেন।

একটি অনাথ আশ্রমের মামলায় দেশের দুর্নীতিদমন কমিশনের সুপারিশে হাইকোর্ট এই রায় প্রদান করেছে। এই রায়দানের ফলের খালেদা ও বিনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এমনকি তাদের অস্তিত্বকেই সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়েছে। 

এরই ফাঁকে শাসক দল আওয়ামী লিগের নেত্রী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ নভেম্বর তাঁর বাসভবনে গণ ফোরাম নেতা ডক্টর কামাল হোসেনের সঙ্গে একটি সরকারি আলোচনায় যোগ দেন। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই কামাল হোসেন।

body1_110418042413.jpgনির্বাচনের আগে রানৈতিক পারদ চড়ছে বাংলাদেশে [ছবি: রয়টার্স]

এই বৈঠক অবশ্য হোসেনের অনুরোধে ডাকা হয়েছিল। তাঁর কয়েক দফা দাবি নিয়ে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আর্জি জানিয়েছিলেন হোসেন। নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে হোক নির্বাচন, বিচারব্যবস্থার পূর্ণ স্বাধীনতা, সংবিধানের ৭০ নম্বর ধারার কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে সাংসদদের মুক্তি দেওয়ার দাবি করেছেন হোসেন। এবং সর্বোপরি, খালেদা জিয়ার মুক্তিরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে তাঁর ঐক্য ফ্রন্টে পাশে পেয়েছিলেন হোসেন। কিন্তু সম্প্রতি মতের অমিল হওয়াতে চৌধুরী আর ঐক্য ফ্রন্টে নেই।

হোসেনের এই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি অবাক করে দেওয়ার মতো কারণ হাসিনার সামনে এই দাবি যে ধোপে টিকবে না তা বলাই বাহুল্য। সবচেয়ে বড় কথা এই হোসেন একটা সময়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা তথা দেশের প্রথম বিদেশমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

আর মুজিবের সঙ্গে তাঁর এই হৃদ্যতা বা আওয়ামী লিগের সঙ্গে তাঁর সুদীর্ঘ সম্পর্কের পর বিনেপি ও খালেদার প্রতি হোসেনের এই সমর্থন কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। হোসেন নিঃসন্দেহে সংবিধান বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তিনি নিজে কোনও দিনও তৃণমূলস্তরের রাজনীতি করেননি। এমনকি কোনও নির্বাচনেও জেতেননি। তিনি অমায়িক, সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তাঁর অগাধ জ্ঞানের জন্য বহু বিশ্ববরেণ্য নেতার সঙ্গে আলাপ আলোচনার গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল স্তরে তাঁর যা ট্র্যাক রেকর্ড তাতে তাঁর নির্বাচন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউই খুব একটা আশাবাদী নন।

body2_110418042513.jpgহাসিনার পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথটা কি পরিষ্কার [ছবি: রয়টার্স]

হাসিনার যা বিচক্ষণতা তাতে তিনি যে হোসেনকে বিন্দুমাত্রও জমি ছাড়বেন বা তা বলাই বাহুল্য।

এদিকে, বিকল্প ধারার নেতা তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীও নির্বাচন সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য হাসিনার কাছে সময় চেয়েছেন। তবে তিনি খালেদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক পরমার্শদাতাদেরও এই ধরণের আলোচনাতে যুক্ত করতে চাইছেন যাতে তাঁকে স্বৈরাচারী হিসেবে সমালোচিত না হতে হয়। তাঁর এই পদক্ষেপ অবশ্য তাঁর নিন্দুকদের এবং পশ্চিমী সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের রাস্তা প্রশস্ত করতে পারে।

১৯৭২ সালের রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল'স অর্ডারের ৯০এইচ (৪) ধারায় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জামাত-ই-ইসলামির (জেল) রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিয়েছে। অর্থাৎ, বিএনপির বহুদিনের দোসর জেল-কেও এই নির্বাচনে লড়তে দেখা যাবে না।

বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী দু'মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে আর ক্রমেই রাজনৈতিক জ্বরে আক্রান্ত হবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment