বাংলদেশের নির্বাচনের উপর দিল্লির কেন কড়া নজর রাখা উচিত

নির্বাচনে মৌলবাদী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিলে তার প্রভাব ভারতের নিরাপত্তার উপর পড়বে

 |  4-minute read |   20-12-2018
  • Total Shares

বাংলাদেশের একাদশ সংসদীয় নির্বাচনের আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক বাকি। আর, নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে হিংসার আশঙ্কা ততই প্রবল হচ্ছে।

সম্প্রতি, শহিদ মিনার থেকে ফেরার সময়ে জাতীয় ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক ও গণ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর কামাল হোসেনের গাড়ি লক্ষ করে আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা। এই আক্রমণের পরে খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে কামাল হাসান জানান, এই আক্রমণের ফলে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা হল। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীনও মেজাজ হারাতে দেখা যায় তাঁকে।

এখানে, উল্লেখ্য কামাল হোসেন এক সময় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হওয়ার পরে তিনিই দেশের প্রথম বিদেশমন্ত্রী হন।

কামাল হোসেন একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক মানের আইনজীবী। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গ ত্যাগ করে তিনি দুটি গুরত্বপূর্ণ দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন।

body_122018010012.jpgসম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম বিদেশমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেনের গাড়ির উপর আক্রমণ করা হয় [ছবি: রয়টার্স]

প্রথমত, তিনি সংসদ মুলতুবি করতে উৎসাহী। তাঁর দ্বিতীয় দাবি, খালেদা জিয়ার মুক্তি। বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছে প্রাক্তন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই দাবি থেকে একটা বিষয়ে পরিষ্কার - নিজেকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান কামাল হোসেন। তাঁর বয়স ৮০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে এবং শেষ কয়েক দশক ধরেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে চলেছেন।

তাঁর সামনে এখন মরণ-বাঁচন লড়াই -- এটাই হয়তো তাঁর শেষ সুযোগ।

খালেদা ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) প্রতি কামাল হাসানের সমর্থন অনেককেই অবাক করেছে। বিশেষ করে বিএনপি যেখানে জামাতকে সমর্থন করে। খবরের প্রকাশ, দলের সাংগঠনিক সচিব মতিউর রহমান আনন্দ দাবি করেছেন যে, এই নির্বাচনে ২৫ জন জামাত প্রার্থীকে নির্বাচনের টিকিট দেবে বিএনপি।

body1_122018010107.jpgদুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া [ছবি: রয়টার্স]

জামাত যে বরাবরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে এসেছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং স্বাধীনতার প্রাক্কালে জামাত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রচুর সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করেছিল। এই পরিস্থিতে বিএনপিকে সমর্থন করে কামাল হোসেন তাঁর শুরুর জীবনের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

এখানে একটা কথা বলে ফেলা উচিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেস সদস্য জিম ব্যাঙ্কস হাডসন ইনস্টিটিউটে এক বক্তৃতা করার সময় জামাত সম্পর্কে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, জামাতের মতো একটি মৌলবাদী সংগঠন সর্বদাই দেশের গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এই উপলব্ধি আবশ্যিক ভাবেই আমাদেরও শিক্ষা দেয়। পশ্চিমি দেশগুলোও জামাতের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অথচ, আমরা সব জেনেশুনেও শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে এই সংগঠনগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি।

body2_122018010249.jpgআইএসআই প্রধান নাভিদ মুক্তার: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বরাবরই মাথা গলায় আইএসআই [ছবি: এপি]

এর মধ্যে, পাকিস্তানের সঙ্গে বিএনপির যোগসাজশ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি একটি ফোনের রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে। এই রেকর্ডে বিএনপি নেতা খন্দকর মোশারফ হোসেনকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর এক আইএসআই এজেন্টের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গিয়েছে। ফোনে আইএসআই এজেন্টের কাছে নির্বাচনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন বিএনপি নেতা। সাহায্য বলতে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে অর্থ ও লজিস্টিক সাপোর্টের কথাই বলা হচ্ছিল।

এদিকে ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দেশের আইন অনুযায়ী যে সব অপরাধীর সাজার মেয়াদ দু'বছরের বেশি তারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে প্রচারেও ব্যবহার করতে পারবে না বিনেপি।

body3_122018010358.jpgঅনেকে মৌলবাদী সংঠনই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে চাইছে [ছবি: রয়টার্স]

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের মাথা গলানো নতুন কোনও বিষয় নয়। ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস এই কাজ প্রায়শই করে থাকে। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে পাকিস্তানের কূটনীতিক ও কর্মীদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধ নয় (persona non grata) ঘোষণা করে তাঁদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। 

এছাড়া বিনপির সঙ্গে আইএসআইয়ের হৃদ্যতা সকলেরই জানা। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা তারিক রহমানের সঙ্গেও আইএসআইয়ের গলায় গলায় ভাব। ধরে নেওয়া যাক, কামাল হোসেন ক্ষমতায় এলেন। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক যে আরও মধুর হবে তা বলাইবাহুল্য। এর ফলেপাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ভারত বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বাংলদেশের মাটিতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে।

তাই হাসিনা যাতে বিএনপি, পাকিস্তান ও আইএসআইয়ের যোগসাজস ব্যর্থ করে ক্ষমতায় ফেরেন তা নিশ্চিত করা উচিত ভারতের।

তাই নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে ততই হিংসা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জামাত, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, হিফাজত-এ-ইসলাম বা হিজবুত তেহেরের মতো মৌলবাদী দলগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে দিয়ে হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার প্রচেষ্টা ভেস্তে দিতে পারেন।

ধরে নেওয়া যায় যে জেনারেল আজিজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শাসক দলের সঙ্গেই রয়েছে এবং সুষ্ঠ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment