বাংলাদেশে ভোট: গণতন্ত্র কী ভাবে হারিয়ে গেল

নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ হলেও... সেই যুদ্ধ জনগণের আস্থা অর্জনের

 |   Long-form |   05-01-2019
  • Total Shares

একটি সুষ্ঠু অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা একেবারেই ছিল না বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভোটের দিন ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় যে ভাবে সংঘাত–সংঘর্ষ হয়েছে, বিরোধী দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের উপর হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ভোটের পরিবেশই শুধু ব্যাহত হয়নি, নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল।

নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ হলেও সেটা মারামারি-কাটাকাটি-রক্তপাত-আগুন লাগানোর লড়াই নয়, সেই যুদ্ধ জনগণের আস্থা অর্জনের। এ ক্ষেত্রে শাসকদল নেতা-কর্মী–সমর্থকদের থেকে সহনশীলতা প্রত্যাশিত। কিন্তু সরকারি দলের নেতা–কর্মীরা শুরু থেকেই ছিলেন বেপরোয়া। তাদের উপরেও হামলা হয়েছে কিন্তু সরকারি দলের উপর হামলার প্রতিটি ঘটনায় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশ প্রশাসন বাড়াবাড়িও করেছে। কিন্তু যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে তাদের ভূমিকা ছিল নীরব। কেবল তাই নয় কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আক্রান্ত নেতা-কর্মীরা উলটে গ্রেফতার-হয়রানির শিকার হয়েছেন। এটা কোনও ভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

hasia-afp_010519051924.jpgএকাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হাসিনা (সূত্র:এএফপি)

নতুন আঙ্গিকে প্রহসন

বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনকে তাই ভোট না বলে প্রহসন বললে একটুও বেশি বলা হবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনও ভাবেই সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হয়নি। গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাই করেছিলেন, কিন্তু ক্ষমতাসীনদল, তার নেত্রী ও সরকার এই নির্বাচনকে বিভীষিকাময়য় করেই খান্ত দেয়নি কেড়েছে ২১টি প্রান, ছাই করেছে গাড়ি বাড়িসহ বহু জাতীয় সম্পত্তি। এই নির্বাচনে ছিল না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড,  প্রশাসন অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ প্রতিটি বিভাগ নিষ্ঠার সংগে তাদের ভূমিকা পালন করেছিলেন ক্ষমতাসীনদলের ‘হ্যাঁ’ ‘হ্যাঁ’ বলা সং হিসাবে।

বিরোধীদলের প্রার্থীর প্রচারে বাধা, ভাঙচুর, দফায় দফায় আক্রমণ,  মামলা ও গ্রেফতার, প্রার্থীকে গুলি - ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশ থেকেই এ সব শুরু হয়েছিল। তখনই বোঝা গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল সুষ্ঠু ভোট করতে দেবে না। ৩০ ডিসেম্বর হাজার হাজার অভিযোগ জমা পড়লেও ক্ষমতাসীন দলের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সেসব কানে তোলেননি।

এই নির্বাচন পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের রদবদল না করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা না করা, অভিজ্ঞ  জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে দলীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা, বাছাই করা দলীয় লোকদের প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ এবং সংসদ না ভেঙে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে বেতন ও সরকারি পদমর্যাদা-প্রটোকল নিয়ে পোশাকধারী বাহিনী ও প্রশাসনযন্ত্রকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব

এই নির্বাচনে ফের প্রমাণিত হল যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। অসার ও অবাস্তব প্রমাণিত হল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের দোহাই দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংস্কারের পরিবর্তে ওই ব্যবস্থা বাতিল করার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত।

এই নির্বাচন আরও প্রমাণ করল যে, বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিল। কারণ যে কোনও রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ নেয় নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ভোটারদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন জিতে সরকার গঠন করার লক্ষ্যে; কিন্তু যদি কোনও দল বুঝতে পারে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সে  যত ভোটই পাক না কেন, ক্ষমতাসীন দলের সরকার সেই দলকে তার নিজস্ব প্রশাসনযন্ত্রকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে জিততে দেবে না, তাহলে সে দল কেন সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে?

তাদের সেই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা দশম সংসদ নির্বাচনের পর বহু স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে।

বিরোধী হটাও

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সংসদ দুর্বলতায় ভুগছে। শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি সরকারকে অনেকটা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে সুযোগ করে দেয়। দশম সংসদেও সরকার একটি অনুগত ও সরকারের মন্ত্রী হওয়া বিরোধী দল সৃষ্টি করতে পারলেও তাকে প্রকৃত অর্থে বিরোধী দল বলা যাবে না। এবারের সংসদেও যে সেই একই হাল হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।

khaleda_010519052118.jpgখালেদা জিয়ার বিএনপি-কে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

সংসদে সরকারের সমালোচনা করার মতো কোনও শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে না। ফলে সরকার যা খুশি তা-ই করতে পারবে। এটা কি যুগপৎ সংসদীয় কার্যকারিতা বা গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে ভাল? সংসদীয় গণতন্ত্রে যদি বিরোধী দলকে জায়গা না দেওয়া হয়, যদি তাদের ক্রমান্বয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাই চালানো হয়, তাহলে সমাজ-রাজনীতি কি স্থিতিশীল হতে পারে?

ভোট দিলেন কারা

বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্টতই বুঝিয়ে দেয় যে ক্ষমতাসীনদল বিরোধী দলকে ধুয়ে মুছে সাফ করার সরকারি পরিকল্পনা করেছিল। সরকার স্বদেশী-বিদেশি মিলিয়ে যতগুলি সমীক্ষা করেছিল সেগুলি নিজেরাই ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এই নির্বাচনের ফলাফলে বাংলাদেশের মানুষদের মতামত যে কোনও ভাবেই প্রতিফলিত হয়নি সে কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

সরকারি জোট দুর্নীতি-কারচুপি ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে যা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জা ও ক্ষতি। ক্ষমতাসীন দল ভোটে দুর্নীতি বা কারচুপিকে কোন স্তরে নিয়ে ফেলেছিল একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) মোট ভোটারের সংখ্যা ২,৫৯,৪২০। কিন্তু সেখানে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়াররা  কারচুপির ক্ষেত্রে এতটাই তাড়াহুড়ো করলেন যে কেবল নৌকা ও ধানের শীষ মিলেই সেখানে মোট ভোটের চেয়ে ২২,৪১৯টি ভোট বেশি পড়ে যায়। এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

ক্ষমতাসীনদলের সন্ত্রাসে যে সব ভোটকেন্দ্রে মানুষ ভয়ে পৌঁছোতে সাহস পায়নি সেখানে কী ভাবে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়ে, কী ভাবে মানুষ আগুন, রক্তপাত, মৃতদেহ টপকে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়, কী ভাবে যারা আগের রাতেই তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়েছে তাদের পক্ষে ভোট দেয়, কী ভাবে শাসকদলের সমর্থকদের হাতে প্রাণ হারানো নিকট আত্মীয়ের পরিবার ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে ঘাতকদের পক্ষেই ভোট দেয়?

এ ধরণের অসংখ্য প্রশ্ন উঠে আসছে বাংলাদেশের এ বারের নির্বাচন থেকে যার উত্তর দিতে পারবে না বিপুল ভোটে জয়ী দল এবং তাদের নেত্রী। অথচ বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে চালিত করার সুযোগ ছিল একাদশ সংসদ নির্বাচন থেকেই। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে সে সুযোগ কেবল নস্যাৎ নয়, গণতন্ত্র ধর্ষিত হল নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত করতে।

শাসকের রাজনীতি

১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের আমলে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, তার সব ক’টিতেই জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে, নির্দলীয় সরকারের আমলের নির্বাচনগুলোতে পরপর দুই মেয়াদে কোনও দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কারণেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তোলা হয়েছিল একসময়। সেই দাবি আন্দোলনে সামিল ছিল আওয়ামি লিগ। আবার আওয়ামি লিগের হাত দিয়েই বাতিল হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।

১৯৮০-র দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছিল দ্বিদলীয় রাজনীতি। ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই তার স্বরূপ প্রকট হচ্ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দ্বিদলীয় রাজনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে।

হাসিনা বনাম খালেদা

গত চার দশকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার উত্থান একটু যেন অন্যরকম ঘটনা। রাজনীতির স্বাভাবিক ব্যাকরণ অনুযায়ী সব সময় এমনটা ঘটে না। বিশেষ পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের সঙ্কট ও ফাঁকা জমি  তাঁদের রাজনীতিতে এনেছিল। তারপর হাঁটি হাঁটি পা পা করে তাঁরা নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একচ্ছত্র কর্তৃত্ব।

দু’জনের উত্থানের পেছনেই ছিল বিয়োগান্ত ইতিহাস। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও সহজ সমীকরণ তৈরি হয়নি। রাজনীতিতে তাঁরা হয়ে যান পরস্পরের প্রধান প্রতিপক্ষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা নিয়ে দু’জনেই ছিলেন অনড়, তখন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তখন দরজায় কড়া নাড়ছে। 

hasina-reu_010519052748.jpgআবার ক্ষমতায় হাসিনা (ছবি: রয়টার্স)

বাংলাদেশের বিগত প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে দু’টি বড় ঘটনা ঘটেছে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। একটি ১৫ অগস্ট ১৯৭৫, অন্যটি ২১ অগস্ট, ২০০৪। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার ঘটনাটি হল ১৫ অগস্ট। তখনো বিএনপির জন্ম হয়নি। কিন্তু পরে খুনিদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে জারি হওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংসদে পাস করিয়ে নিয়ে বিএনপি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের দায়ভার নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিল।

জেনারেল জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকার থেকে তাঁর উত্তরসূরি খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাননি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লিগ ১১ নভেম্বর (১৯৯৬) সংসদের আলোচ্যসূচিতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের প্রস্তাব করেছিল। অধ্যক্ষের পক্ষপাতমূলক আচরণের অজুহাত তুলে বিএনপির সদস্যরা সে দিন সংসদ কক্ষ ত্যাগ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে আইনটি বাতিল হোক তা তারা চায় না। যার মানে দাঁড়ায়, ১৫ অগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না।

২১ অগস্ট, ২০০৪ আওয়ামি লিগের সমাবেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলা হয়। ওই ঘটনায় ২৪ জন নিহত হলেও শেখ হাসিনা বেঁচে যান। বিএনপি সরকার ওই ঘটনার তদন্তের ব্যবস্থা না করে আবার নিজেদের কাঁধে হাসিনা-নির্মূল ষড়যন্ত্রের দায়ভার নিয়ে নেয়।

রয়ে গেলেন হাসিনা

এরপর ‘রিকনসাইল’ করার মতো অবস্থানে থাকার কথা নয় শেখ হাসিনার। তিনি প্রতিশোধ নিলেন তবে  রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এক এক করে সম্ভাব্য শত্রুদের জোটসঙ্গী করলেন। চরম সমালোচনা সত্ত্বেও হেফাজতে ইসলামের মতো একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে কৌশলে নির্বিষ করলেন। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক খেলা খেললেন। আর বিএনপিকে একেবারে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিলেন।  বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রেও আওয়ামী বৃত্তের বাইরে একটি উদার গণতান্ত্রিক দলের চাহিদা রয়েছে কিন্তু তা গড়ে উঠতে সময় লাগবে।

সরকারি বিরোধী দল

১৯৭৩ সালের পর দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে এ বারই ছিল প্রথম নির্বাচন। স্বাভাবিক কারণে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য ছিল একটি পরীক্ষা। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচন কমিশনের। তাদের হাতেই ছিল মানুষের নির্ভয়ে ভোট দিতে পারার দায়িত্ব। কিন্তু শেষপর্যন্ত  নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হল না। দশম সংসদের মতো এ বারও বাংলাদেশবাসী আরেকটি ‘সরকারি’ বিরোধী দল দেখবেন। ধরে নেওয়াই যায় যে, গোটা বিশেক আসন নিয়েই এবারও বিরোধী দলের ‘ভূমিকা’ পালন করবে জাতীয় পার্টি। দশম সংসদে তারা যেমন বস্তুত ‘সরকারি বিরোধী দল’ ছিল, এবারও সেই একই পথে হাঁটবে জাতীয় সংসদ।

বিএনপির পাঁচজন-সহ ঐক্যফ্রন্টের যে মাত্র ৭ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, তাঁরা শপথ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ তারা ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। সুতরাং ওই সাতটি আসনে উপনির্বাচন হবে এবং এই আসনগুলোতেও আওয়ামি লিগ প্রার্থীরা জয়ী হবেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে একক ভাবে আওয়ামি লিগের আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬৬। আওয়ামি লিগ একক ভাবে এত বেশি আসন পেয়েছিল ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই বছর তাদের আসন সংখ্যা ছিল ২৯৩। ফলে প্রথম সংসদে বিরোধী দল বলে কিছুই ছিল না।

গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত

আবুল মনসুর আহমদ তাঁর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে লিখেছেন, ‘পার্লামেন্টারি পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন মানে বিরোধী দলের যথেষ্ট সংখ্যক ভালো মানুষ নির্বাচিত হবেন, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। …আমি আওয়ামী নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়াছিলাম বিরোধী পক্ষের অন্তত জনা পঞ্চাশেক নেতৃস্থানীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়লাভ করিতে দেওয়া উচিত। তাতে পার্লামেন্টে একটি সুবিবেচক গণতন্ত্রমনা গঠনমুখী অপজিশন দল গড়িয়া উঠিবে। আমার পরামর্শে কেউ কান দিলেন না।’ এই ‘কানে না নেওয়া’টাই গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আওয়ামি লিগের সঙ্গে অন্য দলগুলোর আসনের ব্যবধান এতটাই যে, সংসদে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স বা ভারসাম্য বলে কিছু থাকবে না—যেটি গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য খুব প্রয়োজনীয়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

TAPAN MALLICK CHOWDHURY TAPAN MALLICK CHOWDHURY

The writer is a journalist.

Comment