রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে বিজেপির পরাজয়ের পাঁচটি কারণ
এই সবক’টি কারণ ২০১৯ সালেও থাকবে, তাই এটি লোকসভা নির্বাচনের প্রাক-সমীক্ষাও বটে
- Total Shares
বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের ফল কতটা আঁচ করা যায়?
ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে কংগ্রেসের দারুণ জয়ের পরে সকলের মনে এই বড় প্রশ্নটা জাগতে শুরু করেছে। এই ফলাফল এখন অতীত।
২০০৩ সালে এই তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিল বিজেপি যদিও ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল বিজেপি। একই ভাবে ২০০৮ সালের লোকসভা ভোটে পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস (যদিও তারা রাজস্থানে জয়ী হয়েছিল)এবং তারা লোকসভা ভোটে জয়ী হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হল তিন রাজ্যের ক্ষতের অভিন্ন কারণ (ডেইলিও)
ভোট কমে যাওয়ার কারণ
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনে কেন বিজেপি পরাজিত হল।
তিন রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমন উত্তরটি হল প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা।
যতই হোক, গণতান্ত্রিক বিশ্বে খুব বেশি হলে নেতাদের টানা ১০ বছর পর্যন্ত মেনে চলতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু রমণ সিং ১৫ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং শিবরাজ সিং চৌহান মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৩ বছর ধরে। তবে এই ভাবে বিচার করে রাজস্থানে অশোক গেহলট ও সচিন পাইলট, মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস নেতাদের অবদান ছোট করে দেখা হবে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হল দলের শীর্ষ নেতা ‘তরুণ’ রাহুল গান্ধী – তাঁর সাদামাটা ভাব ও আমরাও পারি মানসিকতা বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
তৃতীয় যে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে তা হল গ্রামাঞ্চলের দুর্দশা – কৃষকরা অখুশি, দলটি যে গ্রামাঞ্চলে নিদারুণ ভাবে পরাজিত হয়েছে তার কারণ এটিই।
চতুর্থ কারণটি হল ইন্ডিয়া স্পেন্ড অনুযায়ী ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে যথাক্রমে ৪৩ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ আসন তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত যাদের জন্য বিজেপি তেমন কিছু করেনি। এই তিন রাজ্যে সংরক্ষিত ১২০টি আসনের মধ্যে তারা ১২০টি অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ আসনে পরাজিত হয়েছে, যদিও ২০১৩ সালে তারা এই আসনগুলির মধ্যে ৭৭ শতাংশ আসনে জিতেছিল।
একই ভাবে বলতে হবে যে দ্য প্রিন্ট দেখিয়ে দিয়েছে যে, ২০১৩ সালের ভোটে শহরাঞ্চলের ৮০টি আসনের ৮০ শতাংশেই বিজেপি জয়ী হয়েছিল যদিও এবারের নির্বাচনে তারা ৪৬ শতাংশ আসনে পরাজিত হয়েছে।
তারা যখন গ্রামাঞ্চলে পরাজিত হয়েছে তখন তার কারণ হিসাবে গ্রামাঞ্চলে দুর্দশাকে দায়ী করা হয়েছে, কিন্তু শহরাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি ছিল, তাই এখানে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধ্বস নামা মানে তা দলের কাছে বিপদসঙ্কেত।
বিমুদ্রাকরণ, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) অত্যন্ত খারাপ ভাবে চালু করে দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জন্যই বিজেপির এই হাল হয়েছে। এ বার গুজরাটেও প্রবল ভাবেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া ছিল, কিন্তু শহরাঞ্চলের ভোট ও শহরাঞ্চলের আসনগুলি শেষ পর্যন্ত তাদের উতরে দিয়েছে।
কৃষিতে সমস্যা তো রয়েইছে, তবে শহরেও ভালো ফল করতে পারেনি বিজেপি (ছবি: টুইটার/@AIKS)
সংখ্যা মিথ্যা বলে না
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন প্রকল্প যেমন স্টার্টআপ ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা, স্মার্ট সিটিজ মিশন, অম্রুত এবং এই ধরনের বিভিন্ন প্রকল্প, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জাতীয় স্তরে তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে বিপুল ভাবে সমর্থন পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও এই সব প্রকল্পের এক একটির ফল হয়েছে একেক রকম এবং কয়েকটি প্রকল্প এখনও কার্যত শুরুই হয়নি। তবে ২০১৪ সালে মোদী যে ১ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি মতো কর্মসংস্থান এখনও হয়নি।
যদিও সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান কমেছে। সরকারের দাবি, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩১.১ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে যদিও সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী এই সংখ্যাটি ১৮ লক্ষ।
সিএমআইই-র পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে ২০১৮ অর্থবর্ষে বিনিয়োগের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন প্রকল্প কমেছে ৩৮.৪ শতাংশ এবং আগের বছরের তুলনায় হিসাব করলে ২৬.৮ শতাংশ প্রকল্প অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৫ শতাংশ। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন হয়ে উঠেছে যে ভারতীয় রেল ৯০,০০০ লোক নেবে বলে বিজ্ঞাপন দেওয়ায় ২কোটি ৩০ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। ২০১৯ অর্থবর্ষেও পরিস্থিতির উন্নতি কিছু হয়নি।
তিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে কংগ্রেসের শূন্য ভাঁড়ার ভরতে সুবিধা হবে। (ছবি: রয়টার্স)
নতুন আশা
এই সবকটি সমস্যা থাকবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময়েও। সময়ের ফারাকটা খুবই কম এবং এই অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে কংগ্রেসকে। এটাই বিজেপির কাছে আশার আলো, কারণ বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করা খুব একটা সহজ হবে না। তবে এই নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই নির্বাচনের ফলে কংগ্রেস খানিকটা অক্সিজেন পেয়েছে, কারণ একের পর নির্বাচনে তারা শুধু পরাজনের মুখই দেখে চলেছিল।
এই তিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ফলে কংগ্রেস তার কপর্দকশূন্য অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে আর এর ফলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ধনী দল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতেও তাদের সুবিধা হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল বিধানসভা নির্বাচনের ফলে রাহুল গান্ধীর সদ্য পাওয়া নেতৃত্ব এবং তাঁর দল কংগ্রেসের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং আমরাও পারি মনোভাব তৈরি হবে।
(সৌজন্য মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে