পাঁচ রাজ্যের ফলের প্রভাব ভোটারদের উপর না পড়লেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণের উপর পড়বে
বিজেপি ভালো করলে নেতারা তৎপর হবেন, কংগ্রেস ভালো করলে তৃণমূলকে জমি ছাড়তে চাইবে না
- Total Shares
১১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, ছত্তীসগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান তেলঙ্গনা ও মিজোরামের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে। ২০১৯ সালেই মোদী সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ ফুরচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে ভোট হলে মে মাসেই লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে পাঁচ রাজ্যের এই ভোটের ফল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এই পাঁচ রাজ্যে মায়াবতী ও অজিত যোগীর মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদদের দল লড়াইতে নামলেও মূল টক্কর কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি ও কংগ্রেসের উপর চাপটা বেশি রয়েছে।
কংগ্রেস রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে কৌশল বদলেছে। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি এখন বিজেপি-বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর কাজে ব্যস্ত। তাই অতীতের গরিমা ভুলে রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতায় অনেক নমনীয় অবস্থান নিয়েছে।
এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলে কংগ্রেস যদি ভালো ফল করতে পারে তা হলে সেই জোটে তার গুরুত্ব বাড়বে। অন্যদিকে ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে গড় হারালে বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েন বাড়বে। ইতিমধ্যেই দলে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর বজ্রমুষ্টি আলগা হতে শুরু করেছে।
এই অবস্থায় মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহান যদি যদি ধরে রাখতে পারেন তাহলে ঊনিশের ভোটে বিজেপি এনডিএ সহযোগী নিয়ে যদি সরকার গড়ে তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে আসতে পারেন। কারণ নরেন্দ্র মোদীর যেমন গুজরাটে চারবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন, শিবরাজ সিং চৌহানও পরপর চারবার জিতে সেই কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পারবেন।
মসনদ অটুট রাখতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়িয়ে এগিয়ে থাকবেন শিবরাজ [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
বিশেষ করে, ২০১৪ সালে ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবস্থানের ফলে মোদীর সামনে পরিস্থিতি অনেক অনুকূল ছিল। ২০১৯ সালে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। কৃষক বিক্ষোভ, দলিত অসন্তোষ, বেকার সমস্যা, নোটবন্দি ও জিএসটি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে শিবরাজ যদি মসনদ ধরে রাখতে পারেন তাহলে তাঁর কৃত্বিত্ব যে বেশি তাতে সন্দেহ থাকবে না।
সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল আরও অনেক সমীকরণ তৈরি করবে, এ লেখায় সে প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলে কী প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে আজকের লেখায় সে বিষয়ে কয়েকটা কথা বলব।
ভালো ফল করলে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তৎপর হবে [ছবি: পিটিআই]
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পায়ের নীচে যে জমি তৈরি হচ্ছে তার ইঙ্গিতটা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলেই পাওয়া গিয়েছিল। সেই ভোটে বিজেপি তাদের ভোট ১১ শতাংশ বাড়াতে পেরেছিল। মোদী হাওয়ায় সেই বাড়তি ভোট অবশ্য এসেছিল মূলত বামেদের হারানো জমি থেকে। ওই বছরের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপিরই উল্লেখযোগ্য ভাবে ভোট বেড়েছিল।
বিজেপি বামেদের হাত থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র ছিনিয়ে নিয়েছিল। কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর এবং মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি।
পাঁচ কোটিরও বেশি ভোটারের রাজ্যে বিজেপির ঝোলায় ঢুকেছিল এক কোটিরও বেশি ভোট। আসানসোল আলিপুরদুয়ার, কৃষ্ণনগর, শ্রীরামপুর ও হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল আড়াই থেকে সাড়ে চার লক্ষের মধ্যে।
কংগ্রেস ভালো ফল করলে তৃণমূলকে ফাঁকা জায়গা ছাড়বে না [ছবি: এপি]
এই অবস্থায়, ২০১৬ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ক্রমশ বেড়েছে। এই ভোটের সিংহভাগ এসেছে বামেদের ভোট বাক্স থেকে। ফলে, বিজেপি যদি এই পাঁচ রাজ্যের ভোটে ভালো ফল করতে পারে তা হলে তারা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বেশি করে পশ্চিমবঙ্গে আসতে থাকবেন। ভোটরঙ্গে বাম ও কংগ্রেস আরও নিষ্প্রভ হয়ে উঠবে।
আর, যদি ওই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলে কংগ্রেস ভালো করে তাহলে তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়বে। বিরোধী জোট হলে কংগ্রেস তৃণমূলকে একেবারে ফাঁকা জমি পশ্চিমবঙ্গে ছাড়তে চাইবে না।
ফলে, পাঁচ রাজ্যের ভোটের সরাসরি প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের উপর পড়ার সম্ভাবনা বিশেষ না থাকলেও, রাজনৈতিক সমীকরণের উপর প্রভাব ফেলবে।