কৃষক দলিত ও জনজাতি বিক্ষোভে এবং গোরক্ষকদের তাণ্ডবে বিদ্ধ বিজেপি, কংগ্রেসের তেমন কৃতিত্ব নেই
বিজেপির দিওয়াল লিখনটা গুজরাট বিধানসভা ভোটেই ছিল, কিন্তু রাহুল গান্ধী সেটা বুঝতে পারেননি
- Total Shares
কৃষক অসন্তোষ, দলিত ও জনজাতি বিক্ষোভ, গোরক্ষকদের তাণ্ডব -- এই ত্রিফলাতেই মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড় ও রাজস্থানে বিদ্ধ হয়েছে বিজেপি।
তাই বিজেপির হারের জন্য কংগ্রেসকে খুব বেশি কৃতিত্ব আমি দিতে পারছি না। আমার মনে হয় রাহুল গান্ধী যদি উপবীত ও গোত্র তুলে ধরে এবং মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়ে হিন্দুত্ব প্রমাণে সময়ে না ব্যয় করে ওই তিন ক্ষোভে বেশি মন দিতেন তা হলে কংগ্রেসের ফল আরও ভালো হত।
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিসগড় এই তিন রাজ্যই মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। তিন রাজ্যে মোট ৫১৯টি বিধানসভার মধ্যে ৪৩৭টি কেন্দ্রই গ্রামীণ এলাকায়। আর এই এলাকাতেই ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে গ্রামীণ ৭৫টি কেন্দ্র জিতেছে কংগ্রেস। রাজস্থানে ৪০টি গ্রামীণ কেন্দ্র হারিয়েছে বিজেপি। ছত্তিশগড়ে ৩০টি গ্রামীণ কেন্দ্রের মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে।
এই তিন রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশে খেটে খাওয়া মানুষের ৭০ শতাংশ, ছত্তিশগড়ে ৭৫ শতাংশ ও রাজস্থানে ৬৩ শতাংশ হলেন চাষি ও ক্ষেতমজুর। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের মূল ক্ষোভ ফসলের সহায়ক ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং কৃষি ঋণ মকুব না করা।
রাহুল গান্ধী যদি মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়ে সময়ে ব্যয় না করতেন তাহলে কংগ্রেসের ফল আরও ভালো হত {ছবি: রয়টার্স]
দিওয়াল লিখনটা গুজরাট বিধানসভা ভোটেই ছিল। কিন্তু রাহুল গান্ধী সেটা বুঝতে পারেননি। গুজরাট ভোটে গ্রামীণ এলাকাতেই বিজেপি ধরাশায়ী হয়েছিল। তবে গুজরাটে গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চল বেশি হওয়ায় শেষ রক্ষা হয়েছিল বিজেপির। এবার মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীশগড়ে তা উল্টো হওয়ায় বিজেপি হেরেছে।
আরও একটা পরিসংখ্যান দিয়ে রাখছি।
২০০৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মধ্যপ্রদেশে ১৬,৯৩২ জন, ছত্তিশগড়ে ১২,৯৮৯জন ও রাজস্থানে প্রায় পাঁচ হাজারজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এই বছরেই পাঁচজন কৃষকের মৃত্যুর পরে যে তুমুল প্রতিবাদ হয়েছিল তার জেরে রাজস্থানেও ধর্মঘট করেছিলেন কৃষকরা।
এই নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশের মালওয়া, যা কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, সেখানে ৮৫টি আসনের মধ্যে ৪৬টি পেয়েছে কংগ্রেস। গত বার এখানে তারা পেয়েছিল ১৩টি আসন। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ নাসিক থেকে মুম্বই ১৮০ কিলোমিটার পথ ছ'দিন ধরে হেঁটে যাত্রা করেছিলেন অন্তত ৫০,০০০ কৃষক, যার নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থী কৃষক নেতারা। এর ফল পেয়েছে সিপিএম। রাজস্থানে কৃষক অধ্যুষিত কেন্দ্রের মধ্যে দু'টিতে তাঁদের প্রার্থীরা জিতেছেন।
নাসিক থেকে মুম্বাই ১৮০ কিলোমিটার পথ ছ'দিন ধরে হেঁটে যাত্রা করেছিলেন প্রায় ৫০,০০০ কৃষক [ছবি: পিটিআই]
কৃষকদের সঙ্গে দলিত ও জনজাতিরাও বিজেপিকে শিক্ষা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত ও জনজাতিদের উপরেও উৎপীড়ন বেড়েছে। গোরক্ষার নামে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় মানুষের উপর বেলাগাম অত্যাচার করে চলেছে।
যার ফল রাজস্থানে বিজেপি পেয়েছে। রাজস্থানের আলোয়ার জেলায় গত কয়েক বছরে গোরক্ষকদের তাণ্ডব দেখে দেশের মানুষের ঘুম ছুটেছে। এই জেলায় ১১টি আসনের মধ্যে ন'টিতেই বিজেপি হেরেছে। আলোয়ার জেলা হরিয়ানা রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত। এই অঞ্চলের বিশাল সংখ্যক মানুষ দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গোরক্ষকদের তাণ্ডবে এখানে গোরু কেনা-বেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এতে যেমন দুধ ও গো-ব্যবসায়ীদের পেটে টান পড়েছে তেমনই সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা।
বাতিল গোরু বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে বিশাল গোরুর পাল যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের থেকে ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে কৃষকদের রাত জাগতে হচ্ছে। এই সব কাঁটা ২০১৯ নির্বাচনেও বিজেপির পথে ছড়িয়ে থাকবে।
বিরোধীরা যদি বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় তাহলে তাদের এই দিকগুলোর দিকে নজর দিতেই হবে।