বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক: অমরিন্দর সিং দেশকে রাজনীতির উর্ধ্বে ঠাঁই দিচ্ছেন

সকলের উচিত জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রাজনীতি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া

 |  4-minute read |   07-03-2019
  • Total Shares

যে দলে হাইকমান্ডের প্রতি অনুগত্য থাকতে পারাটাই দলীয় কর্মীরা পরম ধর্ম বলে মনে করেন, সেই দলের কর্মী হয়েও ২০১৫ সালে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং তৎকালীন সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীকে ভুল শুধরে দেওয়ার দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন।

তা করতে গিয়ে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আত্মবিশ্বাস মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর পরেও অমরিন্দর সিং শুধুমাত্র দলে টিকে থাকেননি, তাঁর রাজনৈতিক জীবন আরও প্রসারিত হয়েছিল।

আর আজ সেই অমরিন্দর সিং দলমত নির্বিশেষে আমাদের আরও একটি শিক্ষা দিলেন - কী ভাবে রাজনীতির চেয়ে দেশকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়।

পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে যে দল যাই রাজনীতি করে থাকুক না কেন, সিং তাঁর দলীয় সহকর্মী নভজ্যোৎ সিং সিধুকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে 'এয়ার স্ট্রাইকে গাছ মরেছে না জঙ্গি মরেছে' এই মন্তব্য করে সিধু ঠিক করেননি। অমরিন্দর সিংয়ের মতে, এই ধরণের মন্তব্য করা মানে ভারতীয় বায়ুসেনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

অমরিন্দর সিং জানিয়েছেন, "এই অভিযানে একজন মরুক কী ১০০জন মরুক, এই অভিযানের ফলে পরিষ্কার একটি বার্তা দেওয়া গিয়েছে - নিরপরাধ জওয়ান ও নাগরিকদের মৃত্যু একেবারেই বরদাস্ত করবে না ভারত।"

body_030719054322.jpgনিজের মনের কথা বলতে কখনও পিছপা হননি অমরিন্দর সিং [ছবি: পিটিআই]

অনেকেই অবশ্য মনে করছেন যে এই মন্তব্য করে সিং আদতে বিজেপির বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর এই অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক আসলে দেশকে সমর্থন করেই এই কথাগুলো বলেছেন। তাও এমন একটা সময়ে যখন প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের 'যুদ্ধ পরিস্থিতি' সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে, বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে সীমান্তে গিয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন বলে সিং অনেকেরই হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। মন ভোলানো একটি টুইট করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে ভাবে পাকিস্তানের মদত পুষ্ঠ জঙ্গি সংগঠন যে হামলাটি করেছে তা কাপুরুষোচিত লক্ষণ এবং ভারতের প্রত্যাঘাত করা উচিত। পাঞ্জাব বিধানসভায় আবেগপ্রবণ হয়ে অমরিন্দর সিং পুলওয়ামার শহিদদের আত্মবলিদানের প্রশংসা করেছিলেন। শহিদদের পরিবারবর্গকেও পাঞ্জাব সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শহিদরা পাঞ্জাবের বাসিন্দা না হলেও।

জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজনীতিক-সহ প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত সরকারকে সমর্থন করা। যে সময়ে আমাদের মধ্যে ঐক্যের প্ৰয়োজন সেই সময়ে কেউ যেন আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে। এই বার্তাটি ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং মনে রেখেছেন।body1_030719054435.jpgকংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুখ খুলেও তিনি কংগ্রেসকর্মী রয়ে গিয়েছেন [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

পরিস্থিতি য়াই হোক না কেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কথা মাথায় না রেখে অমরিন্দর সিং নিজের যুক্তিতে অটল থাকেন। রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন অমরিন্দর। যখনই অমরিন্দর দুন স্কুলে ছেলে রনিন্দরের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন তিনি রাজীব গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু পরে যখন পাঞ্জাবের রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অমরিন্দর সিং ও প্রতাপ সিং বাজওয়ার মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার দায়িত্ব বর্তাল রাহুল গান্ধীর কাঁধে, তখন প্রতাপ সিং বাজওয়াকেই বেছে নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী।

সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়েছিল যে অমরিন্দর সিং পরিষ্কার জানিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর বৈধ রাজনৈতিক দাবি কখনোই হাতছাড়া করবেন না, এই দাবি আদায়ের জন্য তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও রাজি আছেন। এরপর অবশ্য নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলেন রাহুল। যদিও অমরিন্দর সিং সংবাদমাধ্যমে খুলেআম কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিলেন।

এর মানে এই নয় যে সিং রাজীব গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সম্মান করেননি। অনেকেই জানেন যে ২০১৪ সালে অমৃতসর থেকে প্রার্থী হতে রাজি ছিলেন না তিনি। ২০০৪ সালের ২০ মে তিনি জানিয়েছিলেন, "অমৃতসর সম্পর্কে আমি খুব একটা ওয়াকিবহাল নই। স্থানীয় কোনও কংগ্রেস নেতাকে সেই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা উচিত। সেই কেন্দ্রে আমি খুব বেশি সময়ও ব্যয় করতে পারব না।"

body2_030719054531.jpg প্রিয়াঙ্কা ও সোনিয়ার অনুরোধে অমৃতসর থেকে প্রার্থী হতে রাজি হন অমরিন্দর [ছবি: পিটিআই]

কিন্তু এর পর সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অনুরোধে তিনি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে রাজি হলেন।

শেষ পর্যন্ত প্রবল 'মোদী হাওয়া'র মাঝে অমরিন্দর সিং সেই নির্বাচনে অরুণ জেটলিকে পরাজিত করেছিলেন।

সাধারণত রাজনৈতিক নেতারা দলের কথা শুনেই চলেন। কিন্তু সিধু যখন কার্তারপুর সীমান্তের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়ে পাকিস্তান গিয়েছিলেন তখন অমরিন্দর সিং তাঁকে নিষেধ করেছিলেন। কার্তারাপুর বা পুলওয়ামা কিংবা বালাকোট -- যাই হোক না কেন সিং দলীয় নীতির বাইরে গিয়ে বহুবার কথা বলেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতির চেয়ে দেশ আগে।

আজীবন অমরিন্দর সিং কংগ্রেসকর্মী রয়ে গেছেন।

কিন্তু একজন জাতীয় নেতার কী ধরনের আচরণ করা উচিত, তা তিনি বারংবার বুঝিয়ে দিয়েছেন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment