মোদীর 'একে ২০৩' প্রকল্প হাতিয়ার করে কি স্মৃতি ইরানি আমেঠিতে রাহুল গান্ধীকে হারাতে পারবেন?
অভিজ্ঞ বিজেপি নেতৃত্ব নিয়মিত আমেঠি গিয়ে একটি বার্তাই দিচ্ছেন - এই আসন জয় করা অসম্ভব নয়
- Total Shares
ব্যাগ ভর্তি প্রতিশ্রুতি নিয়ে গত রবিবার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল গান্ধীর কেন্দ্র আমেঠিতে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যাগ ভর্তি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কেন্দ্রের খরচ পড়বে প্রায় ৫৩৮ কোটি টাকা।
The work done by the NDA Government for Amethi should have been done years ago.Sadly, it was not done. pic.twitter.com/fnVjZs8Ur3
— Narendra Modi (@narendramodi) March 3, 2019
২০১৪ লোকসভা নির্বাচন থেকেই আমেঠি আসনটিকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। ২০১৪ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য স্মৃতি ইরানিকে প্রার্থী করা হয়েছিল। ইরানি পরাজিত হলেও বিজেপি এখনও কংগ্রেসের কাছ থেকে এই আসনটি ছিনিয়ে নেওয়ার আশা ছাড়েনি। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে ইরানির হয়ে নির্বাচনী প্রচারে খোদ মোদীকে ব্যবহার করে বিজেপি একটি বার্তাই পাঠাতে চাইছে - আমেঠি জয় করা অসম্ভব নয়।
১৯৯৮ সালে শেষ বারের জন্য আমেঠি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। সেই নির্বাচনে সঞ্জয় সিং কংগ্রেসের সতীশ শর্মাকে পরাজিত করেছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালে সোনিয়া গান্ধীর কাছে পরাজিত হয়ে এই আসনটি হারান সঞ্জয় সিং। পরবর্তী কালে সোনিয়া এই আসনটি পুত্র রাহুলের জন্য ছেড়ে দিয়ে রায় বরেলির থেকে প্রার্থী হন।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতার সময়ে এই দুটি কেন্দ্র থেকে কোনও প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আমেঠি কেন্দ্রের লড়াইটা মূলত কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
২০১৪ সালে আমেঠি কেন্দ্রে রাহুল গান্ধীকে বেশ কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছিলেন ইরানি। এর পর থেকে প্রায়শই আমেঠি সফরে যান ইরানি। ইরানি ছাড়াও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিয়মিত আমেঠিতে জনসভা করেছেন। এখন থেকে একটা সঙ্কেতই পাওয়া যাচ্ছে - আসন্ন নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের দুর্গ বলে খ্যাত এই আসনটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি।
২০১৪ সালে আমেঠি কেন্দ্রে রাহুল গান্ধীকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছিলেন স্মৃতি ইরানি [ছবি: পিটিআই]
আমেঠি নিয়ে তাদের এই বিরামহীন প্রচেষ্টার ফল ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে পেয়েছে বিজেপি। সেই নির্বাচনে এই কেন্দ্রের চারটির মধ্যে তিনটি বিধানসভা আসন বিজেপির দখলে গিয়েছিল। বর্তমান বিধায়ক সমাজবাদী পার্টির রাকেশ প্রতাপ সিং সেই নির্বাচনে তাঁর গৌরীগঞ্জ আসনটি পুনর্দখল করতে পেরেছিলেন। কংগ্রেস অবশ্য একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি।
বিধানসভা নির্বাচনে পাওয়া সাফল্যকে ধরে রাখতে এবার নরেন্দ্র মোদী আমেঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক রাইফেল একে-২০৩ - উৎপাদন করার কথা ঘোষণা করেছেন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে একহাত নিয়ে মোদী জানিয়েছেন, "কিছু লোক গোটা বিশ্ব ঘুরে 'মেড ইন উজ্জ্বয়িনী', 'মেড ইন জয়পুর', 'মেড ইন জয়সলমের' মার্কা কথা বলে থাকেন... কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না, কথা শুধুমাত্র 'কথাই' থেকে যায়। মোদী সরকারের আমলে এবার সত্যি সত্যি 'মেড ইন আমেঠি' একে-২০৩ রাইফেল উৎপাদন করা হবে।"
এই ঘোষণার একদিন বাদে রাহুল গান্ধী মোদীর দাবি নস্যাৎ করতে দাবি করেছেন, ২০১০ সালে আমেঠিতে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ভিত্তিপ্রস্তর তিনিই স্থাপন করেন। এর পরেই স্মৃতি ইরানি রাহুলকে মনে করিয়ে দেন যে আমেঠির অস্ত্র প্রস্তুতকারক কারখানার জন্য নতুন করে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যাতে সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির একে-২০৩ রাইফেল উৎপাদন করা যায়।
রাহুল গান্ধী দাবি করেছিলেন ২০১০ সালে তিনি নিজে আমেঠিতে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
प्रधानमंत्री जी,अमेठी की ऑर्डिनेंस फैक्ट्री का शिलान्यास 2010 में मैंने खुद किया था। पिछले कई सालों से वहां छोटे हथियारों का उत्पादन चल रहा है। कल आप अमेठी गए और अपनी आदत से मजबूर होकर आपने फिर झूठ बोला। क्या आपको बिल्कुल भी शर्म नहीं आती?
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) March 4, 2019
आपको डर इतना है की अमेठी में विकास हो रहा है की आपने ये देखने की तकलीफ़ नहीं उठायी की कल कोरवा में JV का उद्घाटन हुआ है। इसके तहत भारत और रूस के बीच समझौता हुआ AK 203 राइफ़ल के निर्माण का@RahulGandhi
— Smriti Z Irani (@smritiirani) March 4, 2019
সম্প্রতি স্থানীয়দের কুম্ভ মেলা ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমেঠির জনগণ ইরানিকে সাধুবাদ জানিয়েছে। প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা দর্শন করতে গিয়ে স্থানীয়রা যাতে কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন না হয় তার সমস্ত রকম আয়োজন ইরানি নিজে হাতে করে দেন।
আসন্ন নির্বাচনে আরও একটি বিষয়ের জন্য রাহুল গান্ধীর থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন ইরানি। গান্ধী পরিবারের সদস্যদের যখন গোটা ভারত জুড়ে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকতে হবে তখন ইরানি শুধুমাত্র আমেঠি আসনটির উপরেই মনোনিবেশ করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রে যেহেতু বিজেপি সরকার রয়েছে তাই অঞ্চলের মানুষদের জন্য রাহুল গান্ধীর চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে পেরেছেন ইরানি।
দীর্ঘদিন কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার পরেও আমেঠি এখনও অত্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে। এর ফলে কংগ্রেস বিরোধীরা দাবি করে থাকেন যে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের এই আসনটির বাসিন্দাদের জন্য কিছুই করেনি।
এই মুহূর্তে অমিত শাহ, স্মৃতি ইরানি, যোগী আদিত্যনাথ ও স্বয়ং মোদী আমেঠি দখল করতে একত্রে আসরে নেমেছেন। নিঃসন্দেহে রাহুল গান্ধীর লড়াইটা ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে