পুরোনো বন্ধুত্ব এখনও অটুট: কেন আফগানিস্তানের স্থায়িত্ব ও বৃদ্ধি ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
৩০০ কোটি ডলার! এই অঞ্চলের মধ্যে ভারত থেকেই সবচেয়ে বেশি অনুদান ও সহায়তা পায় যুদ্ধদীর্ণ দেশটি
- Total Shares
সাধারণ আফগানদের কাছে প্রতিবেশী ও কাছাকাছি দেশগুলির মধ্যে ভারতের বিশেষ একটা জায়গা রয়েছে এবং ভারতকেই তাঁরা সবচেয়ে নিকট বলে মনে করেন। এই দেশটি আমাদের কাছে আক্ষরিক অর্থে তো বটেও বাস্তবেও বন্ধু। আন্তর্জাতিক হিসাবে পঞ্চম এবং এই অঞ্চলের মধ্যে আফগানিস্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়ে থাকে ভারত, সাধারণ ভাবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ আমরা ভারত থেকে পেয়ে থাকি। এই দেশে ভারত গড়ে দিয়েছে ২০০-র বেশি সরকারি-বেসরকারি স্কুল, দেশের ১,০০০-এর বেশি পড়ুয়াকে ভারত বৃত্তি দেয় এবং এ দেশে ১৬,০০০ আফগান পড়ুয়া রয়েছে।
২০০৮ সালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পরে, আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ভারতকে তাঁদের ভাই (ব্রাদার কান্ট্রি) বলে সম্বোধন করেছিলেন এবং দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে বলেছিলেন যে “কোনও শত্রুই বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবে না।“
কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তির জেরে ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক আরও গভীর হয় – ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পরে এই প্রথম এই ধরনের কোনও চুক্তি করল আফগানিস্তান।
দোহায় তালিবান ও আমেরিকার মধ্যে শান্তি সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফল যাই হোক না কেন – আমরা একান্ত ভাবেই চাইছি যাতে শান্তি ফেরে – আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা নিতে চলেছে ভারত।
আফগানিস্তান ও ভারত: পুরোনো বন্ধু এবং এখনও বন্ধুত্ব অটুট। (ছবি: রয়টার্স)
অনেকেই হয়তো শুনলে অবাক হতে পারেন যে, দোহায় সেই আলোচনায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় আফগানিস্তানের প্রতিনিধি নেই – তবে ওখানে কী অগ্রগতি হচ্ছে সে ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে তারাও গভীর ভাবে নজর রাখছে। আমাদের আশা, যদি যথোপযুক্ত অগ্রগতি ঘটে আমাদের সরকার এবং একই সঙ্গে ভারতও আরও প্রত্যক্ষ ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি নিজেকে গ্র্যান্ড অ্যাসেম্বলির প্রতি নিয়োজিত – বা লয়া জিগরা – বলে মনে করেন, সব পক্ষকে এক জায়গায় আনতে সম্ভবত মার্চ মাসে তালিবানকে ও তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য আহ্বান করতে পারেন।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন যে সম্পর্কের তীব্র টানাপোড়েন শুরু হয়েছে এবং যে ভাবে সম্পর্ক জটিল হয়ে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড় ধরছে তাতে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে পারে।
চার দশক ধরে যুদ্ধ চলার পরে আফগানিস্তান এখন আকুল ভাবে শান্তির প্রতীক্ষায় রয়েছে। অনেক প্রজন্মই বড় হয়েছে – আমি নিজেকে ধরেই বলছি – যারা জীবনে কোনও দিনই শান্তি কী জিনিস তা অনুভব করেনি। গত মাসে আমাদের বড় ব্যবসায়ী হামিদ ওয়ারাস্তা লিখেছিলেন, শুধুমাত্র নিরাপদ পরিবেশেই ব্যবসার উন্নতি সম্ভব।
তবে বেকারত্ব ও সন্ত্রাসবাদ এক ভয়ঙ্কর দুষ্টচক্র তৈরি করেছে – সন্ত্রাসের ফলে হয় ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে না হয় তা অন্যত্র সরে গিয়েছে, যার ফলে বেকারত্ব বেড়েছে, তার ফলে লোকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে আর সেটাই আরও বেশি করে ইন্ধন জোগাচ্ছে সন্ত্রাসবাদে, ধীরে ধীরে আরও ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সারাক্ষণ ধরেই তরুণদের স্বপ্ন ও আশার আলো নির্বাপিত হচ্ছে।
তাই, বিশেষকরে কঠিন সময়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আশার বিশাল সম্ভাবনা রূপে প্রতীয়মান হয়েছে। ব্যবসার জন্য আমরা আমাদের আকাশপথ খুলে দেওয়ার পরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরু হওয়া ছিল বিশেষ ভাবে খুব ভালো খবর। কৃষি, সেচ ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ইউরোপে ৮,০০০ টন মাছ রফতানি করেছে ভারত আফগানিস্তান।
#Afghanistan produced 25,000 tons figs in the past year and exported 8,000 to India, UAE, Europe and Canada which is about $47m, according to officials at the Ministry of Agriculture, Irrigation and Livestock (MAIL). pic.twitter.com/Xz2qLY8KYL
— TOLOnews (@TOLOnews) 21 February 2019
এখন ইরানের ছাব্বার বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি শুরু করেছে আফগানিস্তান। আমরা স্থলবেষ্টিত দেশ – ভারত হল আমদের রফতানি করার ক্ষেত্রে অন্যতম মূল জায়গা যার ফলে আমরা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি মেরামত করতে পারি।
এই সপ্তাহের গোড়ায় আফগানিস্তানের জারাঞ্জ শহর থেকে ২৩টি ট্রাক ছাব্বার বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে যেখান থেকে পণ্যগুলি ভারতের মুম্বই বন্দরে পাঠানো হবে।
এই বাণিজ্যপথটি উদ্বোধনের জন্য রাষ্ট্রপতি গনির সঙ্গে শুধু ইরানের রাষ্ট্রদূতই যোগ দেননি, আফগানিস্তানের ভারতের ক্লান্তিহীন রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমারও যোগ দিয়েছিলেন – সেই দিনটা আমাদের দেশের কাছে একটা উজ্জ্বল দিন ছিল আর এই ব্যাপারে ভারত পাশে থাকার জন্য আমাদের দেশের সমস্ত নাগরিক ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার জানান যে ছাব্বার বন্দরের উন্নতিকল্পে ভারত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার উৎসর্গ করেছে।
আশা করি আমরা শান্তি স্থাপনের দিকেই এগবো এবং আফগানিস্তানের সামনে যে কঠিন পথ রয়েছে সেখানে ভারতে পাশে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। (ছবি: রয়টার্স)
এই সব দৃশ্যের নেপথ্যে আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। তালিবানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য মস্কোয় গেছেন আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই, তাঁর সঙ্গে, হাই পিস কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে প্রযোজনীয় বাক্য বিনিময় করে গেছেন এবং শান্তিপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্বন্ধে নিয়মিত ভাবে খোঁজ নিয়ে গেছেন বিনয কুমার।
আফগানিস্তানের ব্যাপারে ভারত অত্যন্ত স্পষ্ট ও অবিচল নীতি নিয়ে থেকেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়া ও সমন্বয় সাধনের ব্যাপারে দৃঢ় ভাবে সহায়তা করে গেছে।
এই সব আলোচনার ফল যাই হোক না কেন, আমার কাছে একটা ব্যাপার খুব স্পট -- কেবলমাত্র ব্রাদার কান্ট্রির সহায়তাতেই বিশ্বের মঞ্চে নিজেদের বিপুল সম্ভাবনা প্রকাশ করে অবদান রাখতে সমর্থ হবে আফগানিস্তান।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে