শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে নয়, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল
২১ জুলাই মঞ্চে যা হয় তা সত্যিই দৃষ্টিকটু
- Total Shares
শহিদ দিবস মানে একটা গুরুগম্ভীর বাতাবরণ থাকবে। যিনি বা যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের স্মৃতিচারণ করা হবে। পরবর্তী প্রজন্মকে ওই দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতে হবে। সচেনতনতা সৃষ্টি করতে হবে যাতে স্বাধীন ভারতের আর কোনও সন্তানকে যেন ওই ভাবে আত্মবলিদান দিতে না হয়।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেস মহাকরণ অভিযানে পথে নেমেছিল। যুব কংগ্রেসের দাবি ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে সচিত্র পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। অতঃপর, পুলিশের গুলি। এবং, সেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালেন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। এর পর থেকে কংগ্রেস প্রতি বছর সেই দিনটিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শহিদ দিবস পালন শুরু করে দিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর যা এখন রীতিমতো প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
প্রায় দু'দশক আগের ঘটনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতে প্রলেপ পড়ে যায় মানছি। হয়ত সেদিনের নিহত ১৩ জনকে কেন্দ্র করে যে দুঃখ-বেদনার সৃষ্টি হয়েছিল তাও অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে শহিদ দিবসের নামে টলিউডের অভিনেতা অভিনেত্রীরা মঞ্চে উঠে নাচবেন, গাইবেন? তাই বলে, শহিদ দিবসকে উপলক্ষ করে বিনোদন উৎসব পালন করা হবে?
সে দিনের ছবি
আমি তৃণমূলও করিনা, কংগ্রেসও করি না। এটা ওদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বলতে বাধা নেই যে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু লাগে।
শুধু বিনোদন মূলক নয়, এই অনুষ্ঠানকে কার্যত রাজনৈতিক সমাবেশে পরিণত করে ফেলেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। অন্য দল থেকে নেতা নেত্রী ভাঙিয়ে এনে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয় এই মঞ্চ থেকে। আসলে শহিদ দিবস এখন আর শহিদদের নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ফায়দা তোলবার মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২১ জুলাই মানে টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভিড়
সেই দিন যুব কংগ্রেস এই অভিযান আয়োজন করেছিল। যে ১৩ জন মারা গিয়েছিল তারাও যুবকংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন অথচ ঘটনার পাঁচ বছর বাদে তৈরি হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস এত জাঁকজমক করে এই অনুষ্ঠান পালন করে কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে আমার মনে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমেন মিত্রের মধ্যে বিবাদকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন শহিদ দিবস একটা নয়, বরং দুটো অনুষ্ঠিত হয়। একটি গান্ধী মূর্তির পাদদেশে কংগ্রেস উদযাপন করেন, আরেকটি ধর্মতলার মোড়ে যা তৃণমূল উদযাপন করে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি আলাদা অনুষ্ঠান একমাত্র কংগ্রেসি সংস্কৃতিতেই সম্ভব।
শহিদ দিবসকে রাজনৈতিক সমাবেশে পরিণত করেছে তৃণমূল
ধর্মতলার মোড়ে তো নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে ফেলেছে তৃণমূল। আর কোনও দলকে সভা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। অথচ নিজেরা যখন ইচ্ছে তখনই অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফেলে। ২০১৪ সালে অমিত শাহের সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে। আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই। শেষ পর্যন্ত মামলা জিতে আদালতের নির্দেশে এক ঐতিহাসিক জনসভা করেন আমিত শাহ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সিদ্ধান্ত যে অগণতান্ত্রিক তা আদালতের নির্দেশেই প্রমাণিত। গণতন্ত্র রক্ষা করতে না পারলে পতন অবশ্যম্ভাবী ভারতের ইতিহাস তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আর, শহিদ দিবসের নামে বিনোদনমূলক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করে সেই পতন রোধ করা যায় না।