নির্বাচনে নজর পুরোপুরি দিল্লির দিকে ঘোরাতেই ব্রিগেডের এই জনসভা
মমতা যা বুঝেছেন সিপিএমও সে কথা বুঝেছে, কিন্তু ওষুধ জানা নেই তাঁদের
- Total Shares
ব্রিগেড উপচে পড়া লোক, মঞ্চ ভরা সর্বভারতীয় নেতা। শনিবার ব্রিগেডের এই ছবিটাই বলে দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা সফল। ছ’মাস আগে ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এই সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন তখন তিনিও হয়তো বুঝতে পারেননি মঞ্চের চেহারাটা এত বিস্তৃত হবে। শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল।
পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। (ছবি: সুবীর হালদার)
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতে যাওয়ার পর থেকেই বিরোধী পরিসরে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে হতাশাগ্রস্ত বামপন্থীদের ভোট বিজেপির ঝোলায় যেতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও কংগ্রেসি ভোটও সেই পথে পা বাড়িয়েছে। অর্থাৎ এই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট থেকেই একদিকে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। বামফ্রন্টের এখনও যে টুকু ভোট অবশিষ্ট রয়েছে তাদের একটা বড় অংশ মনে করছে, তৃণমূলকে জব্দ করতে হলে বিজেপিকে ভোট দিতে হবে।
সিপিআইএম নেতৃত্বও এই রোগটা ধরতে পেরেছেন কিন্তু ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেননি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত বিচক্ষণ নেত্রী। রাজ্য রাজনীতিতে এই একের বিরুদ্ধে এক হওয়ার প্রবণতা তাঁর চোখ এড়ায়নি। বিশেষ করে কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও নদিয়ায় এই সমীকরণ যে জোরালো হয়েছে তা তিনি বিলক্ষণ বুঝেছেন। এর পাশাপাশি অবৈধ বালি খাদান, পাথর খাদান ও কয়লা খাদানে দলের একটা অংশ জড়িয়ে পড়ায় মানুষের যে ক্ষোভ বাড়ছে তাও তিনি বুঝতে পেরেছেন।
এই কারণেই গত কয়েকমাসে তিনি এই সমস্ত জেলায় যতগুলো প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সভা করেছেন সেখানে এই প্রত্যেকটি বিষয়ে তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বাম-বিজেপির ভোটের সমীকরণকেও তিনি তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। এই বিষয়গুলো ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ছায়া ফেলতে পারে বলে তিনি মনে করেছেন।
পাশাপাশি ক্ষমতায় আসার পর এই আট বছরে কিছুটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মনোভাবও যে তৈরি হয়েছে তাও ভালো করে জানেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই কারণেই ২০১৯-এর লোকসভা ভোট যে রাজ্যের ইস্যু নয়, তা দিল্লির ইস্যু সে কথা মানুষকে বোঝাতে তাঁর মাস্টারস্ট্রোক শনিবারের ব্রিগেড।
এই রাজ্যের মানুষকে ব্রিগেড থেকে তিনি বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন, ভোটটা হবে দিল্লিতে পালাবদলের। রাজ্যের রাজনৈতিক ইস্যু সেখানে গৌণ। ভোটের ইস্যুটাকে পুরোপুরি দিল্লির দিকে ঘুরিয়ে দিতে তিনি সমর্থ হয়েছেন।
শনিবার ব্রিগেডে ২৩টি দলের গলায় একই সুর শোনা গিয়েছে। প্রত্যেকেই তীব্র ভাবে বিজেপি শাসনকে নিশানা করেছেন, উনিশের ভোটকে দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসাবেই তুলে ধরেছেন।
ব্রিগেডের সভায় বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ছবি: সুবীর হালদার)
আর শত্রুঘ্ন সিনহা, এমকে স্ট্যালিন বা তেজস্বী যাদবের মতো কয়েকজন নেতা তাদের বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের বিষয় টেনেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে সুশাসনের কথাই বলেছেন।
অর্থাৎ বলা যায়, প্রথম রাউন্ডে পুরোপুরি সফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর ফল কতটা ফলবে, তা নির্ভর করছে আরও কয়েকটি রাউন্ডের লড়াইয়ের উপর।