২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধতে পারে?
দু’টি ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে
- Total Shares
স্বাধীনতার পর থেকে দেশে ১৫ বার লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে ছ’বার নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে কংগ্রেস এবং চারবার তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জোট সরকার চালিয়েছে।
অতএব, সব মিলিয়ে তারা ৪৯ বছর দেশ সাসন করেছে।
জওহরলাল নেহরু: ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, তার পরেও কয়েক দশক শাসকের আসনে ছিল কংগ্রেস (ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস)
উল্টোদিকে, জোটে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সরকার চালিয়েছে বিজেপি এবং ২০১৪ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এখনও সরকার চালিয়ে আসছে।
অতএব তারা শাসন করেছে মোট দশ বছর।
অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রথম বিজেপি প্রধানমন্ত্রী (ছবি: পিটিআই)
আগামী লোকসভা নির্বাচনে কী ঘটবে? এবং রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড় এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কী ঘটবে?
আমার মনে হয়, দুটি সম্ভাবনা রয়েছে:
(১) বড় ধরনের কোনও দাঙ্গা বাধানোর ব্যাপারে উস্কানি দেওয়া হবে না অথবা (২) উস্কানি দেওয়া হবে।
যদি প্রথম সম্ভাবনাটি বাস্তব হয় তা হলে বিজেপিকে ভীষণ ভাবে ভুগতে হবে এবং লোকসভায় ১২৫টির বেশি আসন তারা পাবে না, যা স্পষ্টতই সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসন থেকে অনেক কম। রাজ্যগুলির ভোটের তারা একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে।
এর কারণ বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বলতে যা বোঝায়, সেই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা (ব্রাহ্মণ, রাজপুত, বণিক, ভূমিধর প্রভৃতি) ব মিলিয়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশও হবে না – স্পষ্টতই জয়ের পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।
শুধু তাই নয়, ‘বিকাশ’ রয়ে গেছে কথার কথা বা চমক আর রামমন্দির এখন আর কোনও ইস্যু নয়।
এক সময় ভোট টানার জন্য বাবরিকেই ইস্যু করত বিজেপি (ছবি: পিটিআই)
তার বদলে ম্লান সত্যটি হল পর্বতপ্রমাণ বেকারত্ব, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি (যার ফলে ট্রেন ও ট্রাকের মাধ্যমে পাঠানো হয় বলে খাদ্যপণ্য সমেত সব ধরনের পণ্যের দামও বাড়ছে), কৃষকদের হতাশা বাড়ছে, টাকার দাম পড়ছে প্রভৃতি।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার মোকাবিলা করতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে (ছবি: পিটিআই)
এই সমস্যার মোকাবিলা প্রত্যেককেই করতে হচ্ছে, তাই হতে পারে যে উচ্চবর্ণের একাংশ পর্যন্ত বিজেপিকে এ বারের মতো ভোট দিলেন না, যা তারা আগেও করেছে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন কংগ্রেসও লোকসভা ভোটে ১২৫টির বেশি আসন পাবে না, কারণ সত্যি কথা বলতে কী, কংগ্রেসের প্রতি কারও কোনও আকর্ষণই নেই।
তিনি কি ভোট টানতে পারেন? (ছবি: পিটিআই)
সুতরাং লোকসভায় বাকি ২৮২টি আসন পাবে আঞ্চলিক দলগুলি, যারা সত্যিকারের শক্তি হিসাবে প্রতীয়মান হবে, কেন্দ্রে জোট সরকার গড়বে এবং একজন পুতুল-প্রধানমন্ত্রী হবে (যাঁর মেয়াদ হবে ৬-১২ মাস, তারপরে সরিয়ে দেওয়া হবে) এবং দলগুলি মতো লোভনীয় মন্ত্রক বিশেষত অর্থমন্ত্রক পাওয়ার জন্য লড়াই করবে।
এই ধরনের জোট সরকার তৈরি হলে তারা সর্বক্ষণই অন্তর্কলহ ও লড়াইয়ে ডুবে থাকবে, যেমন ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পরে জনতা পার্টি সরকার গঠন করার পরে যে অবস্থা হয়েছিল। জোটসঙ্গীরা শুধু নিজেরা এবং তাঁদের নিকটাত্মীয়দের জন্য ক্ষমতা পেতে চান, তখন ওই সব ক্ষমতালোভী লোকজন ও তাঁদের সহযোগী গুণ্ডারা ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো জনতার সর্বস্ব লুঠে নিতে চান, দেশের লোকের ভালো করার ব্যাপারে তাঁদের কোনও রকম সদিচ্ছা থাকে না। এটা হল প্রথম চিত্র।
কিন্তু দ্বিতীয় পরিস্থিতিটি হলে তখন কী হবে? বিজেপি কি ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত? যতই হোক, তারা মাত্র দশ বছরের জন্য সেই ক্ষমতানামী সুমিষ্ট ফলটির স্বাদ পেয়েছে, উল্টোদিকে তাদের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অর্ধশকত ধরে সেই ফল ভোগ করেছে।
তাই এক কথায় উত্তর হল – না। কেউই ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তা হলে ক্ষমতা ধরে রাখার উপায় কী?
একমাত্র উত্তর হল দ্বিতীয় সেই ভয়ার্ত পরিস্থিতি: ভয়াবহ 'দাঙ্গা' লাগাতে উস্কানি দেওয়া দেওয়া, সেই ভয়াবহ দাঙ্গা যা বেধেছিল গুজরাট, মুজফফরনগর প্রভৃতি জায়গায় যেখানে সংখ্যালঘুরাই মার খেয়েছিল।
যখন সাম্প্রদায়িক সত্ত্বা জ্বলে উঠবে, যে হিন্দুরা জাতপাতে বহুধাবিভক্ত তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে একজোট হতে চাইবে (রামজন্মভূমি নিয়ে বিক্ষোভের সময় যা হয়েছিল)।
তারপরে ভোট ঘোষণা করা হবে – ১৯৮৪ সালে শিখ দাঙ্গার পরে রাজীব গান্ধী সরকার যা করেছিল এবং যার ফলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ঝেঁটিয়ে ভোট পড়েছিল।
আমি নিঃসন্দেহ যে দ্বিতীয় পরিস্থিতিটিই ঘটতে চলেছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে