কংগ্রেসকে আসন প্রায় না ছেড়ে মায়া-অখিলেশের আসন সমঝোতা গল্প না সত্যি?
২০১৪ সালে কংগ্রেসের অবস্থা কী ছিল তা দিয়ে বিচার করতে পারে না এসপি-বিএসপি
- Total Shares
সম্ভাব্য যোগদানকারীদের চেয়ে অনেক বেশি কথা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মহাজোট বা হিন্দিতে মহাগটবন্ধন নিয়ে, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ নিয়ে যথেষ্ট উগ্বিগ্ন।
মহাজোট নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ চিন্তায় (পিটিআই)
২০১৪ সালে দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটিতে অভূতপূর্ব সমর্থন পেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী যা তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পালে হাওয়া জুগিয়েছিল, আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে এই রাজ্যেই রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজেপির কাছে বড় চিন্তার কারণ হল মহাজোট।
৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি, তার অর্থ তারা ২০১৯ সালেও এই ফলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। তবে বিজেপির যাঁরা কর্তাব্যক্তি তাঁরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো করে জানেন যে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং বহুজন সমাজপার্টির জোট হলে খুব সহজেই এ ই ফল উল্টো দিকে ঘুরে যাবে।
এ ক্ষেত্রে যদি বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার করে যে সম্ভাব্য ওই জোটের মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, তা হলে তাতে অবার হওয়ার কিছু নেই। এখন তারা জোর কদমে প্রচার করছে যে এসপি এবং বিএসপির মধ্যে জোট হলে তারা কংগ্রেসকে দু’টির বেশি আসন ছাড়বে না। মজার কথা হল এসপি এবং বিএসপি-র কোনও নেতার কাছে কোথাও কখনও এই ধরনের কোনও কথা কখনও শোনা যায়নি।
সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি কোথাও এই ইঙ্গিত দেয়নি যে তারা কংগ্রেসকে দুটির বেশি আসন ছাড়বে না, তবে এ নিয়ে জল্পনা চলছে। (সূত্র: পিটিআই)
বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্ভাব্য মহাজোটকে লক্ষ্য করে এই ধরনের জল্পনা ভেসে যাচ্ছে। এমনকি মূলধারার সংবাদমাধ্যমও খবর প্রকাশ করেছে যে ২০১৯ সালে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিচ্ছে না সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজপার্টি। যদিও বহুজন সমাজ পার্টির জাতীয় মুখপাত্র সতীশচন্দ্র মিশ্র এবং সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র ঘনশ্যাম তিওয়ারি এই ধরনের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে মহাগটবন্ধন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি।
শুধু তাই নয়, সদ্যমাপ্ত বিধানসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের জয়ের পরে কংগ্রেসের অন্দরে যখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন চলছে তখন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র বারে বারে বলছিলেন, “জয়ের পরেও যদি কংগ্রেস দলের মধ্য বিভাজন এত তীব্র থাকে তা হলে ২০১৯ সালে বহুদলীয় মহাজোট কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে?”
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র প্রশ্ন তুলেছেন মহাজোটের সম্ভাবনা নিয়ে (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে)
ঘটনা হল, উত্তরপ্রদেশে মহাজোটের বিরুদ্ধে যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে তার মধ্যে কোনও সারবত্তা নেই। একথা সকলাই জানেন যে দরকষাকষির ক্ষেত্রে মায়াবতী অত্যন্ত কঠিন ঠাঁই হওয়ায় তাঁকে অন্য কারও শর্তে সহজে রাজি করানো খুব একটা সহজ কাজ নয় এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবও কার্যত তাঁর সুরে সুর মেলালে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে তাদের সঙ্গে জোট করা কংগ্রেসের পক্ষে খুবই কঠিন।
- বাজারে যে সব গুজব শোনা যাচ্ছে তা যদি সত্যি হয় তা হলে মানতে হবে যে বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি যথাক্রমে ৩৮টি ও ৩৭টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে এবং অজিত সিংয়ের রাষ্ট্রীয় লোকদলের জন্য তিনটি ও কংগ্রেসের জন্য তারা দুটি আসন ছেড়ে রাখছে।
যা শোনা যাচ্ছে তাতে তাদের যুক্তি খুব সরল – কমতে কমতে ২০১৪ সালে মাত্র দুটি আসনেই জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস – রায় বরেলি (সোনিয়া গান্ধী) এবং আমেথি (রাহুল গান্ধী)।
কিন্তু কারও সমাজবাদী পার্টিকে এই প্রশ্ন করার সাহস আছে যে ২০১৪ সালে তারা ক’টি আসনে জয়ী হয়েছিল? আসলে তাদের নিজের শক্ত ঘাঁটি থেকে পাঁচটি আসনে জয়ী হতে পেরেছিল যাদব-বংশ। আরও মজার কথা হল, বহুজন সমাজপার্টি তো খাতাই খুলতে পারেনি!
- তা হলে কোন মাপকাঠিতে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি ২০১৯ সালের জন্য আসন সমঝোতা করছে -- তারা যেখানে ২০০৯ সালের ফলাফলের ভিত্তিতে আসন সমঝোতা করছে সেখানে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে দেখানো হচ্ছে ২০১৪ সালের ফল।
২০০৯ সালে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল ২২টি আসন, কংগ্রেস পেয়েছিল ২১টি আসন এবং বহুজন সমাজ পার্টি পেয়েছিল ২০টি আসন। বিজেপি দৌড় শেষ করেছিল ১৬টি আসন নিয়ে, যদিও কল্যাণ সিং নিজে নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জোট প্রার্থীরা যত আসন চাইছে কংগ্রেস তার চেয়ে অনেক কম আসনে রাজি হয়ে যাবে এ কথা মনে করার কোনও যুক্তি নেই। তা ছাড়া কংগ্রেস যে এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হিন্দি বলয়ের তিনটি বড় রাজ্যে জয়ের পরে তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন সম্মানজনক আসন পাওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেসও সওয়াল করতে পারবে।
কংগ্রেসের উত্থানের কথা এখন অস্বীকার করতে পারবে না সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে)
যদিও, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়ে বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি এখন আসনের সিংহভাগ দখলে তপর, এ কথা লেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে গণমাধ্যমের একটা বড় অংশ। মনে করা হচ্ছে যে সদ্য সমাপ্চত ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের চাহিদা মতো আসন দেয়নি বলে কংগ্রেসের উপরে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদব বিরক্ত।
কংগ্রেসের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুক্তি ছিল, কারণ ওই তিন রাজ্যের কোনওটিতেই এই দুই দলের তেমন উপস্থিতি নেই। দিনের শেষে রাজস্থানে ৬টি আসন নিয়ে এবং মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে দুটি করে আসন নিয়ে সামান্য পার্থক্য গড়তে পেরেছে বিএসপি। অন্য দিকে সমাজবাদী পার্টির অবস্থা ভয়ানক খারাপ, তারা শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই একটি মাত্র আসনে জয়ী হতে পেরেছে, অন্য দুই রাজ্য গোল্লা ছাড়া তাদের কিছুই জোটেনি। তবে আরেকটি ব্যাপারও নিশ্চিত করেই বলা চলে যে তাদের দল ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সে কথা খুব ভালো করেই জানেন মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদব। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজপার্টি যে অবস্থান নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে সে কথা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন কারণ তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার না করেই সিদ্ধান্ত নেবেন এ কথা ধরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না – এ কথা ভাবা ঠিক নয় যে যখন মহাজোট নিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে এবং আসন বণ্টন নিয়ে কথা হবে তখন তারা ঠিক কতগুলো আসন পেতে চাইছে সে কথা বোঝা যাবে।
যদি সত্যিই মায়াবতী ও অখিলেশ যাদব কংগ্রেসকে ভদ্রগোছের আসন ছাড়তে রাজি না হয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে তা হলে এ কথা ভেবে নিতে কোনও সমস্যা নেই যে আসলে তাদের মাথার উপরে সিবিআইয়ের খাঁড়া ঝুলছে বলেই তারা মহাজোটে
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে