পঞ্চায়েতে এক দিনে রাজনৈতিক হিংসার বলি ১৯, আহতের সংখ্যা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই

বোমার চেয়ে বন্দুকে বেশি আস্থা ছিল দুষ্কৃতীদের, তাই আহত কম

 |  3-minute read |   15-05-2018
  • Total Shares

এ বারের পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণের দিন একটা নতুন ধারা দেখা গিয়েছে, আহতের সংখ্যা নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজ, আর তাদের মাধ্যমে খবর জানা বাস-ট্রেনের যাত্রী, কারও। তা হলে আহত কি তেমন কেউ হননি? রাজ্যে যেখানে ভোটগ্রহণের দিনে রাজনৈতিক হিংসার বলি সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ১৯ ছুঁয়েছে, সেখানে আহতের সংখ্যা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই কেন, সেটা বিচার করা যেতে পারে।নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শাসকদল অভিযোগ করছিল, বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকে অস্ত্র আনছে বিজেপি। ধরেই নেওয়া যায় যে এগুলো আগ্নেয়াস্ত্র। প্রশ্ন হল, যে দল সরকারে আছে, তারা যদি নির্দিষ্ট ভাবে জানতেই পারে যে দুষ্কৃতীরা (কোনও রাজনৈতিক দলের হোক বা না হোক) বেআইনি ভাবে অস্ত্র আমদানি করছে, তবে সরকারের সেই অস্ত্র আমদানি বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল।

bodyx_051518060925.jpg নিরাপত্তারক্ষীর টহল (ছবি: সুবীর হালদার)

বোমার খবর কম

খবরের কাগজগুলিতে প্রকাশিত খবর যোগ করলে মনে হচ্ছে, এ বার ভোটে বোমা মারার চেয়ে ঢের বেশি গুলি চলেছে। ভাড়াকরা গুন্ডারা নাকি বাইকে চেপে ঘুরেছে। তারাই অস্ত্রধারী।

বোমা থেকে পালিয়ে বাঁচা যায়, স্প্লিন্টার ছিটকে লাগলে কমবেশি আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু গুলি বুকে-পিঠে লাগলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি, তাই বন্দুক দেখে অনেকে গৃহবন্দি থেকেছেন, গুলি যাঁর লেগেছে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বোমা বাঁধতে গিয়ে অবশ্য সোমবার রাতে আবার দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

পঞ্চায়েত ভোটগ্রহণের দিন যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের নিজের দলের লোক বলে দাবি করছে সব দলই, তবে পুলিশ রিপোর্ট বলছে, নিহত ৬ জনের অর্ধেকই তৃণমূলের। পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ দেখাতে পুলিশ হিংসা কমিয়ে দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। আর পুলিশের পরিসংখ্যান প্রশানের সঙ্গে মিলবে এবং প্রশাসনের পরিসংখ্যান শাসকদলের সঙ্গে সঙ্গে মিলবে, সেটাই স্বাভাবিক।

body_051518060946.jpgভোটদাতা নেই, ঘুমের দেশে ভোটকর্মী (ছবি: সুবীর হালদার)

হিংসা বনাম সন্ত্রাস

কতটা হিংসা হলে তাকে সন্ত্রাস বলা যায়? হিংসার সঙ্গে বা মৃত্যুর সঙ্গে কখনও সন্ত্রাস শব্দটাকে খুঁজতে যাওয়া ঠিক নয়। একটা ছোট্ট ঘটনা, মানে জনপ্রিয় গল্প অবলম্বনে পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করা যাক।

বছর খানেক আগে মুক্তিপ্রাপ্ত থ্রিডি ছবি জঙ্গলবুক দেখেছেন নিশ্চয়। সেখানে সন্ত্রাস খুব সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। শের খান বলছে, “অব দেখো ডর কেয়া হোতা হ্যায়।” এক নিমেষে ছুড়ে ফেলেছে নেকড়েদের সর্দার আকিলাকে।

তার পায়ের ফাঁকে যখন খেলা করছে রক্ষা নামে নেকড়ে-মায়ের সন্তানরা, সেই পরিস্থিতিতে রক্ষা ছিল সন্ত্রস্ত। মৃত্যু হয়েছিল শুধু আকিলার। আর ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে পুরো অরণ্যে, সে ভয় মৃত্যু ভয়।

body1_051518061002.jpg

আকিলাকে ছুড়ে ফেলছে শের খান,  জঙ্গলবুক ছবির দৃশ্য

এক কথায়, মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে কোনও ভাবেই সন্ত্রাসের বিচার করা যায় না।

আদালতের কথা

নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে পারেনি বলে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এ রাজ্যের বিরোধী দলগুলির একাংশ। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, আদালত আর্জি শুনবে, তবে গ্রীষ্মাবকাশের পরে। অর্থাৎ বিরোধী দলগুলি যদি এখনই কয়েকটি জায়গায় পুনরায় ভোটগ্রহণ দাবি করে, তা হলে সেই আর্জি আদালতে পেশ করা মুশকিল, সিদ্ধান্তের ভার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের।

রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার ভোটের পরে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। নিন্দুকরা বলছে, রাজ্য প্রশাসনের নবান্ন কী বলে, কোথায় পুনরায় ভোটগ্রহণের কথা বলে, সে সব বুঝে নিয়ে তার পরে বিবৃতি দেবেন কমাশনার। তাঁর বিবৃতি খুব একটা মূল্যবান, এমন কথা কেউ বলছে না। শেষ পর্যন্ত ৫৮০টি বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

body2_051518061015.jpg

বিক্ষিপ্ত ঘটনা, সন্দেহ নেই

পঞ্চায়েত ভোট হবে আর বিশ-তিরিশটা-চল্লিশটা লোক মরবে না? আরে, দু-চারটে লাশ তো গায়েব হবেই! কে বলেছিল সাহস দেখাতে? দু-চারটে লোক মরে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে, কারও মৃত্যু হয় নিতান্তই দুর্ভাগ্যবশত। যেমন সোমবার এক ১৮ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যু হল মিছিল দেখতে গিয়ে। খবরে অন্তত সেটাই লেখা হয়েছে।

রাজ্যে পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি বুথে ভোট হয়েছে, সেখানে ৫০০টি জায়গায় গণ্ডগোল হলেও তা মাত্রই এক শতাংশ, ২৫০ জায়গায় গণ্ডগোল হলে আধ শতাংশ। আর রাজ্যে মোট ভোটারের নিরিখে নিহত কত? উত্তর পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। তাই সরকারি ভাবে যদি বলা হয়, বিক্ষিপ্ত হিংসা, তা হলে অন্তত পরিসংখ্যানের বিচারে ভুল কিছু নেই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা কথা খুব ঘুরছে: কয়েকটি নির্বিঘ্ন ঘটনা ছাড়া ভোট মোটের উপর সন্ত্রাসপূর্ণ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment