শিশুদের শৈশব সুরক্ষিত করতে ট্রাফিকিং বিলটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে, পুনর্বাসন হবে তাদের অধিকার
- Total Shares
কোটি কোটি নিষ্পাপ শিশু, যারা পাচারের শিকার হয়ে ক্রীতদাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হয়, শ্রমিকের কাজ করে তাদের সুন্দর শৈশব ফিরিয়ে দিতে হলে সুন্দর, সুস্থ, নিরাপদ ও শিক্ষিত পৃথিবী গড়তে হবে।
যে সব শিশুকে পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হয়, যেমন অস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, অশিক্ষা প্রভৃতি। তাদের কী অধিকার, তাদের জন্য সরকারি কী সুরক্ষার প্রকল্প আছে সে সব কিছুই তো তারা জানে না। তাই শিশুদের উদ্ধার করার করার পর তাদের সমস্যা সার্কবিক ভাবে সমাধানের জন্য তাদের সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের দিকে নজর দিতে হবে।
সম্প্রতি লোকসভায় যে 'দ্য ট্রাফিকিং অফ পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন) বিল, ২০১৮' পেশ হয়েছে তার যথেষ্ট ব্যাপকতা রয়েছে। কারণ এই বিলে বিদেশমন্ত্রক, শ্রমমন্ত্রক, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক, স্বাস্থ্যমন্ত্রক, আইনমন্ত্রক প্রভৃতিকে এক ছাতার তলায় এনে সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে নিবিড় যোগাযোগ বাড়ানো, শিশুপাচার সংক্রান্ত কোনও কিছু নজরে এলে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা, উদ্ধার হওয়া শিশুকে নিরাপত্তা প্রদান করা, পুনর্বাসন দেওয়া ও বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে করা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে দায় ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এই বিলে।
উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে যাতে আর কোনও দিনই সেই অন্ধকারের রাজ্যে ফিরে যেতে না হয়, তা নিশ্চিত করার একটিমাত্র উপায়ই রয়েছ – প্রতিটি ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
সম্প্রতি লোকসভায় 'দা ট্র্যাফিকিং অফ পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন) বিল, ২০১৮ পেশ হয়েছে
দেশে এই প্রথম উদ্ধার হওয়াদের পুনর্বাসনকে অধিকারের স্বীকৃতি দিতে আইন প্রণয়ন হতে চলেছে। অভিযুক্তদের বিচার, তার রায় কী হবে সে সব কোনও কিছুর উপরেই এই পুনর্বাসন নির্ভর করবে না।
সংগঠিত অপরাধ হিসাবে পাচারকে চিহ্নিত করে দিয়েই দায় সেরে ফেলা হয়নি, বরং জোর দেওয়া হয়েছে এই অপরাধ দমন করা, উদ্ধার করা ও পুনর্বাসনের দিকে। এই প্রথমবার উদ্ধার হওয়াদের পুনর্বাসনের জন্য একটি তহবিল তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এই তহবিলের অর্থ খরচ করা হবে যারা উদ্ধার হয়েছে তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণের জন্য, যেমন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও মানসিক সহায়তা প্রদানের জন্য, আইনি সহায়তা ও নিরাপদ আবাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে।
স্বাধীনতার সাত দশক পরে এবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে হবে, আমরা কি শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক শৈশব দিতে পেরেছি? শিশুদের সমাজ ও তাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত না হলে আমাদের দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। এই দিশা নতুন বিলে আছে।
উদ্ধার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিরাপদ স্থানে রাখার জন্য 'প্রটেকশন হোম'-এর প্রস্তাব রয়েছে। পরে পুনর্বাসনের জন্য তাদের রাখা হবে ‘রিহ্যাবিলিটেশন হোম'-এ, সেই প্রস্তাবও রয়েছে। প্রতিটি হোমের সরকারি নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক হবে এবং কেউ যদি এই নিয়ম লঙ্ঘন করে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ যার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাচার সম্পর্কিত এই বিলে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের সংজ্ঞায় অন্য মাত্রা এনেছে। বিলটিতে বলা হয়েছে যে যাকে পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে তাকে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, কর্মশিক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাও দিতে হবে। এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে শারীরিক ও মানসিক সহায়তা দিতে হবে। তাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ করতে দিতে হবে, প্রয়োজন মাফিক আইনি সহায়তা দিতে হবে ও নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
শিশুরা যাতে পাচারকারী ও যৌনব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের থেকে নিরাপদে তাকতে পারে এবং সরকারি সুবিধার সুযোগ নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তারা যাতে সুস্বাস্থ্যের, শিক্ষার অধিকারী হতে পারে, দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং বড় হতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনিক পরিকাঠামো সংস্কার করে শিশুদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে হবে, তারা যাতে কোনও ভাবে কোনও অন্যায়ের শিকার না হয়। সমাজকেও দৃষ্টিভঙ্গি বদল করতে হবে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন