পেটেন্ট আইন নিয়ে আরও কড়া হোক বিচারবিভাগ

পেটেন্টের এভারগ্রিনিংকে কেন্দ্র করে শীর্ষ আদালত কম খরচে চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়েছে

 |  3-minute read |   21-05-2018
  • Total Shares

যে সব আইনি লড়াইতে দৃষ্টান্তমূলক রায় দেওয়া হয়েছে সেগুলোই শিরোনামে এসেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো রায় সাধারণ মানুষ ও তাঁদের জীবনের উপর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব ফেলেছে বলেই সেগুলি মেইলস্টোন রায় হিসেবে দেখা হয়।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ১ এপ্রিল, একটি দামি ক্যান্সারের ওষুধের পেটেন্ট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এমনই একটি রায় দিয়েছিল। একটি দামি ক্যান্সারের ওষুধ- গ্লিভাককে আরও উন্নত করে বাজারে আনতে চেয়ে সুইস ফার্মাসিউটিকাল সংস্থা নোভার্টিস পেটেন্টের আবেদন করেছিল কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দেয়।

এর ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলো একই ওষুধ অনেক কম দামে তৈরি করা শুরু করে। উদ্ভাবনীর মধ্যে কোনও ছিল না বলে মনে করে আদালতে নোভার্টিসের পেটেন্টের দাবি খারিজ করে দেয়। বড় সংস্থাগুলি এই কৌশলে ওষুধগুলিকে চিরকালের জন্য পেটেন্ট যাকে "এভারগ্রিনিং" বলা হয়, তা করিয়ে নেয়। কোনও একটি নির্দিষ্ট ওষুধের মূল পেটেন্টটির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন করে পেটেন্ট নিতে হয়। পেটেন্টের নবীকরণের সাহায্যে ওষুধ সংস্থা সেই ওষুধটির বিক্রি চিরকাল চালিয়ে যেতে পারে।পাঁচ বছর পরেও সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টির ফলে হাজার হাজার দরিদ্র পরিবারের কোনও না কোনও সদস্য যিনি ক্যান্সারে ভুগছেন তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে এই সব পরিবারগুলিকে সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে হয়নি।

মুম্বাইয়ের ক্যান্সার পেশেন্টস এইড এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র কুমার সাপ্রু, যিনি এই পেটেন্টের লড়াইটি শুরু করেন, বলেন গ্লিভাকের মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছিল সেটিকে এখনও একটি আদর্শ রায় বলে ধরা হয়। তাই এখনও বহুজাতিক ওষুধের সংস্থাগুলি যখন তাঁদের পেটেন্টকে এভারগ্রিনিং করার দরখাস্ত করে তখন পেটেন্ট দপ্তর ও ভারতের আদালতগুলি এই রায়টিকে একটি পথপ্রদর্শক রায় হিসেবে গণ্য করে।

সম্প্রতি কলকাতার একটি পেটেন্ট দপ্তর একটি জাপানি ওষুধ সংস্থা ওৎসুকার এমনই একটি পেটেন্টের দরখাস্ত খারিজ করে দেয়। সংস্থাটি একটি অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ আরিপিপ্রাজলের পেটেন্টের দরখাস্ত করায় তা নাকচ হয় যায়। সাপ্রু যখন মুম্বাইতে জনসন অ্যান্ড জনসনে কর্মরত ছিলেন তখন তিনি একটি হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত একটি শিশুকে কষ্ট পেতে দেখে পেটেন্ট অধিকারের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে সংস্থার কার্যনির্বাহী সচিবের পদ থেকে অবসর নেন।

patent_body_052118042508.jpgবড় সংস্থাগুলি এভারগ্রিনিং কৌশলে ওষুধগুলিকে চিরকালের জন্য পেটেন্ট করিয়ে নেয়

যেসব রোগী ক্রনিক মেইলোয়েড লিউকেমিয়ায় (সিএমএল) ভুগছেন তাঁদের চিকিৎসায় পেটেন্ট নিয়ে এই রায়টি একটি আশীর্বাদ। এই ক্যান্সার রোগীর রক্ত ও অস্তিমজ্জাকে আক্রান্ত করে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই ক্যান্সারটিকে দুরারোগ্য বলে মনে করা হত। অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপনই ছিল একমাত্র চিকিৎসা, যা ছিল খুবই খরচসাপেক্ষ।

যে সব সিএমএল-এর রোগী এই চিকিৎসাটির খরচ বহন করতে পারবেন তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই দীর্ঘ পাঁচ বছর ইমাটিনিইব (গ্লিভাক এই অনু দিয়ে তৈরি হয়) সাহায্যে চিকিৎসা করাবার পর সম্পূর্ণ সাইটজেনেটিক রেমিসানের সাহায্যে পরের চিকিৎসা করান।

সাপ্রু বলেন, “এক বছরের জন্য ইমাটিনিইবি কিনতে হলে ২০০১ সালে দাম পড়ত প্রায় ২৬,০০০ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় যা ছিল প্রায় ১৬,৮২,০০০। নোভার্টিস এই ওষুধটিকে "খুব দামি হলেও ন্যায্য" বলে আখ্যা দিয়েছে। প্রত্যেকবছর এই ওষুধটির দাম বাড়তে বাড়তে ২০১৪ সালে ১,৩২,০০০ ডলার অর্থাৎ ৮৫,৩৯,০০০ টাকায় এসে ঠেকেছিল আর বর্তমানে ওষুধটির দাম ১,৪৬,০০০ ডলার অর্থাৎ ৯৪,৪৫,০০০ টাকা। পেটেন্ট পাওয়া এই ওষুধটি ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ৪.৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০,৪০৬ কোটি টাকার ব্যবসা করে। অন্যদিকে ভারতের প্রায় দশটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা এই একই ওষুধ তার জেনেরিক নামে এক মাসের জন্য মাত্র ১,০০০ থেকে ১২,০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।"

হাসপাতালগুলিতে করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্যক্ষমতার দিক দিয়ে এই জেনেরিক ওষুধটি গ্লিভেকের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়, বরং বেশি। এই ওষুধটির সাহায্যে সিপিএএ প্রায় হাজারের উপর সিএমএল রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা চালাচ্ছে।

পেটেন্টের এভারগ্রিনিংকে কেন্দ্র করে দেশের শীর্ষ আদালত কম খরচে চিকিৎসা লাভের বিষয়টিকে সমস্ত বড় ওষুধ সংস্থার লাভের চেয়ে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এই ধরনের জীবনদায়ী ওষুধগুলিকে চিহ্নিত করে যাতে ভারতীয় সংস্থাগুলি ওষুধগুলো বানাতে পারে তাই আদালতের সেই লাইসেন্স তাঁদের মঞ্জুর করা উচিৎ।

এমন অনেক ওষুধ আছে যেগুলো এই ধরণের গোলমেলে সব পেটেন্টের নিরাপত্তার মারপ্যাঁচে পড়ে থাকে ও সাধারণ মানুষের সামর্থের বাইরে থেকে যায়। ভারতীয় পেটেন্ট আইন তারা মৌলিক উদ্ভাবন ও পুনোরুদভাবনা এই দুটিকেই সমর্থন করলেও কিন্তু কোনও একটি ওষুধের পেটেন্টের মেয়াদ বাড়িয় এই বড় ওষুধ সংস্থাগুলির লাভের পথ করে দেওয়া উচিৎ নয়।

(সৌজন্যে মেল টুডে)

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DINESH C SHARMA DINESH C SHARMA @dineshcsharma

Journalist, columnist and author based in New Delhi

Comment