আত্মহত্যা রুখতে সামাজিক সচেতনতা ও প্রচার দরকার, প্রিয়জনের ক্ষেত্রে কী করবেন
আত্মহত্যাকারীদের ৬০ থেকে ৯০ শতাংশই মানসিক ব্যধির কারণে এ কাজ করেন
- Total Shares
সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হল। সমীক্ষা বলছে গত বেশ কয়েক বছরে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার বেড়েছে লাফিয় লাফিয়ে।
উন্নত দেশগুলিতে ১৫ বছর থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। যাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে বা কারও যদি স্বামী বা স্ত্রী মারা গিয়ে থাকেন তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা অনেক বেশি।সারা পৃথিবীতে যতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ ঘটনা ঘটে ভারত এবং চিনে। আমাদের দেশে যত মানুষ আত্মহত্যা করেন তাঁদের ৬০ থেকে ৯০ শকাংশই কোনও না কোনও ভাবে মানসিক ব্যাধির শিকার।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন
কেন আত্মহত্যা?
যখন কোনও কারণবশত একজন ব্যক্তির দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় এবং সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসারা তাঁর আর কোনও উপায় থাকে না বলে তিনি মনে করেন তখন তাঁর মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়। কারণ তিনি মনে করেন যে তাঁর আর বেঁচে থাকার কোনও উপায় নেই। কেউ যদি কোনও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারেন তখন তাঁর মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায়, শারীরিক যন্ত্রণা অসহনীয় হলেও তাই। মুক্তির জন্য তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন।
আত্মহত্যা মূলত দু'ধরণের হয়। অনেক সময় কেউ পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করেন আবার কখনও দেখা যায় হঠাৎই কোনও ঝোঁকের বশে কেউ আত্মহত্যা করলেন। কোনও কারণে কেউ যদি অবসাদে ভোগেন বা অত্যাচারিত হন, তা হলেও তিনি আত্মঘাতী হতে পারেন।
মানসিক অসুস্থতার আত্মহত্যার হার অন্য কারণের চেয়ে বেশি: যেমন বিষণ্ণতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, স্কিৎজোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়া, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি এবং উদ্বেগ।
বহু ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না হলে বা পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে না পারলে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কারও যদি প্রণয়ের সম্পর্ক ভেঙে যায় তা হলেও তিনি আত্মহত্যাপ্রবণ হতে পারেন। এছাড়াও বাড়িতে কোনও অশান্তির ফলে অপ্রীতিকর বা আকস্মিক কোনও ধাক্কার কারণেও কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন।
সম্প্রতি তরুণ-তরুণীরা অনলাইন গেম খেলেও আত্মঘাতী হচ্ছে, সেই খবর সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।
উন্নত দেশগুলিতে ১৫ বছর থেকে ২৫ বছরের ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি
সামাজিক কারণও এ জন্য দায়ী হতে পারে। যাঁরা বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের অনেককেই আত্মহত্যা করতে দেখা গেছে। এখানে সবচেয়ে বড় কারণ হতাশা। তবে যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করানো হয় তাহলে এঁরা আত্মহত্যা করেন না। যদিও পরিসংখ্যান বলছে এমন বহু রোগী আছেন যাঁরা চিকিৎসা করানোর পরেও আত্মহত্যা করেছেন।
আমাদের দেশে কৃষক আত্মহত্যা একটা বড় সমস্যার আকার নিয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি নাগপুরের বিদর্ভ অঞ্চলে একের পর এক কৃষক ঋণের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
আত্মহত্যা কী ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব
কারও মনে যদি অবসাদ দেখা দেয় এবং তাঁর যদি মনে হয় যে তাঁর আর বেঁচে থেকে কোনও লাভ নেই তখন মনের মধ্যে তা চেপে না রেখে সব কথা কোনও প্রিয়জনকে বলুন, তিনি আত্মীয় হোন বা বন্ধু। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তাঁর কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করান। এতে কোনও লজ্জা নেই।
বাড়িতে কিংবা এমন কোনও মানুষ যিনি মানসিক অবসাদে ভোগেন বা অন্য কোনও মানসিক ব্যাধিতে ভোগেন তাহলে তাঁর উপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখুন। তাঁকে বেশিক্ষণ চোখের আড়াল করবেন না বা একা ঘরে ঘুমাতে দেবেন না। বাড়ির বাকিদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।
এইধরণের মানুষকে অনেক সময় দিন এবং তাঁর কথা শুনুন, প্রয়োজনে বার বার শুনুন। সেই ব্যক্তিকে মনে কষ্ট দিয়ে কোনও কথা বলবেন না বা শাসন করবে না। তাঁর সমস্যাগুলো শুনুন এবং সম্ভব হলে তার প্রতিকার করার চেষ্টা করুন।
আমাদের দেশে কৃষক আত্মহত্যা একটা বড় সমস্যার আকার নিয়েছে
এই ধরণের ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এই ব্যক্তি যদি বলে যে সে আর বেঁচে থাকতে চান না বা তাঁর কিছু ভালো লাগছে না তাহলে তাঁর কোনও কথা খুব একটা হালকা ভাবে নেবেন না। সেই ব্যক্তির সঙ্গে সবসময় ইতিবাচক কথাবার্তা বলুন। তাঁর কথায় গুরুত্ব দিন প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসা দিন। মনে রাখবেন জীবন শেষ হয়ে গেলে আর ফেরত আসবে না।
বাচ্চাদের দিকে এবং যারা বয়সন্ধিক্ষণে পদার্পন করেছে তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে এখন অনেক আত্মহত্যা রোখার জন্য হেল্পলাইন আছে। যে সব মানুষ একা থাকেন তাঁদের মনে যদি কখনও এই ধরণের কোনও চিন্তাভাবনা আসে তা হলে এই হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
অনলাইন গেমস এখন আত্মহত্যার কারণ হচ্ছে
মনে রাখতে হবে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই। তাই আপনার জীবনে ঠিক কতটা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জায়গা দেবেন সেটা আপনারই হাতে।
আত্বীয়স্বজন ছাড়াও সমগ্র সমাজকে সচেতন হতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে দেশের সরকার, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যখন কোনও ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন তখন তার পেছনে সেই ব্যক্তির একটা চাপা যন্ত্রণা বা নির্দিষ্ট কারণ বা সমস্যা রয়েছে। তাই সেই ব্যক্তির দিকে সময় মতো নজর দিতে হবে, তাঁর যন্ত্রণার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সেই সমস্যার সমাধানে তাঁকে সহায়তা করতে হবে।