ভাগাড় কাণ্ডের সুফল: মাংস নিয়ে আর কোনও ধর্মের ভেদ রইল না

যারা মাংস দিয়ে ধর্ম বিচার করত তাঁরা এখন ‘মানব ধর্মে’ বিশ্বাসী, কারণ মাংসের বিচারে সবাই এখন ভাগাড়ে

 |  3-minute read |   13-05-2018
  • Total Shares

কিছুদিন যাবৎ মহানগরে সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে 'ভাগাড়ের মাংস'। রেস্তোরাঁ থেকে স্কুল, কলেজ বা পাড়ার দোকান থেকে বাজার সব জায়গাতে এটাই এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা যদি আজ থেকে বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে যাই, এই সব নকলের সূত্রপাত বোধহয় পালাবদল থেকেই হয়েছিল। কেন? ভুলে গেলেন নাকি বিষ মদ খেয়ে মৃত্যুর জন্য দু' লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব? সে যাই হোক তারপর কেটে গেছে বহু বছর। মাঝে নকল ডিম, চাল থেকে মাছ বা দুধ কোন কিছুই বাদ যায়নি।

ব্যাপারটা হচ্ছে এই সব জানার আগে তো আমরা অবলীলায় প্লাস্টিকের ডিম,চাল, ফর্মালিনে চোবানো মাছ, এমন কী ডিটারজেন্ট মেশানো দুধও হজম করে ফেলেছি, আর এখন যে ভাগাড়ের মাংসের কথা সেসব দিয়ে বানানো বার্গার, মোমো ইত্যাদি খেয়েও দিব্বি আছি। কিন্তু বিষয়টা যখন মাংস নিয়ে, তখন একটা প্রসঙ্গ না উঠলেই নয়। যারা ধর্মের বিচারে মাংস খান, মানে হালাল ছাড়া খান না, বা এক পশুর মাংস খান না, অথবা আরেক পশুর মাংসের নামে ছি ছি করেন, তারা কি আর জাত বাঁচাতে পারলেন ? কে জানে আপনার মোমোতে যে কিমা ছিল সেটা যদি ভাগাড়ে হয় তাহলে মরা মুরগি, ইঁদুর, কুকুরের পাশাপাশি কিছুটা ‘নিষিদ্ধ’ মাংস তো থাকতেই পারে।

body3_051318012757.jpgকিছুদিন যাবৎ মহানগরে সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে “ভাগাড়ের মাংস”

body2_051318012647.jpgযারা ধর্মের বিচারে মাংস খান তাঁরা কি আর জাত বাঁচাতে পারলেন?

যারা ধর্মের নামে খাবার থেকে রক্ত সবেতেই ভেদ করেন, যারা ভালোবাসার মাঝে ধর্ম খোঁজেন, যারা ধর্মের নামে আজকের দিনেও মেয়েদের ঘর বন্দি করে রাখেন তারা কি পারলেন ধর্মের প্রতি নিজের এই ঠুনকো বিশ্বাসটা ধরে রাখতে? আহা রে... সামান্য একটা ভাগাড় কাণ্ড আপনার জাত নিল?

আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ এমন আছেন যারা টেলিভিশনের সামনে কী মাংস খাচ্ছেন সেটা দেখাতে ভালোবাসেন। ধর্মতলার মোড়ে ‘নিষিদ্ধ’ মাংস খাচ্ছেন যখন দেখিয়েছিলেন সেই সব বোদ্ধারা কি এখন মুখে লেটুস বা গাজর গুঁজে টিভির সামনে আসবেন, নিজেদের মরা টি.আর.পি কে জাগিয়ে তুলতে? এত কিছু করেও বোধহয় না নিজে এগিয়ে থাকলেন, না কাউকে এগিয়ে রাখতে পারলেন।

তাই আজ যেটা হয়েছে বোধহয় সেটা ঠিকই হয়েছে। আপনার আমার পেটটা ‘ভাগাড়’-এ পরিণত হয়েছে, বা যদি এই ভাবে বলি আপনার আমার পেটটা ‘চিড়িয়াখানা’ হয়ে গিয়েছে । কত রকমের পশু যে আমাদের পেটের ভেতর ঢুকেছে কে জানে। সব খারাপের যেমন একটা ভালো দিক আছে তেমন এটার ভালো দিক বোধহয় মাংস নিয়ে কোনও ধর্মের ভেদ আর রইল না। অন্তত কলকাতার মধ্যে তো নয়ই। সল্টলেক থেকে পার্ক সার্কাস বা গড়িয়াহাট - যারা মাংস দিয়ে ধর্ম বিচার করত সবার এখন একটাই ধর্ম ‘মানব ধর্ম’ কারণ মাংসের বিচারে তো আপনি এখন ভাগাড়ে।

body_051318012900.jpgরেস্তরাঁর মালিকদের কাছে আবেদন, সামান্য মুনাফার জন্য মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না

body1_051318012942.jpgপরিচ্ছন্ন জায়গাতে উচ্চমানের সুস্বাদু খাবার, এইটুকুই তো সাধারণ মানুষের চাহিদা

তাই আর খাদ্যের বিচারে ধর্ম ভাগ না করে, যার যেটা ইচ্ছে সেটা খেতে দিন না। আমরা তো চিরকালই ভোজনরসিক, তাই নানা দেশের নানা পদ চেখে দেখতে ভালোবাসি। সেখানে জাত, ধর্ম বিচার নাই বা করলাম। পরিচ্ছন্ন জায়গাতে উচ্চ মানের সুসাদু খাবার এইটুকুই তো সাধারণ মানুষের চাহিদা। আর যারা রেস্তোরাঁ চালান তাঁদের কাছে আবেদন সামান্য, মুনাফার জন্য মানুষের জীবন নিয়ে দয়া করে খেলবেন না। লাভ কম হচ্ছে মনে হলে পরিমাণে কম দিন কিন্তু মানের সঙ্গে আপোস করবেন না।

মানুষ যদি তাদের ছোট ছোট মুনাফা ভুলে একসঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়ায়ে তাহলে শুধু ‘ভাগাড়’ কেন কোনও কাণ্ডই ঘটাতে কেউ সাহস পাবে না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SOUMYA CHATTERJEE SOUMYA CHATTERJEE

Travel freak. Aspiring film director.

Comment