মডেল ও পর্বত অভিযাত্রী, এবার মাধবীলতার গন্তব্য অ্যান্টার্কটিকা
“পথ চলা সহজ হবে না জেনেও লক্ষ্যে স্থির থেকে এগিয়ে যেতে চাই”
- Total Shares
আমরা ডিসেম্বর মাসে অ্যান্টার্কটিকা যাচ্ছি। না না কোনও মডেলিং অ্যাসাইনমেন্ট বা সিনেমার শুটিংয়ের জন্য নয়। যাচ্ছি অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন।
সারা বিশ্ব থেকে আমরা ছ'জন মহিলা দক্ষিণ মেরু (সাউথ পোল এক্সপিডিশন) অভিযানে যাচ্ছি। ভারত থেকে আমরা দু'জন মহিলা যাচ্ছি আর ইউকে থেকে চারজন যাচ্ছেন। যিনি আমাদের এই দলটির নেতৃত্ব করবেন তিনি হলেন একজন ৭৪ বছর বয়সী বিদেশী মহিলা নাম জ্যানিস মিক।
বহু দুর্গম জায়গায় ট্রেকিং করেছি
নৌকাচালান বা রোইং-এর জন্য ওনার নাম গিনেস বিশ্ব রেকর্ড-এ ও জায়গা করে নিয়েছে। প্রথমে আমি যখন এই এক্সপিডিশনের জন্য ডাক পাই তখন অনেক চিন্তা ও আশঙ্কা মনে ছিল কিন্তু ওনাকে দেখার পর এক মুহূর্তের মধ্যে মনের সব জটগুলো কেটে গেলো মনে হল ওনার বয়সে উনি যদি এতটা ঝুঁকি নিতে পারেন তাহলে আমিও পারব, আমাকে পারতেই হবে। বিশ্বাস করুন এখন আমার মনটা অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। আমাদের গাইড নিজে বহুবার অ্যান্টার্কটিকা এক্সপিডিয়ানে গেছেন। তাই আমার খুব একটা চিন্তিত নেই।
আমি বহু দুর্গম জায়গায় ট্রেকিং করেছি। আমি যখন হিমালয়ের গভীরতায় মগ্ন হয়েছিলাম তখন হটাৎ করেই এই প্রস্তাবটি পাই। বিষ্মিত হয়ে গিয়েছিলাম প্রথমে, বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে কোনও দিন স্বপেও ভাবতে পারিনি যেই বরফ রাজ্য সম্বন্ধে ভূগোলের বইতে পড়েছি বা ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছি সেখানে আমি যাব। এমন একটা দেশ যেখানে ছ'মাস দিন আর ছ'মাস রাত থাকে সেই দেশটাকে আমি নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পারব আর ছুঁতে পারব।
বরফের রাজ্য অ্যান্টার্কটিকা
প্রস্তাবটা পেয়ে যেমন আনন্দিত হয়েছিলাম আবার পরক্ষনেই মনে হয়েছিল এখনও তো কারা যাবে সেই নামগুলো চূড়ান্ত হওয়ার আগে একটা মস্ত নির্বাচন পদ্ধতি রয়েছে, তাতে কী আমি পারব? এর পর প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র পাঠাই ও একটি অনলাইন ইন্টারভিউ হওয়ার পর আমাকে বাছা হয়।
প্রথমে আমরা ল্যাটিন আমেরিকা যাব তারপর সেখান থেকে আমরা দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছব। সাউথ পোল পৌঁছে আমরা ২২০ মেইল ট্রেক করে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছব।
শারীরিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে এই ধরণের এক্সপিডিশনে যাওয়ার জন্য নিজেকে মানসিকভাবেও অনেকখানি প্রস্তুত করতে হয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশি ভাবনাচিন্তা করছি না। আমি জানি যে আমাকে এই কাজটা করতে হবে। মহিলারা প্রসব যন্ত্রনা সহ্য করে তাই তাঁদের সামনে আর যেখানও যন্ত্রনা খুব কঠিন বলে মনে হয় না।
সারা বিশ্ব থেকে আমরা ছ'জন মহিলা দক্ষিণ মেরু (সাউথ পোল এক্সপিডিশন) অভিযানে যাচ্ছি
এবার আসি এই অভিযানে যাওয়ার জন্য কী ভাবে নিজেকে শারীরিক ভাবে নিজেকে কী ভাবে তৈরি করছি। এখানে বলি শুধুমাত্র ব্যাম করা, নিয়মিত জিম যাওয়া পুষ্টিকর খাবারদাবার খেয়ে নিজের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর থেকে অনেকটাই অনন্যরকম এই প্রশিক্ষণ। আমি আগেই বলেছিলে এই অভিযানের প্রস্তুতির জন্য আমরা আয়ারল্যান্ডএ যাচ্ছি। প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে আমারদের স্লেজ গাড়ি টানা শেখানো হবে, ইগলুতে থাকা শেখানো হবে এবং কিভাবে ইগলু তৈরি করা হয় তাও সেখান হবে। এছাড়াও অন্যান্য আরও বিশেষ ধরণের ট্রেনিং-এর মাধ্যমে কোমরের জোর, পায়ের জোর কাঁধের তথা শরীরের অন্যান্য অংশের জোর বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ডিসেম্বর মাসে ওখানে গরম কাল। তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রির আশে পাশে থাকে। গরমকালে পুরোটাই দিন আর শীতকালে পুরোটাই রাত। ঝোড়ো হওয়া ও তুষার ঝড় ওখানকার আবহাওয়ার একটা বৈশিষ্ট। তাই একটুও অসচেতন হওয়ার উপায় নেই। কারণ একটু অসচেতন হলে ফ্রস্ট বাইট অবসম্ভাবী। তবে আমরা যখন ট্রেকিং-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম তখন কী ভাবে এই ফ্রস্ট বাইটের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয় সেটা আমাদের শেখানো হয়ে ছিল।
এই ধরণের এক্সপিডিশনে যাওয়ার জন্য নিজেকে মানসিকভাবেও অনেকখানি প্রস্তুত করতে হয়
তবে একটা কথা বলতে পারি নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি যেমন করছি ঠিক তেমন ভাবেই আমার বন্ধুবান্ধব, যাঁরা এর অভিযানে আমার পাশে আছেন এবং সর্বোপরি আমার পরিবারের সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাহস না দিলে হয়তো আমার পক্ষে এই পথচলাটা এতটা মসৃন হতো না। খুব সুন্দর ও নিশ্চিন্ত একটা জীবন ছেড়ে যখন ট্রেকিং-এ বা মাউন্টেনিয়ারিং-এ যাই তখন জীবনের এই নিত্যদিনের লড়াইগুলো খুব ক্ষুদ্র বলে মনে হয়।
পথ চলাটা খুব একটা সহজ হবে না জানি
খুব সুন্দর ও নিশ্চিন্ত একটা জীবন ছেড়ে যখন ট্রেকিং-এ বা মাউন্টেনিয়ারিং-এ যাই তখন জীবনের এই নিত্যদিনের লড়াইগুলো খুব ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। এই পথচলাটা খুব একটা সহজ হবে না জেনেও কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে স্থির থেকে এগিয়ে যেতে চাই।