ত্বক পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না করে ভালো করে রোদ মাখুন, ত্বক ও অস্থি সুস্থ থাকবে
আমাদের ত্বক সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করে
- Total Shares
এযুগে আমরা বেশিরভাগ সময় হয় ঘরবন্দি থাকি না হলে অফিসবন্দি। আমাদের শরীর বড় একটা সূর্যের আলো পায় না বললেই চলে। গরমকালে অতিরিক্ত গরমের চোটে আট থেকে আশি এখন প্রায় সকলেই এসি ঘরের মধ্যেই থাকেন। আবার বেশি রোদে গায়ের রং পুড়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায় আমরা অনেকেই রোদ এড়িয়ে চলি। এটা কোনও কাজের কথা নয়। এর ফলে আমাদের শরীরে ক্রমশ বিভিন্ন উপকারী ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে।
সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ। আমাদের ত্বক সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ডি তৈরি করে। ত্বক ভালো রাখতে যেমন চাই ভালো খাবারদাবার ও শরীর চর্চা, পাশাপাশি ত্বক ও মন ভালো রাখতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর। গবেষণা বলছে, সূর্যের আলো থেকে আমাদের শরীর প্রায় ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ডি-৩ পায়। এ জন্য ভিটামিন ডি সানশাইন ভিটামিন নামেও পরিচিত।
প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট সূর্যের আলো গায়ে লাগাবার চেষ্টা করুন
সূর্যের আলো থেকে আমাদের ত্বক যে ভিটামিন ডি সংশ্লিষ্ট হয়, সে কথা ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস প্রথম বলেন। অনেক পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান্সিস গ্লিসন অষ্টাদশ শতাব্দীতে মত দেন যে শরীরে সূর্যের আলো পড়লে তা ত্বকের পক্ষে ভালো।
সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি-৩ এবং ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বককে যতটা সম্ভব সূর্যের আলো দিন। এ ছাড়া ভিটামিন ডি হাড়কেও শক্তিশালী করে। সূর্যের আলোয় শরীর তরতাজা থাকে ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ভাবুন তো মেরুর কাছাকাছি যে সব দেশগুলিতে ছ'মাস রাত থাকে সেখানকার মানুষজনের অবস্থা! সৌভাগ্যবশত আমরা যাঁরা ক্রান্তীয় অঞ্চলে বাস করি তাদের জন্য দিন ও রাতের মাপ মোটামুটি সমান। তাই শরীরকে ভালো রাখতে সূর্যের আলোর পর্যাপ্ত ব্যবহার করা উচিৎ। প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ মিনিট সূর্যের আলো গায়ে লাগাবার চেষ্টা করুন।
আমরা অনেককেই এখন ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগি। ভারতীয়রা ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন। ১০ বছর আগেও চিকিৎসকরা বুঝতে উঠতে পারেননি যে ভারতীয়দের মধ্যে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি এতটা বেশি।
ডিমের হলুদ অংশ শরীরের পক্ষে উপকারী
শরীরে রোদের অভাব হলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে যেমন খুব অল্প বয়সেই ত্বকে একটা বয়সের ছাপ চলে আসা, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকেই মনে করেন আলাদা করে হয়তো রোদ গায়ে মাখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই নয় স্কুল, কলেজ, অফিস কিংবা বাড়ির ভেতরেই কাটে বেশিরভাগ মানুষের। তাই গায়ে সরাসরি রোদ লাগে না বললেই চলে। শরীরে রোদে বহুমুখী উপকারিতা আছে। শরীর ঠিকঠাক সূর্যের আলো পেলে মস্তিস্ক ভালো থাকে, হার্টকে সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। শরীরে ভিটামিন ডি পৌঁছলে হাড় ও পেশির কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
তাহলে কী শুধুই সূর্যের আলো থেকেই ভিটামিন ডি পাওয়া যায়? হ্যাঁ, ঠিক তাই। কারণ আমাদের রোজকার খাবার থেকে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না যা সূর্যের আলো থেকে পাওয়া সম্ভব। তাই শরীরে সূর্যের আলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
টুনা মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে
সূর্যের আলো ছাড়াও যে সব খাবার থেকে আমরা ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ডি৩ পাই সেগুলো হল কড মাছের তেল, চিজ, ডিমের হলুদ অংশ, ম্যাকারেল, স্যালমন, টুনা মাছ ও মেটে। এ ছাড়াও দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই ও ছানা থেকেও এই ভিটামিনটি মেলে। কমলা লেবুও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ডি-৩ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে ত্বকে যদি বেশি ও তীব্র রোদ লাগে তা হলে উপকারের থেকে অপকার অনেক বেশি। কারণ এর ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ত্বক পুড়ে যাওয়া। এমনকি গায়ে বেশি ও তীব্র রোদ লাগলে ত্বকের ক্যান্সারও হতে পারে। কারণের সূর্যের আলোর থেকে যে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি নির্গত হয় সেটা আমাদের ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর।