জেনে রাখুন কী করলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ খান, অকারণে ওষুধ খেলেও কিডনিতে পাথর হতে পারে
- Total Shares
আজকাল অনেকেই এমন একটা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, একটু চেষ্টা করলেই যেটা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অনেকেরই বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং তাঁদের পরিবারে আগে হয়তো কারও এই সমস্যা ছিলও না। আমি কিডনিতে পাথরের (কিডনি স্টোন) সমস্যার কথা বলছি।
সমস্যাটা এখন বহু লোকর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। খাদ্যাভ্যাস, জল কম খাওয়া, অল্পবয়সীদের অতিরিক্ত মাত্রায় জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড খাওয়া, সোডা খাওয়া এবং অতিরিক্ত কফি খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। গ্রীষ্মকালে পাথপ হওয়ার আশঙ্কা একটু বেশিই থাকে।
কিডনিতে পাথর হলে অসহ্য ব্যথা হয়
গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়, তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন লিটার জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শরীরে জলের অভাব ঘটলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
শরীরে জলের অভাবের ফলে প্রস্রাবের ঘনত্ব বেড়ে যায়, যার জেরেই শরীরের বাড়তি লবণ কিডনিতে জমা হতে থাকে। সেই লবণই ধীরে ধীরে জমে পাথর হয়ে যায়। কিডনিতে পাথর হলে ব্লাডারে অসহ্য যন্ত্রণা হয় এবং বেশ কিছুদিন হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে কিডনি থেকে পাথর বের করতে হয়।
কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললে গ্রীষ্মকালে তো বটেই, বছরের অন্য সময়ও কিডনিতে পাথরের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
শরীরকে ভিতর থেকে সম্পৃক্ত রাখুন
শরীর তথা কিডনি থেকে ক্ষতিকর দ্রব্য, অতিরিক্ত লবণ ও অন্য পদার্থকে বের করে দেওয়ার জন্য প্রত্যেক দিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস জল খান। যে সব মরসুমি ফল শরীরকে সম্পৃক্ত রাখে, সেই সব ফল খান।
পর্যাপ্ত জল খান
যে সব খাবার বা পানীয় খেলে শরীরে জলের অভাব দেখা দিতে পারে তেমন খাবার বা পানীয় থেকে দূরে থাকুন। যেমন মদ্যপান করা, কফি, চা, সয়া সস, অতিরিক্ত ভাজা খাবারদাবার ও মিষ্টি পানীয়।
অতিরিক্ত কফি খাবেন না
বাজারে যেসব ঠান্ডা পানীয় পাওয়া যায়, যাকে এয়ারেটেড ড্রিঙ্কস বলা হয়, সেগুলো না খাওয়াই ভালো। কারণ এর ফলে প্রস্রাবে অকজালেটের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্ক দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও বাজারে বহু পানীয় পাওয়া যায় যেগুলো খেলে চটজলদি শক্তি পাওয়া যায়। এই ধরণের পানীয় থেকেও দূরে থাকা উচিৎ, কারণ এর ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে পারে শরীর থেকে।
শরীরের ওজনের দিকে নজর রাখুন
ওজনের দিকে নজর রাখুন
শরীরের ওজনের দিকে নজর দিন, কারণ অতিরিক্ত ওজনের ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাসিড বেরিয়ে যেতে পারে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে।
প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি খাবারদাবার এড়িয়ে চলুন
এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে নুন (সোডিয়াম) থাকে, যার ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে থাকে। আবার সোডিয়াম যখন প্রস্রাবের সঙ্গে বার হয়, তখনও বেশ খানিকটা ক্যালসিয়াম টেনে নেয়। এর ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। পাশাপাশি বেশি নোনতা খাবার খেলে শরীর থেকে সাইট্রেট বেরোতে পারে না আর শরীরে তা জমা হতে থাকলে কিডনিতে পাথরের সমস্যা হতে পারে।
প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে যে খাবারদাবার তৈরি করা হয় সেগুলো খাবেন না
দ্বিতীয়ত, এই জাতীয় খাবারে তন্তু বা ফাইবারের মাত্রা খুব অল্প থাকে বলে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম অকজালেট ও ইউরিক অ্যাসিড ঠিকঠাক বেরোতে পারে না। এর ফলেও কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়।
অকজালেট সম্পর্কে সচেতন হন
যে সব খাবারে অকজালেটের পরিমাণ অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন, কারণ অকজালেট শরীরের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে গিয়ে কিডনিতে পাথরের জন্ম দেয়। চিনাবাদাম, শিম বা শিম জাতীয় খাবার, মিষ্টি আলু, পালং শাক, বিট, বাদাম ও চা যতটা সম্ভব কম খান।
চিনাবাদাম, শিম বা জাতীয় খাবার, মিষ্টি আলু, পালং শাক, বিট, বাদাম ও চা যতটা সম্ভব কম খান
অম্ল জাতীয় খাবার যেমন লেবু কিংবা কমলালেবু বেশি করে খান কারণ টক কিডনিতে পাথর হতে দেয় না।
প্রাণিজ প্রোটিন কম খান
অতিরিক্ত প্রোটিন-যুক্ত খাবারদাবার খেলে তা শরীরে সিট্রেটের মাত্রার তারতম্য ঘটে
অতিরিক্ত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারদাবার খেলে তা শরীরে সিট্রেটের মাত্রার তারতম্য ঘটায় এবং তা থেকে কিডনিতে পাথরের জমতে পারে।
অকারণে ওষুধ খাবেন না
যে সব ওষুধ পেট পরিষ্কার করে কিংবা হজমের ওষুধ, যাতে ম্যাগনেসিয়াম ট্রিসিলকেট আছে অথবা কয়েকটি কাশির ওষুধ, যাতে গুয়াইফেনসিন ও এফেড্রিন আছে সেই সব ওষুধ খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অকারণে ওষুধ খাবেন না
অতিরিক্ত ফুড সাপ্লিমেন্ট খাবেন না। আর যদি খেতেই হয় তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই খান।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন