বাড়ছে প্রস্টেট ক্যান্সার, তাই সচেতন হন ও ৫০এর পর নিয়মিত প্রস্টেট পরীক্ষা করান

পরিবারে কারোও যদি স্তন ক্যান্সার হয় তাহলে সেই পরিবারে কোনও পুরুষের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে

 |  3-minute read |   18-07-2018
  • Total Shares

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর একটি সমীক্ষা বলছে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে প্রস্টেট ক্যান্সারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে যার ফলে অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে প্রস্টেট ক্যান্সারের আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিতীয় স্থানে। রিপোর্টিতে জানা যাচ্ছে যে গত দু'বছরেই সংখ্যাটা দ্বিগুন বেড়েছে।

বয়স বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি কার্য ক্ষমতা কমে আসে এবং গ্রন্থিটি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমশ আকারে বাড়তে থাকে। প্রস্টেট ক্যান্সার হলেও এই গ্রন্থিটি আকারে বেড়ে যায়।

body5_071818033551.jpgবয়স যতো বাড়ে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়

মনে করা হতো প্রোস্টেট ক্যান্সার পশ্চিমের দেশগুলোতেই বেশি দেখা যায় কিন্তু আমাদের দেশেও এখন বহু মানুষ এই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে প্রস্টেট ক্যান্সারের আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর। আমেরিকায় প্রত্যেক বছর প্রায় দু'লক্ষ্য পঞ্চাশ হাজার নতুন প্রস্টেট ক্যান্সারে রোগ ধরা পরে। মনে রাখতে হবে বিশ্বে পুরুষদের মৃত্যুর কারণ হল প্রস্টেট ক্যান্সার।

যদিও আমাদের দেশে এখনও প্রস্টেট ক্যান্সারের আধিক্য আমেরিকার বা অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় অনেক কম তবে আমাদের দেশেও সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তবে আমাদের দেশে এই রোগটির বিষয়ে তেমন একটা সচেতনতা নেই।

সুবিধের জন্য প্রথমেই বলি কাদের মধ্যে এই রোগটা বেশি দেখা যায়।

১. বয়স যতো বাড়ে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।

২. পরিবারের কারোও যেমন ভাই বা বাবার যদি প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলে ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। একই পরিবারের তিন প্রজন্মে পর পর যদি প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে চতুর্থ প্রজন্মের পুরুষদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া পরিবারের দুজন এটিও যাঁদের বয়স ৫৫ এর থেকে কম এদের যদি প্রস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে সেই পরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের এই রোগটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোনও ব্যক্তির পরিবারে কারোও প্রোস্টেট ক্যান্সার থাকলে সেই ব্যক্তির এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।    

৩. পরিবারে কারোও যদি স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে সেই পরিবারে কোনও পুরুষের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে কারণ ব্র্যাকা জিন (BRACA gene) যার কারণে স্তন ক্যান্সার হয় সেই জিনের অস্বাভাবিকতার কারণেই প্রস্টেট ক্যান্সার হয়।

৪. এছাড়া খাদ্যাভ্যাসেরও ভূমিকা রয়েছে। মনে রাখতে হবে যে খাবারদাবার খেলে হার্ট অ্যাটাক (একে হার্ট স্ট্রোকও বলে) হয় সেই ধরণের খাবার খেলে প্রস্টেট ক্যান্সারও হতে পারে।

body1_071818033633.jpgপরিবারের কারোও যেমন ভাই বা বাবার যদি প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়  

লক্ষণগুলো কী: 

*প্রস্রাবের সমস্যা

*ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

*বারবার বাথরুমে যাওয়ার প্রবণতা

*প্রস্রাবের বেগ এলেও প্রস্রাব না হওয়া

*প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোনো

*কোমর, হাঁটু ও পিঠের নিচের দিকে যন্ত্রনা হওয়া

আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হয়েছে যার ফলে এখানে রোবটিক সার্জারিও দারুন সাফল্য লাভ করেছে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই রোবটিক সার্জারির একটা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রোস্টেট ক্যান্সারকে যদি সময় মতো চিহ্নিত করা যায় তাহলে এই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তাই আমাদের দেশে যেই হাসপাতালে এই সুবিধাটি রয়েছে তাঁরা প্রোস্টেট ক্যান্সারের রোগীদের চিহ্নিত করে তাঁদের সরিয়ে তোলার কাজে এগিয়ে এসেছে।

body4_071818033701.jpgএছাড়া খাদ্যাভ্যাসের ও অনেকটা ভূমিকা রয়েছে

৪৫ বছর বয়সের পর প্রস্রাবের কোনও রকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাধারণ একটা রক্ত পরীক্ষা করলেই জানা যাবে কোনও ব্যক্তির শরীরে এই রোগটা বাসা বেঁধেছে কি না। রকের এই পরীক্ষাটির নাম প্রস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন (পিএসএ)। পাশাপাশি আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট পরীক্ষা যেমন এমআরআই ও বায়োপ্সি করিয়ে তবেই রোগীর সম্বন্ধে হওয়া সম্ভব।

body3_071818033823.jpgটমেটো, তরমুজ ও বেরিতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন থাকে

অনেকের প্রোস্টেট বয়সের সঙ্গে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। তাই যাঁদের বয়স ৫০ এবং প্রস্টেট আকারে বড় হয়ে গেছে তাঁদের কয়েকটি প্রতিষেধক ওষুধ খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। কাঁচা কিংবা রান্না করা টমেটো, তরমুজ ও বেরিতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন বলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা প্রোস্টেট ক্যান্সারে আশঙ্কা দূর করে তাই এই ফলগুলো খেতেও চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন। আগে যেমন বলেছি খুব তৈলাক্ত খাবারদাবার না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত মদ্যপান করলেও প্রোস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে।

তাই প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে হলে দরকার সচেতনতার। পাশাপাশি ৫০ বছরের পর থেকেই প্রোস্টেট গ্রন্থিটির নিয়মিত পরীক্ষার প্রয়োজন থাকে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. AMIT GHOSH DR. AMIT GHOSH

Urologist

Comment