পরকীয়া সম্পর্কিত আইন পুরোপুরি নারী অধিকারের পরিপন্থী
আমাদের দেশে পরকীয়া সম্পর্কিত আইনটি বড়ই অদ্ভুত
- Total Shares
যে সব গণমাধ্যম বলছে যে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে নারী হোক বা পুরুষ পরকীয়া সম্পর্কিত আইন উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট যদি এই ধরণের কোনও কথা বলেও থাকে, তা হলে নিশ্চয়ই তার কোনও ভিত্তি রয়েছে, যেটা আদালতের শেষ দশ মিনিটের শুনানি না শুনলে বোঝা সম্ভব নয়।
আমাদের দেশে পরকীয়ার মতো অপরাধ এবং অপরাধটির অদ্ভুত সব আইনকে ঘিরে নানরকম ধারণা মানুষের মনে আছে। আসুন তাই প্রথমে দেখি ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী পরকীয়া আসলে ঠিক কাকে বলে।
পরকীয়া সম্পর্কিত আইন সম্পূর্ণ ভাবেই মহিলাদের বিপক্ষে
ব্যাভিচারী স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী কোনও অভিযোগ করতে পারবেন না, পুলিশেও নালিশও জানাতে পারবেন না
পরকীয়া ঘিরে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে, তার শেষটুকু দেখলে মনে হবে যেন এই আইনটিতে স্ত্রীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে এবং আইনটি স্বামীদের বিপক্ষে। বাস্তবে তা নয়, একজন স্ত্রী তাঁর ব্যভিচারী স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন না। এই ক্ষেত্রে একজন স্ত্রী বড়জোর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। আর যাঁদের আইন সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নেই তাঁরা মনে করেন যে ব্যভিচারী স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায়, আসলে স্ত্রী তা করতে পারেন না।
স্বামী যদি কোনও যৌনকর্মী, বিধবা নারী কিংবা কোনও অবিবাহিত নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে তা হলে তা পরকীয়া বলে গণ্য করা হবে না
যদি কোনও স্বামী কোনও অবিবাহিত নারী, কোনও যৌন কর্মী অথবা কোনও বিধবা নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে না। তবে একজন বিবাহিত পুরুষ যদি অন্য কারোর স্ত্রীর সঙ্গে যৌন কর্মে লিপ্ত হন তখন সেটা অপরাধ বলে ধরা হবে। রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে, যখন এই আইনগুলি তৈরি হয়েছিল তখন মহিলারা কোনও রকম আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন বলে একজন স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি বলেই মনে করা হত।
স্বামীর ইচ্ছায় কোনও স্ত্রী অন্যের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে
যদি কোনও স্ত্রী তাঁর স্বামীর ইচ্ছায় বিবাহবহির্ভূত কোনও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন তা হলে তা পরকীয়া বলে গণ্য করা হবে না। একটা বিষয় পরিষ্কার যে আইনের চোখে একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীর সম্পত্তি। একেক জনের জন্য একেক রকম আইন। শারীরিক ভাবে পুরুষরা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং তিনি সংসারের কর্তা তাই তাঁদের জন্য এক রকম আইন আবার একজন স্ত্রীর এই দিকটা নেই বলে তাঁর জন্য আইনও অন্য রকম।
শুধুমাত্র একজন ব্যভিচারী স্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী ফৌজদারি মামলা করতে পারেন
এ হেন অর্থহীন আইননের এখানেই শেষ নয়। বর্তমান আইন অনুযায়ী যে কোনও ব্যভিচারী স্ত্রীর স্বামী মনে করলে তাঁর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ তুলে অন্য একজন বিবাহিত পুরুষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারেন। স্ত্রীরা বাদী পক্ষ হতে পারবেন না। তাই পরকীয়া সম্পর্কিত এই আইনটি একজন মহিলা নয় বরং একজন পুরুষ ও অন্য আরেকজন পুরুষের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে পারেন।
সুপ্রিমকোর্ট
তাহলে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেছে?
সুপ্রিম কোর্ট যখন বলছে যে ব্যভিচার সম্পর্কিত আইন একপেশে হতে পারে না, তখন আদালত আসলে এটাই বলার চেষ্টা করেছে যে এই আইনটি শুধুমাত্র পুরুষদের স্বার্থের দিকটিকে মাথায় রেখে চলতে পারে না। আইনটির দ্বারা মহিলারাও সুবিচার পাবেন এবং কোনও রকম অর্থহীন আইনি দিক থাকবে না। তবে আদালত যে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেছে সেটা হল, যদি 'ক'-র স্ত্রী 'খ'-এর স্বামীর সঙ্গে 'খ'-র অনুমতিতেই বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন তা হলে সেটা অপরাধ কিনা।
যদিও আমাদের সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা যেখানে সবার সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা রয়েছে সেই ধারাটি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে যে এই আইনটি কোনও ভাবে নারী অধিকারের পরিপন্থী কি না কিংবা নারীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে কিনা কিংবা তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা?
রানি ভিক্টোরিয়ার সময়কালের যে মূল্যবোধ থেকে একজন নারী বা একজন স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি বলে মনে করা হত, সেটা কি এ যুগে খাটে?
তাই আবার বলছি, পরকীয়া সম্পর্কিত আইন সম্পূর্ণ ভাবেই মহিলাদের বিপক্ষে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন