শিশুকে তার নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিন ও বাস্তবের মুখোমুখি হতে দিন
আপনার সন্তানের আদর্শ হয় উঠুন আপনিই
- Total Shares
যাঁদের বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে তাঁদের দৈনিক বেশ অনেকটা সময় কেটে যায় এদের সামলাতেই। তাদের আবেগ, তাদের খুশি ও তাদের আনন্দ-- এই সব কিছু মেলাতে গিয়ে সময়ের হিসাব থাকে না, তাই মাঝে মধ্যে অনিয়মও হয়ে যায়।
একজন মাকেও নিজের জন্য কিছুটা সময় বার করে নিতে হবে। সবার আগে একটি শিশু তার মাকেই দেখতে পায়। একটি শিশু তার মায়ের ভাবভঙ্গি নকল করতে খুব ভালোবাসে। এটা আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি।
আমার সঙ্গে আমার মেয়ের সম্পর্কের নিরিখে বলতে পারি, আমার মেয়ে আমার মতো হতে চায়, আমি যে ভাবে খাই ও-ও আমার দেখাদেখি সেই ভাবেই খওয়ার চেষ্টা করে, আবার অনেক সময় আমার মুখের ভাবভঙ্গিও সে নকল করে। আমার মেয়ে সবে এক বছর বয়স হয়েছে, তবে এর মধ্যেই সে নিজের মনের কথা বুঝতে শুরু করে দিয়েছে ও অন্যানদের দেখাদেখি নকল করার চেষ্টাও করে। যদিও এই বয়সে তাদের মুখে কথা ফোটে না বলে তারা নিজেদের মনে ভাবটা কথাই প্রকাশ করতে পারে না, তবে তারা সব কিছুই বুঝতে পারে।
শিশুকে তার চারপাশের পরিবেশটাকে বুঝতে দিন এবং ওর ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। ওদের নিরীক্ষণ করতে, শিখতে ও নতুন কিছু গড়তে উৎসাহিত করুন। এই ছোট মানুষগুলো বড়দের সঙ্গে বসে করতে চায়। আপনার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলুন, দেখবেন ও যদি আপনার কথাগুলোর মানে নাও বোঝে তবুও ও ঠিক আপনার দেখাদেখি আপনার বাচনভঙ্গি নকল করে সেগুলোই আদোআদো ভাবে বলছে। বাচ্চার সঙ্গে সর্বক্ষণ কথা বললে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে, তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন সেটা তার চিন্তা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে এবং সে আবার আপনার কথার উত্তরও ভেবে দেবে।
বাচ্চাকে মাঠে খেলতে পাঠাতে ভয় পাবেন না। শরীরে কোথাও ছোট পাওয়ার ভয় থাকে বলে অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানকে মাঠে পাঠাতে চাননা। তাদের মথ্যে গিয়ে খেলতে উৎসাহ দিন এর ফলে তারা বাস্তবের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে।
প্রত্যেকটি শিশু তার নিজেস্ব গতিতে নতুন জিনিস শেখে
এটা তাদের সহজাত। প্রথমটায় আর যদি কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা হয় কিংবা সে চোট পায় তাহলে পরের বার হয়তো তারা তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সে আর ভুল করবে না। তাই বাচ্চার গায় কোথাও কোনও কাটা দাগ হলে মায়েরা চিন্তা করবেন না। মনে করুন তারা যুদ্ধে গিয়েছিল, আর সেগুলোর যুদ্ধের ক্ষত। যদিও হাতের কাছে সবসময় অ্যান্টিসেপ্টিক মলম রাখুন।
আপনার শিশুর এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি, ছুঁয়ে দেখা বাকি, অনুভব করা বাকি ও দেখা বাকি আছে। শিখতে গিয়ে যদি আপনার সন্তান চোট পায় বা ব্যথা পায়, তার মানে কিন্তু কখনওই এটা নয় যে আপনি একজন দায়িত্বহীন মা নন, বরং মাথায় রাখুন আপনার সন্তানকে জীবনে সব কিছু শিখতে হবে। তবে বাচ্চার দিকে সব সময় নজর রাখুন। তারা নিজের মতো করে সব কিছু শিখতে চাইলেও তাদের ঠিক পথে চালিত করাটা খুবই প্রয়োজন।
শৃঙ্খলা ও দৈনন্দিন নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে সময়ের কাজ সময় শেষ করা যায়।শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা পালন করতে গিয়ে শিশুর সঙ্গে খুব কঠোর ব্যবহার করা বা সব কিছুতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু তাকে ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করা শেখাতে হবে। বাচ্চারা খুব সহজেই আবেগ ও ইঙ্গিত বুঝতে পারে। আপনাকে কিছু বলতে হবে না তারা নিজেরাই সেগুলো অনুধাবন করে ও শিখে ফেলে।
শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খাবার ও পুষ্টির ভূমিকা অপরিহার্য্য। আমি আগেই বলেছি, বাচ্চারা তার অভিভাবকে নকল করে, তাই আপনার বাচ্চা যদি দেখে যে আপনি চামচ বা কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার খাচ্ছেন তখন সেও আপনার দেখাদেখি একটা চামচ দিয়ে খেতে শুরু করবে। তাদের এটা করতে দিন। বাচ্চারা যে ফর্মুলা খাবার খেয়ে সেগুলো বদলাবার আগে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর সঙ্গে পরামর্শ করুন।
আগেই যেমন বলেছি প্রত্যেকটি শিশু তার নিজেস্ব গতিতে নতুন জিনিস শেখে। কেউ খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে আবার কারোও একটু সময় লাগে। তবে তার মানে এটা নয় যে যে বাচ্চাটি ধীরে শিখছে এমনটা নয়। তারা তাদের নিজের গতিতে সব কিছু শেখে। অবশেষে পরিছন্নতার দিকটাতে আসি। একটি শিশু সুস্থ থাকলেই সে হাসিখুশি থাকবে।
তাই আপনার বাচ্চার চাহিদা গুলো বোঝার চেষ্টা করুন তাহলেই দেখবেন আপনার বাচ্চা হাসিখুশি রয়েছে এবং আপনার জগৎকে আলোময় করে তুলেছে ও আপনার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন