আপনি কি মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত?
নিজেকে নানা প্রশ্ন করতে হবে এবং সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পেতে হবে
- Total Shares
ভেবেছিলাম আমি প্রস্তুত। মনে মনে এটা ঠিক করে নেওয়ার পর জীবনের সেই বিস্ময়ের জন্য, আনন্দের মুহূর্তগুলোর জন্য, খুশির হাসি-কান্নার জন্য প্রস্তুত হতে আমার আর কিছুর প্রয়োজন হয়নি। সত্যি কথা বলতে কি, আমার সন্তান পৃথিবীতে না আসা পর্যন্ত আমার কোনও ধারণাই ছিল না যে সে আসার পর আমার জীবনটা ঠিক কতটা পালটে যাবে।
মাতৃত্ব যে একজন মহিলার জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়ে সেই বিষয়টা নিয়ে আমরা তেমন একটা চিন্তা করি না। মাতৃত্ব একজন মহিলার শক্তি ও দুর্বলতাগুলো বাইরে বের করে নিয়ে আসে ও তাঁকে একজন আদর্শ মা হয় উঠতে সাহায্য করে।
একটা ছোট্ট প্রাণকে রক্ষা করতে হবে এবং তাকে যত্ন করতে হবে এই ভাবনাটাই প্রথমে আমাকে অভিভূত করেছিল।
ছোট্ট আমার মেয়ে যে সম্পূর্ণভাবে আমার উপর নির্ভরশীল সেটা ভেবেই আমার একটা দারুন অনুভূতি হচ্ছিলো।
পাশাপাশি একটা দায়িত্ববোধ আসে ভিতর থেকে। দেখলাম হটাৎ করেই আমার চারপাশের সবাই সন্তানকে কী ভাবে বড় করতে হবে সে বিষয় নানান পরামর্শ দিতে শুরু করল। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার মনে হতে আরম্ভ করলো যে তাহলে আমি একজন ভালো মা হওয়ার যোগ্য হয়নি? আমি কি তাহলে এখনও মা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নই?
মাতৃত্বের হাত ধরে একটি মহিলার জীবনে হটাৎ আসা পরিবর্তনগুলো জন্য আগে থেকে কেউ প্রস্তুত থাকেন না। আমার মতো একজন আধুনিক নারীকে সন্তানকে ভালোভাবে বড় করে তোলবার বিষয় যাঁরা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হয় একজন অল্পবয়সী মহিলা মাতৃত্বের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হলে তবেই তাঁর মা হওয়া উচিত। আর এই প্রস্তুতির জন্য নিজেকে বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্ন করতে হবে এবং প্রশ্নর উত্তরও খুঁজে পেতে হবে।
মাতৃত্ব ভীষণ সুন্দর একটা জিনিস। মাতৃত্ব একটা দারুন অনুভূতি যা জীবনের একটা নতুন অধ্যায় খুলে দেয়ে। গর্ভাবস্থায় সব সময় নিজের স্বাস্থ্য, খাবারদাবার ও পুষ্টির দিকে নজর দিন কারণ আপনি সুস্থ থাকলে আপনার গর্ভের সন্তানটিও সুস্থ থাকবে।
জীবনের ছোট ছোট দরকার গুলোর দিকে এখনই নজর দিন কারণ আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে পরে অনেক সময় পাবেন কিন্তু সন্তান জন্মানোর পর সময়ের বড় অভাব হয়ে পরে। সে একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত আপনি আর নিজের জন্য তেমন একটা সময় বের করে নিতে পারবেন না।
তাই সন্তানের জন্মের আগেই তার প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী যেমন সন্তানের থাকবার ঘর ঠিকঠাক করা, ডায়াপার কিনে রাখা এবং এইরকম বিভিন্ন দরকারি জিনিসপত্র একত্রিত করা আরম্ভ করুন। এই কাজের জন্য বাড়ির অন্য কারোও সাহায্য নিতে পারেন। এভাবে আপনি নিজের জন্যও কিছুটা সময় বার করতে পারবেন। বাচ্চার কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের কাজগুলোকেও সেরে ফেলতে হবে।
অনেক সময় মহিলাদের উপর অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের এও বলা হয় যে একজন বিবাহিত মহিলার জন্য যথাযত কাজ হল সন্তানের জন্ম দেওয়া। অন্যান্যরা যেন তাঁদের সিদ্ধান্ত আপনার উপর চাপিয়ে দিতে না পারে।
মা ও সন্তানের সম্পর্কটা যেমনই দীর্ঘস্থায়ী তেমনই বিশেষ তাই এই সম্পর্ক থেকে আমরা রোজ কিছু না কিছু শিক্ষা পাই। এমন কোনও বই নেই যা আপনাকে শিখাতে পারে কিভাবে বাচ্চা বড় করতে হয়। ভাগ্গিশ নেই। সন্তানকে বড় করতে হলে নিজের মধ্যে তলিয়ে দেখতে হবে এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে তার উত্তর পেতে হবে।
আপনার মন ও আবেগ মাতৃত্বের জন্য কি প্রস্তুত?
একজন অত্যন্ত আধুনিক নারীও মাতৃত্বের এই অনুভূতিটি অনভব করতে পারেন তবে কোনও কারণে যদি তাঁর নিজের উপর আস্থার অভাব হয় বা কোনও রকম সংকোচ থাকে তাহলে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে কোথাও কোনও অসুবিধা রয়েছে।
না। একজন নারীর মনে বিভিন্ন রকমের ভাবনা আসতেই পারে আর সেগুলো স্ত্রীরজ আরম্ভ হওয়ার আগের কোনও রকম শারীরিক অস্বস্তি থেকে নয় বা কোনও হরমোন ঠিকঠাক কাজ না করার ফলেও হচ্ছে এমনটা নয়।
যদিও বেশিরভাগ দম্পতি ঠিক করেন তাঁরা কবে সন্তান চান আবার অনেকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই খবরটা পেয়ে বেশ চমকে যান। তবে সত্যি কথা বলতে, মাতৃত্বের পুরো যাত্রাপথটা খুব সুন্দর। আর এই যাত্রাপথে আপনি যদি আচমকাই এসে পড়েন তাহলে চলতে থাকুন। তবে রাস্তা দিয়ে আপনি ঠিক কী ভাবে নিজের গাড়িটাকে সামলে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তার ওপর যাত্রাপথের অনেকটা সুখ ও আনন্দ নির্ভর করে।
তাই হতাশ না হয় যাত্রাটিকে সার্বিক ভাবে সুখকর ও সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করুন। কারণ এই চলার পথে হয়তো সবগুলো মুহূর্ত সুখকর নাও হতে পারে তবে পুরো অভিজ্ঞতাটা একদম অন্য রকম।
একদম শেষে এই পুরো ঘটনাটাকে এক কথা প্রকাশ করতে হলে আমি এটাকে 'আনন্দের ঘটনা' বলব। আনন্দের বা সুখের ঘটনা না বলে শুধু ঘটনা বলি বরং। কারণ আপনার এক এক সময় নিজেকে সম্পূর্ণ বহিরাগত বলে মনে হবে যে বিস্মিত হয় সমস্ত ঘটনাগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকছে এবং ভাবছে এটা কি আমার দ্বারা সম্ভব হল?
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন