মোবাইল ফোনে আসক্তির জেরে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা এক বছরের দাম্পত্য জীবনেই
দিল্লিতে একটি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেছেন স্বামী, কারণ স্ত্রীর স্মার্টফোন-প্রীতি
- Total Shares
সম্প্রতি খবরের কাগজে নয়াদিল্লির একটা খবর পড়লাম যে স্ত্রী দিনরাত মোবাইলে ফোন চ্যাট করেন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন সাইট নিয়ে পড়ে থাকেন। স্ত্রীর দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কাটে মোবাইল ফোন নিয়ে, তাই মাত্র এক বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছেন।
খবরটা পড়ে আমাদের সামাজিক পরিবর্তনের কথা ভেবে বেশ খারাপই লাগল। আগে বিয়ে ভাঙার কারণগুলো অন্যরকম ছিল আর এখন একটা কারণ যোগ হল, মোবাইল ফোনের প্রতি স্ত্রীর আসক্তি।
ঘটনাটি সত্যি খুব দুর্ভাগ্যজনক। খবরটিতে যে নয়াদিল্লির দম্পতির কথা বলা হয়েছে সেই স্ত্রী হয়তো বুঝতেই পারছেন না যে সে শুধু নিজের সংসারেরই ক্ষতি করছেন এমনটা নয়, তিনি নিজের ক্ষতিও করছেন।
যে কোনও মাদকদ্রব্যের নেশার চেয়ে এই মোবাইলের নেশা কোনও অংশে কম নয়। যে কোনও জিনিসের প্রতি যেমন আসক্তি তৈরি হয় ঠিক তেমন ভাবেই মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করলে তার প্রতিও একটা আসক্তি চলে আসে।
আরও একটা দিক হল স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনেক নতুন মানুষের সঙ্গে আমরা পরিচিত হই কিংবা বহু পুরোনো মানুষ, যাঁদের সঙ্গে আমাদের অনেকদিন যোগাযোগ নেই, তাঁদের সঙ্গে আবার নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে এর যেমন একটা ভালো দিক রয়েছে তেমনই একটা খারাপ দিকও রয়েছে। এই পরিচয়ের ফলে অনেকে বহু ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন কিংবা পরকীয়া সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়ছেন। যদিও তাঁরা মনে করছেন এই ধরণের ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাঁরা এটা ভাবতেই চাইছেন না যে এই ধরণের সম্পর্কগুলোরও একটা সুদূরপ্রসারী পরিণাম আছে, যা অনেক ক্ষেত্রে খুব একটা সুখকর নাও হতে পারে। আসলে এগুলোকে তাঁরা সম্পর্ক বলে মনে না করলেও পরে তা খুব মারাত্মক রূপ ধারণ করছে বা করতে পারে।
মোবাইল ফোন নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের অনেক উপকারে লেগেছে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহারের একটা কুফলও রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ স্মার্ট ফোনটিকে সময় কাটানোর জন্য বা অকাজে ব্যবহার করছেন। যিনি অতিরিক্ত মাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তাঁকে অন্যরা বারণ করলেও তিনি শুনছেন না। এর ফলে জীবনে ও সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
পাশাপাশি আমরা দেখছি যে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নানা রকম দুর্ঘটনারও বেড়ে যাচ্ছে।
কয়েকদিন আগে একটা ভিডিয়ো হোয়াটস্যাপে ভাইরাল হয়েছিল যে একজন ব্যক্তি সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফোনটা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ভিডিওটি দেখে প্রথমটায় খুব মজা লাগে কিন্তু একটু তলিয়ে যদি ভাবা যায় তাহলে দেখা যাবে যে এখনকার দিনে মোবাইল ছাড়া একমুহূর্ত ভাবা যায় না। মোবাইল আমাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছে যেন। আবার মোবাইল ছাড়া উপায় নেই।
অনেকে আমাকে বলেন তাঁরা একাকিত্ব কাটানোর জন্য মোবাইল ব্যবহার করেন। কিন্তু আমি বলব এটা শুধুমাত্র একটা অজুহাত। কারণ অনেক সময় কোনও রেস্তোরায় গিয়ে চোখে পড়ে যে স্বামী-স্ত্রী খেতে এসেছেন কিন্তু সেখানেও তাঁরা নিজেদের মধ্যে গল্প না করে নিজেদের মোবাইলেই ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন।
ঠিক একই ভাবে শিশুরাও এই মোবাইলের দুনিয়ার রঙিন হাতছানির থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এর ফলে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না, বাড়ির পাঁচজনের থেকে এমন কি নিজের মা-বাবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার পাঠ এক রকম চুকিয়ে দিয়েছে তারা এবং অন্যদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথাও বলতে অক্ষম হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাচ্ছে অভিভাবক।
অনেক মা-বাবা তাঁদের সন্তানকে ভুলিয়ে রাখার জন্য মোবাইল দিয়ে বসিয়ে রাখছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তারপর বাচ্চাটি আর মোবাইল ছাড়া থাকতেই পারছে না এবং ছাড়াতে গেলে তারা অসম্ভব জেদি হয়ে উঠছে। অভিভাবকদের একটা বিরাট ভূমিকা এখানে রয়েছে।
অভিভাবকদের তাই সচেতন হতে হবে, বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে আর একটা বড় ব্যাপার হল অনেক সময় বাচ্চাটি কান্নাকাটি করতে পারে বলে তার হাতে মোবাইল তুলে দেওয়া হচ্ছে এটা কোনও কাজের কথা নয়।
বড়দের ক্ষেত্রে আমি বলব তাঁদের নিজেদের সচেতন হতে হবে আর যদি সেটা সম্ভব না হয় তখন তাঁকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর আমরা যদি সময় থাকেতে সচেতন হতে না পারি তাহলে জীবনের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলোর সঙ্গে অচিরেই আমাদের বিচ্ছেদ ঘটবে।