একদিকে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ ভারত, অন্যদিকে মহিলাদের নিরাপত্তায় পড়ুয়াদের অ্যাপ
প্রশাসনিক বা পুলিশের নম্বর থাকলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই বিপদের খবর পাবেন
- Total Shares
বর্তমানে সংবাদপত্র বা টেলিভিশন খুললেই ধর্ষন ও নারী নির্যাতনের খবর একটা দৈনিক ব্যাপার হয়ে গেছে। এই ধরণের পাশবিক ঘটনা আমাদের সবাইকে খুব কষ্ট দেয়। গত মঙ্গলবার (২৬-০৬-২০১৮) দা থমসন রোয়েটর্স ফাউন্ডেশনের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে ৫৫০ জন বিশেষজ্ঞের মতামত যে ধর্ষন ও নারী নির্যাতনের নিরিখে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ। ২০১১ সালের সংস্থাটি যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে ভারতের স্থান ছিল চার নম্বরে।
এই সব ঘটনা আমাদের বিচলিত করেছিল তাই আমরা কারিগরী শিক্ষার্থী হিসাবে এমন একটা প্রযুক্তি তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যাতে নারী নিরাপত্তা কিছুটা হলেও সুরক্ষিত হতে পারে।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি এন্ড্রোয়েড অ্যাপ প্রস্তুতির দিকে আমরা গুরুত্ব দিই। শান্তিনিকেতন ইনস্টিটিউট অব্ পলিটেকনিকের কম্পিউটার ল্যাবে বসে দীর্ঘ গবেষণায় আমরা তৈরি করি একটি অ্যাপ যার নাম 'সেফ ইন্ডিয়া ওম্যান সেফটি মোবাইল অ্যাপ' (Safe India Woman Safety Mobile App)। এই বছরের টেকফাস্ট-এ অ্যাপটিকে আমরা প্রদর্শনও করি।
সমস্যায় পড়লে কীভাবে সাহায্য করবে এই অ্যাপটি?
ধরা যাক, রাত-বিরেতে রাস্তায় কোথাও কোনও সমস্যায় বা কোনও অসহায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন বুঝতে পারছেন না কী করবেন! চিন্তা করবেন না, মাথা ঠান্ডা রাখুন। সঙ্গে যে স্মার্ট ফোনটি রয়েছে তার পাওয়ার বাটনটি (power button) পরপর তিনবার চাপুন। আপনার অবস্থান (location) সহ আপনি যে বিপদে পড়েছেন সেই বিপদ সংঙ্কেত আপনার নির্বাচিত তিনটি নম্বরে পৌঁছে যাবে।
তবে অ্যাপটিকে ব্যবহার করতে হলে সর্বপ্রথম আপনার ফোনের গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে অ্যাপটিকে নিজের ফোনে নামাতে হবে বা ডাউনলোড করতে হবে। এবার আপনার পছন্দমত তিনটি ফোন নাম্বার ওখানে দিতে হবে বা সেভ করতে হবে। এই তিনটি ফোন নাম্বারের মধ্যে একটি আপনার পরিবারের, একটি আপনার বন্ধুর এবং একটি পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর হলে সবচেয়ে ভাল হয়। বিপদে পড়লে যদি উপায় থাকে তাহলে ফোনের পাওয়ার বাটনটিতে তিন বার চাপ দিন আর তাও যদি না পারেন তাহলে ফোনেটিকে ঝাঁকান। ব্যস, তাহলেই আপনার সেভ করা ওই তিনটি নম্বরে বিপদ সংকেত পৌঁছে যাবে মুহূর্তেই।
সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে অ্যাপটি সর্বাঙ্গীণভাবে সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের উদ্দেশ্যও সফল হবে। যে তিনটি আপদকালীন ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে তার মধ্যে যদি দু'টি প্রশাসনিক নম্বর হয়, তাহলে আরও ভালো। বিপদে পড়া ব্যক্তি সরাসরি প্রশাসনিক সাহায্য পাবেন। কারণ এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক পরে পুলিশের কাছে খবর যায় কিংবা আবার অনেক সময় খবর পৌঁছয়েও না তাই এখানে প্রশাসনিক বা পুলিশের নম্বর থাকলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই বিপদের খবর পাবেন ও সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন।
অ্যাপটি উদ্বোধন করেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত কারিগরী মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এই অ্যাপটি যাতে সরকারী স্তরে ব্যবহার করা যায় তিনি সে ব্যাপারে সুপারিশ করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। এছাড়াও কলেজের তরফ থেকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে আবেদন জানানো হয়েছে যাতে তারাও এই অ্যাপটির প্রচারে এগিয়ে আসেন৷
আমি ছাড়াও শান্তিনিকেতন ইনস্টিটিউট অব্ পলিটেকনিকে"র কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের আরও তিনজন পড়ুয়া- বিশ্বজিৎ নন্দী, সৌম্যদীপ্তি চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা বক্সি মিলে এই অ্যাপটি বানিয়েছি।
এছাড়াও আমাদের বিভাগের সকল অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা আমাদের সমস্তরকম সাহায্য করেছেন।
এই মুহূর্তে অ্যাপটি ডেমোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ফোনে ইন্টারনেটের সুবিধা না থাকলেও যাতে সেফ ইন্ডিয়া অ্যাপটি ব্যবহার করা যেতে পারে সেই বিষয়েও আমরা কাজ করছি।
তবে শুধু এই অ্যাপটিই নয় এই ধরণের অন্যান্য অ্যাপগুলো যদি ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে মহিলারা অনেক বেশি সুরক্ষিত হবেন বলে আমার বিশ্বাস৷