নিগ্রহে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইউনিসেক্স পার্লার খুললেন নৈহাটির চিকিৎসক
আমি একজন চিকিৎসক, সেটাই আমার প্রথম পরিচয়
- Total Shares
বিভিন্ন সময় চিকিৎসক নিগ্রহের খবর আমাদের সামনে এসেছে। চিকিৎসক নিগ্রহের জেরে ডাক্তারদের কর্মবিরতি আবার কখনও লাগাতার কর্মবিরতিও হয়েছে যার ফলে ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা। কখনও সঠিক পরিষেবা দেওয়া হয়নি বলে আবার কখনও পরিকাঠামোর অভাব আবার কখনও বেড নেই বলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের রোষের মুখে পড়তে হয়। অতিসাম্প্রতিক ঘটনা হল এক চিকিৎসককে চড় মেরেছেন থানার ওসি।
চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা সরবও হয়েছেন। এনআরএস, এসএসকেএম, বাঙুর হাসপাতাল সহ বহু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চলেছে প্রতীকী কর্মবিরতি। এই হাসপাতালগুলিতে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় বহু রোগীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অনেকবার চিকিৎসকরা থানার সামনেও অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন এগিয়ে এসে একজোট হয়ে লাগাতার প্রতিবাদ করেছে।
এনআরএস, এসএসকেএম, বাঙুর হাসপাতাল সহ বহু সরকারি ও বেসরকারি চলেছে প্রতীকী কর্মবিরতি
এই সব ঘটনা আমাদের কোনওটাই অজানা নয়। তবে চিকিৎসক নিগ্রহের জেরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সেলুন চালু করার ঘটনাটা বোধহয় আমাদের অনেকেরই অজানা। নৈহাটির একজন চিকিৎসক খুলে বসলেন একটি সেলুন। তিনি অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ নীলাদ্রি বিশ্বাস।
ঘটনার সূত্রপাত চিকিৎসক নিগ্রহ দিয়ে, তারপর তাঁরই এক সহকর্মীর গায়ে যখন বিষ্ঠা মাখানো হল তখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেল তাঁর। সেদিন তিনি বুঝেছিলেন মুখে বললেও আসলে অনেকেই চিকিৎসককে আর এখন ঈশ্বরের আসনে বসায় না। তাই সেদিন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিজেকে খুব অসহায় বলে মনে করেছিলেন।
ডাক্তারি পরিষেবায় থেকে এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি ও তাঁর বহু সহকর্মী রাতের পর রাত জেগে পরিষেবা দিয়েছেন হাসি মুখে। সেই চিকিৎসক সমাজের উপরেই মানুষ যদি নির্মম ভাবে শারীরিক নিগ্রহ চালায় তাহলে তাঁরা কোথায় যাবেন?
অনেকবার চিকিৎসকেরা পুলিশ থানার সামনেও অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়েছে
তাই চিকিৎসক নীলাদ্রি বিশ্বাস মনে করেন যে, "অবস্থাপন্ন চিকিৎসকরা সুযোগ পেয়ে অন্য বেসরকারি হাসপাতালে হয়তো চলে যেতে পারবেন, কিন্তু মধ্যবিত্ত চিকিৎসকরা ইচ্ছে করলেই বেসরকারি হাসপাতালে চল যেতে পারে না বা তেমন একটা সুযোগও তাঁরা পান না। তাই ইচ্ছে না থাকলেও ওই পরিস্থিতিতেই তাঁদের মানিয়ে নিয়ে থাকতে হয়। আমি মনে প্রাণে একটা কথা বিশ্বাস করি যে, কখনও কোনও চিকিৎসক তাঁর কোনও রোগীকে অবহেলা করেন না। তিনি তাঁর স্বাধ্যের বাইরে গিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচাবার এবং তাকে ভালো করে তোলার চেষ্টা করেন। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে কোনও চিকিৎসক নিজেদের সন্তানের জন্মদিন বা নিজের বাড়ির কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান ভুলে গিয়ে রোগীর সেবায় নিমগ্ন হয়ে রয়েছেন। সেই চিকিৎসকের সঙ্গে যদি সমাজের মানুষ এরম জঘন্য ব্যববহার করেন তখন তা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।চিকিৎসক রাতের ঘুম দিনের খাওয়ার সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেন। তাই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আমি একটা বিকল্প জীবিকার কথা চিন্তা করলাম।"
সালুনটি উভয় মহিলা ও পুরুষের জন্য। চিকিৎসক, নার্স ও যাঁরা চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের জন্য রয়েছে ৩০ শতাংশ ছাড়ও।
বহু লড়াইয়ের পর তিনি অবশেষে তাঁর স্বপ্নকে রূপ দিয়েছেন। বন্ধুবান্ধব এবং একজন আত্মীয়ের থেকে ধারদেনা করে তিনি তাঁর পার্লারটি শুরু করেছেন। আরজি কর হাসপাতাল থেকে ইস্তফা দিলেও তিনি নিজের প্রাইভেট প্রাকটিস ছাড়েননি। তিনি বলেন, "আমি একজন চিকিৎসক, সেটাই আমার প্রথম পরিচয়।"