৩৭৭ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সমলিঙ্গ বিবাহে ও দত্তক নেওয়ায় সুবিধা হবে

এই রায়ে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হল, এর ফলও সুদূরপ্রসারী

 |  3-minute read |   08-09-2018
  • Total Shares

আমি আইন নিয়ে স্নাতক স্তরে ডিগ্রির জন্য ভর্তি হই করি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাজরা ল কলেজে। প্রথম বিভাগে পাশ করে আলিপুর জাজেস কোর্টের সঙ্গে যুক্ত হই। তখন আমাকে মারাত্মক ভাবে বিদ্রুপ করা হত। আমি ভয়ঙ্কর ভাবে ঠাট্টা-তামাশার শিকার হই।

আমার চলাফেরা, হাবভাব, বাচনভঙ্গী সবকিছুর জন্য আমাকে উপহাস করা হতে থাকে। বাইরের গড়ন পুরুষের মতো হলেও ভিতরের সত্ত্বাটি নারীর। তা নিয়ে কাছাকাছি বয়সী সহকর্মী আইনজীবী তো বটেই, বরিষ্ঠ আইনজীবীরাও ঠাট্টা-তামাশা করতেন।

body1_090818074204.jpgসমলিঙ্গ বিবাহ ও দত্তক নেওয়ায় সুবিধা | ছবি: সুবীর হালদার

লড়াই তখনও করতে হয়েছে। একসময় আমি আদালতে যাওয়াই বন্ধ করে দিই। দীর্ঘদিন আদালতে যাওয়া বন্ধ রাখার পরে গতবছর আমার এক বান্ধবীর একটি মামলার সূত্রে আবার আদালতে যাওয়া শুরু করি ওই বান্ধবীরই অনুপ্রেরণায়। ২০১৮ সালে সেই মামলায় জয়ী হই। পশ্চিমবঙ্গের আমিই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসাবে কোনও মামলায় জয়ী হই।

সেই মামলায় যিনি বিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, তিনি প্রথমেই আপত্তির কথা জানান যে বিপক্ষে কোনও ট্রান্সজেন্ডার থাকলে তিনি সেই মামলা লড়বেনই না। প্রশ্ন তোলেন ট্রান্সজেন্ডাররা কী ভাবে মামলা লড়তে পারে, এ নিয়ে কোনও আইনই নেই।

ট্রান্সজেন্ডারদের আইনি স্বীকৃতির ক্ষেত্রে এখনও কোনও উপায় নেই। তা নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে আদালত থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আমি মামলাটি লড়েছিলাম। আমার যিনি সিনিয়র ছিলেন, তিনি এ ব্যাপারে আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। মামলাটিতে শেষ পর্যন্ত আমি জয়ী হই।

body2_090818074416.jpgনৃত্য ওঁনার শখ

৩৭৭ ধারা শুধু সমকামিতা নিয়ে নয়, এর অনেকগুলি ধারা-উপধারা রয়েছে, সেখানে বলা আছে যে সব যৌনমিলন প্রকৃতিবিরুদ্ধ, সে সবকিছুই নিষিদ্ধ। তারই একটি অংশ হল সমকামিতা। এই সবকিছু নিয়েই আমাদের লড়াই, দীর্ঘ দিনের লড়াই।

আমি জন্মেছি পুরুষ হিসাবে, কিন্তু মানসিক গঠন মেয়েদের মতো। আমি যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি, স্কুলে যাই, কলেজে যেতে শুরু করি তখন বারে বারে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি আমার ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে শুনে এসেছি। লোকে আমাকে গে বা সমকামী মনে করত। তাই একটা কথা বলতে পারি, লিঙ্গ পরিবর্তন ঘটানোর আগে পর্যন্ত আমি হোমোসেক্সুয়াল হিসাবেই ছিলাম।

সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, আমার ধারণা তাতে প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসার জয় হয়েছে। ভারতের সংবিধান যে জীবনের অধিকারের কথা বলে, বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলে, যে সমানাধিকারের কথা বলে, সেই দিক থেকে বিচার করলে এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। অনেক দেরি হয়ে গেল।

আমার সময়ের আগে যদি এই অধিকার পাওয়া যেত তা হলে আমি এই রায়টিকে আরও বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম। এখনও যে উপভোগ করছি না তা নয়। পরবর্তী প্রজন্ম তো এই রায়ের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এটা ভেবেও আমি যথেষ্ট আনন্দ পাচ্ছি।

body4_090818074716.jpgবাইরের গড়ন পুরুষের মতো হলেও ভিতরের সত্ত্বাটি নারীর 

এশিয়ার মধ্যে কোনও দেশে এই প্রথম হোমোসেক্সুয়ালিটিকে বৈধতা দেওয়া হল। তাই এই রায়ে জাতি হিসাবে সমগ্র ভারতের জয় হয়েছে আমি মনে করি।

যখন কোনও একটি বড় ব্যাপার আইনের স্বীকৃতি পায় বা বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন ঘটে, তখন সেই নতুন আইনটি বা আইনের পরিবর্তিত ধারাটি অনেক বেশি বলিষ্ঠ হয়। তার ফলও সুদূরপ্রসারী হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলুপ্ত হওয়ায় আগামী দিনে সমলিঙ্গে বিবাহ করার ক্ষেত্রেও বাধা দূর হবে। সে ক্ষেত্রে সন্তান দত্তক হিসাবে নেওয়ার ক্ষেত্রেও আইনের পরিবর্তন হতে পারে।

এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ায় আনুষঙ্গিক যে বিষয়গুলি এখনও ঝুলে রয়েছে, যেগুলির রায় এখনও বাকি রয়েছে সেগুলিও মিটে যাবে বলে মনে করছি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MEGH SAYANTAN GHOSH MEGH SAYANTAN GHOSH

First Transgender Lawyer of West Bengal

Comment