আইন সমস্যায় ফেলেছে ক্রমেই লুপ্ত হতে চলা শবরদের, মেলে না সুবিধা

ব্রিটিশদের 'অপরাধী আদিবাসী' ঘোচেনি, এখন কেন ওঁরা নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন?

 |  2-minute read |   10-08-2018
  • Total Shares

ভারতবর্ষের আদিম জনজাতিদের মধ্যে শবর জনজাতি অন্যতম। রামায়ণে শবরদের কথা উল্লেখ আছে। সেখানে কথিত আছে যে শবরিমাতা রামচন্দ্রকে এঁঠো কুল খাইয়েছিলেন।

এত পুরোনো জাতি হয়েও এরা এখনও সমাজে অবহেলিত ও কার্যত একঘরে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অরণ্যে এক সময় এঁদের বসবাস ছিল। স্বভাবতই এঁরা শিকার করে খেতেন। এই শবর জাতির মানুষজন পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন মূলত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এঁদের লোধা বলা হয়।

body2_081018031039.jpgপ্রাপ্যটুকু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শবররা

ইংরেজ আমলে এই জনজাতিকে 'ক্রিমিনাল ট্রাইব' বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আজও সামাজিক ভাবে শবরদের সেই তকমা ঘোচেনি। তাই এঁরা এখনও সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারেননি।

শবররা যে অঞ্চলে বসবাস করেন সেখানে যদি কোনও ধরণের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে - যেমন চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি - পুলিশ এঁদের নাম জড়িয়ে দেয়। কারণ, এদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মামলা লড়বার ক্ষমতা নেই।

পশ্চিমবঙ্গে শবরদের এমন পরিবারও আছে যে পরিবারে দু'বেলা খাবার জোটে না। অভাব এঁদের নিত্য সঙ্গী। এর পর আবার লুপ্তপ্রায় জনজাতি হিসেবে একটি নিয়ম এদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। লুপ্তপ্রায় বলে এই জনজাতির কোনও মহিলা গর্ভপাত করাতে পারেন না। ফলে, এই পরিবারে সদস্যের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং অভাবের সংসারে সন্তাররা অপুষ্টিতে ভোগে। এই মুহূর্তে, শবরদের গড় আয়ু মাত্র ৪০ থেকে ৫০ বছর।

body3_081018031217.jpgদু'বেলা খাবার জোটে না অনেকেরই

সবরদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে যে অভাব ভুলতে তারা নেশার কবলে পড়ছে।

শবরদের  জন্যে নানা ধরণের সরকারি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু তার অধিকাংশই এঁদের কাছে পৌঁছায় না। যেমন ১০০ দিনের কাজ। সবরদের জন্য বরাদ্দ অর্থ দিয়ে স্থানীয় নেতারা অন্যদের কাজ করিয়ে তাদের মজুরি দিয়ে দেন। যেমন 'আমার বাড়ি' প্রকল্প। এই প্রকল্পে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে প্রতিটি পরিবারের পাওয়ার কথা। কিন্তু এই পরিমাণ অর্থ খরচ করে যে মানের বাসস্থান হওয়ার কথা তার চেয়ে অনেক নিম্নমানের বাসস্থান তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ পরিবার অবশ্য তাও পাচ্ছে না।

২০১১ সালে আমার চাকরির থেকে পয়সা সঞ্চয় করে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা দিয়ে আমি শবরদের জন্যে স্কুল বানিয়েছিলাম। শবর শিশুদের কোনও সরকরি স্কুলেও ভর্তি নেওয়া হয় না। আপাতত এই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী অবধি পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পর এই স্কুল থেকেই ব্যবস্থা করা হয় যাতে অন্য স্কুলে সেই বাচ্চারা পড়তে পারেন।

এই মুহূর্তে সবরদের জন্যে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা। রুজি রোজগারের ব্যবস্থা না হওয়ার কোনও কারণ আমি অবশ্য দেখছি না। 

রমণীতা শবর বলে একজন ছাত্রী এ বছর সেকেন্ড ইয়ারে উঠল। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সে অঙ্কে একশোর মধ্যে ৯২ পেয়েছিল। আর একজন শবর কন্যা বসুমতী শবর গত বছর মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ পেয়েছিল। সরকার যদি চায় তা হলে এদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা না হওয়ার কোনও কারণ আমি দেখছি না।

body1_081018031123.jpgসামান্য সুযোগ পেলেই ওরা নিজেকে প্রমাণ করছে

সবররা যে অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে একেবারেই যুক্ত নন, এটা বলা মানে মিথ্যে কথা বলা হবে। তবে জনজাতির কিশোর ও ক্ষুদেদের স্কুলের চার দেওয়ালের মধ্যে বেঁধে দেওয়ায় এর প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। বিশেষ করে গত বছর পাঁচেকের মধ্যে।

পরিশেষে একটা কথাই বলব, যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এতটা পরিবর্তন করা যায় তা হলে সরকারি উদ্যোগে এই শবরদের পাকাপাকি ভাবে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment